কোপাই তাহলে অভিশাপ ?
লেখার শুরুতেই ছোট্ট একটা গল্প।
১৯৬২ সালে বেনফিকাকে চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতানোর পরে বেনফিকার হাঙ্গেরিয়ান কোচ বেলা গুটম্যান ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে বেতন বাড়ানোর আবেদন করলে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করে দেয়। ক্ষুব্ধ গুটম্যান ক্লাব ছাড়ার সময় বেনফিকাকে ‘অভিশাপ’ দিয়ে যান এই বলে, “বেনফিকা আগামী একশ বছরেও ইউরোপের কোন প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিততে পারবে না।”
বেনফিকা এর পরে সত্যিই আর কোন শিরোপা জেতেনি। এর মাঝে গুটম্যান সাহেব মারা গেছেন, ইউসেবিও নিজে গিয়ে তাঁর সমাধিতে মাফও চেয়ে এসেছেন। কাজ হয়নি। ৫৩ বছর হতে চললো, এখনো অভিশাপ কাটেনি।
বেলা গুটম্যানের নাম লিওনেল মেসি শুনেছেন কিনা জানা যায়নি। তবে তিনি খোঁজখবর শুরু করতে পারেন। আর্জেন্টিনাকে যদি কেউ অভিশাপ দিয়ে থাকে, তা আর না কাটালে যে চলছে না!
ক্লাব ফুটবলে সবকিছুই জিতেছেন। বার্সেলোনার হয়ে ২৪ টা ট্রফি, হেক্সা, ডাবল ট্রেবল, ৪ টা ব্যালন ডি’অর। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিলেই মেসি আর ‘ভিনগ্রহের প্রাণী’ থাকেন না, হয়ে যান রক্ত মাংসের সাধারণ মানুষ। অলিম্পিকের স্বর্ণ বাদ দিলে জাতীয় দলের হয়ে প্রাপ্তির খাতাটা নেহাতই শূন্য তাঁর। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তিনিই তাঁর দলের একমাত্র তারকা। পুরো দলের ভার নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যেমনটা করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর্জেন্টিনা দলে তো তারকার অভাব নেই। এটা ঠিক যে, বার্সেলোনার জাভি বা ইনিয়েস্তার মানের কেউ নেই। কিন্তু দলে যখন সিরি আ এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের টপ স্কোরার, ডি মারিয়া এবং পাস্তরের মতো খেলোয়াড়েরা খেলেন তখন পরপর ২ বছরে ২ শিরোপা হাতছাড়া করার কোন অজুহাতই দেখানো যায় না আসলে।
মেসির মতোই আরেকজন ছিলেন। তাঁর নাম পাওলো মালদিনি। যিনি কিনা ক্লাবের হয়ে ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে জিতেছেন ২৬ টি শিরোপা। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে কিছুই জেতা হয়নি তাঁর। সবচেয়ে কাছে গিয়েছিলেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপে। সেবার স্বপ্নভঙ্গ হয় ব্রাজিলের কাছে। ২০০০ সালের ইউরোর ফাইনালেও উঠেছিলেন। সেবারের ঘাতকের নাম জিদানের ফ্রান্স। এর আগে পরে আর কখনো কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠেনি ইতালি। জাতীয় দল, পাওলো মালদিনির কাছে হয়ে থাকে এক হতাশার নাম।
মেসির এখন যা বয়স তাতে আগামী ৫ বছর হয়তো জাতীয় দলে অনায়াসেই খেলতে পারবেন তিনি। এই ৫ বছরে আর্জেন্টিনার মেজর টুর্নামেন্ট আছে মোট ৩টি। আগামী বছর আমেরিকাতে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকা, ২০১৮’র রাশিয়া বিশ্বকাপ এবং ২০১৯ এর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা। ২০২২ বিশ্বকাপেও যে খেলবেন না তা বলা যায় না। কিন্তু তখন মেসির বয়স হবে ৩৫। শরীর কি মানতে চাইবে?
এমনিতে বিশ্বকাপের সাথে কোপা আমেরিকার কি যেন একটা শত্রুতা আছে। রোমারিও-বেবেতো এবং রোনালদো-রিভালদো-রোনালদিনহো এই কজনকে যদি ব্যতিক্রম ধরা হয় তাহলে বিশ্বকাপজয়ী আর কোন তারকা জেতেননি কোপা আমেরিকা। অথবা কোপা আমেরিকাজয়ী কোন তারকা জেতেননি বিশ্বকাপ। যেমন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা জিতেছেন কোপা কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে ফিরেছেন খালি হাতে। আবার পেলে, ম্যারাডোনা, গ্যারিঞ্চা, কেম্পেস প্রমুখেরা বিশ্বকাপ জিতলেও কোপা তাঁদের জন্য থেকে গেছে অধরা। বৈশ্বিক কোন শিরোপা মেসি জিততে পারবেন কিনা তা সময় বলবে তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে কিছু একটা জিততেই হবে তাঁকে। হয় কোপা নয়তো বিশ্বকাপ। অথবা দুটোই যদি জিততে পারেন তো তাহলে কথাই নেই। কিন্তু জলদি। সময় কিন্তু ফুরিয়ে আসছে।
নইলে “আর্জেন্টিনার মেসি” এক অমীমাংসিত রহস্যের নাম হয়েই থাকবে। হয়তো বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের চেয়েও রহস্যময়।