• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ভূতুড়ে ফাইনালে বেল-চমকে হ্যাটট্রিক শিরোপা রিয়ালের

    ভূতুড়ে ফাইনালে বেল-চমকে হ্যাটট্রিক শিরোপা রিয়ালের    

    অভিশাপ বা ভূতুড়ে ছাড়া কী-ই বা বলবেন এই ফাইনালকে? যেখানে মো সালাহর মতো ট্রাম্পকার্ড ৩০ মিনিট গড়াতে না গড়াতেই চোখের জলে মাঠ ছাড়েন, যেখানে দানি কারভাহালও চোখের জল ফেলতে ফেলতে উঠে যান মাঠ থেকে, সেটাকে কী-ই বা বলা উচিত? লরিস ক্যারিয়াসের জন্যই বোধ হয় অভিশাপের চেয়েও বেশি, বলা যায় দুঃস্বপ্নের। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে একজন গোলরক্ষক এমন স্কুলবালকের মতো দুই ভুল করবেন, সেটাই বা কে ভেবেছিল? নাটকীয় এক ফাইনালে তাই বদলি নেমে গ্যারেথ বেলই নায়ক। লিভারপুলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। নিজের ফাইনালে না হারার রেকর্ডটাও ধরে রাখলেন জিনেদিন জিদান।

    অথচ ম্যাচ যেভাবে শুরু হয়েছিল, তাতে সবকিছু ছিল লিভারপুলের পক্ষেই। শুরু থেকেই লিভারপুল চেপে ধরে রিয়ালকে, ১০ মিনিটের মধ্যে বেশ কয়েকবার বিপদেই ফেলে দিয়েছিল রিয়ালকে। তবে কেইলর নাভাস বিপদে পড়তে দেননি। ১৫ মিনিটে রোনালদোর শট একটুর জন্য চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। ১৮ মিনিটে ভার্জিল ভ্যান ডাইক পেয়ে যান কর্নার থেকে সুবর্ণ সুযোগ, কিন্তু তাঁর হেড একটুর জন্য চলে যায় বার উঁচিয়ে।

    ২৩ মিনিটে রবার্টসনের পাস থেকে শট করেছিলেন ফিরমিনো, ফিরে আসে রামোসের গায়ে লেগে। ফিরতি বলে দারুণ শট করেছিলেন আলেকজান্ডার আরনল্ড, কিন্তু জায়গামতো থেকে ধরে ফেলেছেন নাভাস।

    এরপরেই লিভারপুলের সেই ভয়াবহ আঘাত। রামোসের সঙ্গে বলের দখল নিয়ে কাঁধে চোট পান সালাহ। শুরুতে খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ৩০ মিনিটে শেষ পর্যন্ত মাঠ ছেড়ে উঠে যেতে বাধ্য হন। চোখের জল বলে দিচ্ছিল, কতটা কষ্ট হচ্ছিল তাঁর মাঠ থেকে উঠে যেতে। তবে কান্নার শেষ সেখানেই নয়। ৩৪ মিনিটে কারভাহাল চোট পেয়েই মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকেন। তখনই তাঁর কান্নাভেজা চোখ বলে দিচ্ছিল, ফাইনাল তো বটেই, বিশ্বকাপও হয়তো শেষ হয়ে গেছে তাঁর জন্য।

    ৪৮ মিনিটে দারুণ একটা সুযোগ নষ্ট করলেন ইস্কো, ফাঁকায় পেয়েও তাঁর শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। এরপরেই শুরু ক্যারিয়াসের দুঃস্বপ্নের। ৫১ মিনিটে বলটা হাতে ধরেছিলেন ক্যারিয়াস, কী মনে করে যেন বেনজেমার দিকেই ঠেলতে গেলেন বল। শুধু পা বাড়ানোই যথেষ্ট ছিল বেনজেমার জন্য, চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে সম্ভবত এত সহজ সুযোগ আর আশা করতেন না। কারিয়াসের অমার্জনীয় ভুলে বল জড়িয়ে গেল জালে। ২০০২ সালে জিদানের পর প্রথম ফেঞ্চ ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করলেন বেনজেমা।

    সমতা ফেরানোর সুযোগ এর পরেই পেয়েছিল লিভারপুল, ৫৪ মিনিটে একটুর জন্য মাথা ছোঁয়াতে পারলেন না ফিরমিনো। ৫৫ মিনিটে ম্যাচে ফেরে লিভারপুল। কর্নার থেকে লভরেনের দারুণ হেড, সুযোগসন্ধানী সাদিও মানে পা ছুঁয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা মানের ১০ গোল হয়ে গেল চ্যাম্পিয়নস লিগে, ছুঁয়ে ফেললেন মো সালাহকে।

    এরপরের সময়টা শুধু গ্যারেথ বেলের। ৬১ মাঠে ইস্কোর বদলে মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যে গ্যারেথ বেল যা করলেন, সেটা বোধ হয় স্বপ্নেই ভাবা যায়। মার্সেলোর বলটা দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে জড়িয়ে দিলেন জালে, মাঠে নামার পর পঞ্চম স্পর্শেই।

    ৭০ মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল লিভারপুল, মানের শট পোস্টে লেগে চলে যায় বাইরে। ৭৪ মিনিটে রবার্টসনের দুর্দান্ত ট্যাকেল, একটুর জন্য গোল করতে পারলেন না রোনালদো। রিয়ালও পারেনি ব্যবধান বাড়াতে। ৮২ মিনিটে দুর্দান্ত থ্রু দিয়েছিলেন বেল, বেনজেমার শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছেন ক্যারিয়াস।

    কিন্তু কে জানত, ক্যারিয়াস এরপর আবারও এত বড় ভুল করে বসবেন? ৮৪ মিনিটে বেলের দূরপাল্লার শট আরও ১০০ বারের মধ্যে হয়তো ৯৯ বারই ঠেকিয়ে দিতেন ক্যারিয়াস, কিন্তু আজ সেটা ঠেকাতে গিয়ে বল জড়িয়ে দিলেন জালে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ইতিহাসেই একজন গোলরক্ষক নিশ্চিতভাবেই এত বড় দুইটি ভুল করেননি। আর তাতেই নিশ্চিত হয়ে গেছে, শিরোপা উঠছে রিয়ালের কাছে। অমরত্বের আরও কাছাকাছি চলে গেলেন জিদান।