অক্টোপাস 'পলের' পর এবার বিড়াল 'একিলিস'
১৫ জুলাই সোনালি ট্রফিটা কার হাতে উঠবে? ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন? নাকি অন্য কেউ চমক দেখাবে রাশিয়াতে? চায়ের কাপে উঠছে ঝড়, যুক্তি তর্কের দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই কোনো দলের সমর্থকরাই। বিশ্বজুড়ে ফুটবল বোদ্ধাদেরও কাটছে ব্যস্ত সময়। তবে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই ব্যস্ততা যে শুধুই মানুষের, সেটা কিন্তু নয়। রাশিয়ায় শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে ভবিষ্যৎবাণী করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি বিড়ালও!
নাম তার ‘একিলিস’। গ্রিক পুরাণের বিখ্যাত চরিত্রের নামেই ডাকা হয় বিড়ালটিকে। নীল চোখের ধবধবে সাদা রঙের বিড়ালটির বাস রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের হার্মিটেজ জাদুঘরে। সেখানে কিন্তু সে এমনি এমনি থাকে না, রীতিমত ৯-৫ টা ‘চাকরি’ করে এ একিলিস! ‘বেতন’ হিসেবে পায় তিন বেলা সুস্বাদু খাবার। এছাড়া অতিথিদের বিশেষ ‘ট্রিট’ তো আছেই। প্রতি মাসেই নতুন নতুন জামা নিয়ে হাজির হন আশেপাশের এলাকার মানুষরাও!
১৭৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটি নিজেদের চিত্রাঙ্কন পাহারা দেওয়ার জন্য এরকম বিড়াল নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। একিলিসের মতো ‘পাহারাদার’ বিড়াল আছে আরও ৫০টি। একিলিসের মতো তাদের সবার নামই পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রের নামে রাখা। কিন্তু এত বিড়াল থাকতে সেই কেনও ভবিষ্যৎবাণী করছে?
কারণটা জানলে একটু মন খারাপই হতে পারে। জন্ম থেকে বধির একিলিস। এজন্যই কিনা অন্য বিড়ালের চেয়ে তার অনুমান ও বিচক্ষণ ক্ষমতা একটু বেশি। কিন্তু বিশ্বকাপে এই অনুমানকে কীভাবে কাজে লাগাবে সে? একিলিসের সামনে রাখা হয় দুটি খাবারের পাত্র, পাত্রের সাথে লাগানো থাকে দুই দেশের পতাকা। কিছুক্ষণ দুই পাত্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সে, শুঁকে দেখে খাবার, এরপর যেকোনো এক পাত্রের খাবারই খায়। সে যে পাত্র থেকে খাবে, সেই দলই নাকি জিতবে!
একিলিসের এই কান্ড দেখতে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন জাদুঘরে। সবাই খাবার দিয়ে যার যার পছন্দের দলের ভবিষ্যৎও জানার চেষ্টা করছেন। তবে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে একিলিসের খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেই জানা জাদুঘরের প্রাণী চিকিৎসক অ্যানা কন্দ্রাতিভা, ‘সবাই তাকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়াচ্ছে, তার ওজনও বাড়ছে। আজকাল তাকে তো বিড়াল কম, ফুটবল বেশি লাগছে! এখন থেকে তাকে কঠোর ডায়েট মেনে চলতে হবে। সামনেই বিশ্বকাপ, তখন আবারও অনেক খাওয়াদাওয়া বেড়ে যাবে। তাকে প্রতি সপ্তাহে চেকআপ করানো হচ্ছে।’
শুধু ডায়েট নয়, বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রস্তুতির শেষ নেই একিলিসের। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ তার জন্য জোগাড় করেছে ফ্যান আইডি, তৈরি হয়েছে বিশেষ পাসপোর্টও! বিশ্বকাপ চলার সময় ১২ টি ভেন্যুর সবখানেই অবাধ বিচরণের অধিকার থাকবে তার। রাশিয়া ফুটবল ফেডারেশন তাকেই নির্বাচিত করেছে অফিশিয়াল ভবিষ্যৎবার্তা হিসেবে। গত বছর রাশিয়াতে হয়ে যাওয়া কনফেডারেশনস কাপের ভবিষ্যৎবাণীও সফলভাবে করেছিল সে। ৪ ম্যাচের ৩টিতেই তার ভবিষ্যৎবাণী মিলে গেছে! কনফেডারেশনস কাপের মতো বিশ্বকাপেও ঠিক ঠিক জয়ী দলের নাম বলে দেবে একিলিস, জাদুঘর কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস এমনটাই।
২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সঠিক ভবিষ্যৎবাণী করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল অক্টোপাস পল। ফাইনালে স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি বহু ম্যাচেই তার বেছে নেওয়া দলটিই জিতেছে। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার মাত্র ২ মাস পরেই মারা যায় সে। একিলিস ভক্তরা হয়ত প্রার্থনা করছেন, সঠিক ভবিষ্যৎবাণী করার পাশাপাশি আরও অনেকদিন বেঁচে থাকুক সে।
১৪ জুন লুঝনিকিতে শুরু হবে বিশ্বকাপের মহারণ। আপনিও যদি স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যান, আশেপাশে দর্শক হিসেবে কোনো বিড়াল দেখলে অবাক হবেন না মোটেও। রাশিয়াকে সমর্থন দিতে জার্সি পরে যে সেখানে থাকবে একিলিসও!