• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    বিশ্বকাপের ব্যবচ্ছেদ: গ্রুপ 'এ'

    বিশ্বকাপের ব্যবচ্ছেদ:  গ্রুপ 'এ'    




     

    মিশর
    মিশরের এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, সালাহ ঠিক সময়ে সেরে উঠবেন তো? পুরো বিশ্বকাপে আর নির্দিষ্ট কোনো দল একজনের ওপর সম্ভবত এতোটা নির্ভরশীল নয়। সালাহর সেরে ওঠার ওপর অনেকটুকুই নির্ভর করছে মিশরের ভাগ্য।

    কোচ হেক্টর কুপারের এই দলের মূল শক্তি রক্ষণ। কুপারের অধীনে যে ৩০টি ম্যাচ মিশর খেলেছে, তাঁর মধ্যে মাত্র একটিতে একটির বেশি গোল হজম করেছে। আর্সেনালের মোহাম্মদ এলনেনি, ওয়েস্ট ব্রমের ডিফেন্ডার আহমেদ হেগাজিদেরও আছে শীর্ষ লিগে খেলার অভিজ্ঞতা। আর গোলপোস্টের নিচে এসেম এল হাদারি তো আছেনই।

    তবে সবকিছুর ওপর মিশরের আশার প্রতীক সালাহই। গ্রুপ ভাগ্যও সহায়তা করেছে তাদের, সেই অর্থে কোনো পরাশক্তি নেই। প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে যাওয়ার আশা করতেই পারে তারা!  

    শক্তি

    • আক্রমণভাগে সালাহর দিকেই চোখ থাকবে সবার, তবে মিশরের কিন্তু একজন ত্রেজেগেও আছেন। ডেভিড ত্রেজেগের সাথে শারীরিক গড়নের মিল থাকার জন্য নামই হয়ে গেছে এই ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডের নামে। আক্রমণে সালাহর সঙ্গে হতে পারেন ভরসা।
    • মোহাম্মদ এলনেনি, তারেক হামেদ ও আবদুল্লাহ সাঈদের মধ্যমাঠের সৃষ্টিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, তবে তাদের শৃঙ্খলা প্রশ্নাতীত। কুপার নিজেও রক্ষণাত্মক ধাঁচের কোচ, এই ত্রয়ীও বল নিজেদের দখলে রাখার ব্যাপারে বেশ দক্ষ।

    দুর্বলতা

    • সালাহ শুরু থেকে খেলতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েই প্রশ্ন। এই মিশরে একমাত্র সালাহরই গতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘোল খাওয়ানোর ক্ষমতা আছে। এমনিতে কুপার লম্বা বলে খেলতেই পছন্দ করেন, কিন্তু সালাহর উপস্থিতি তাতে দেয় নতুন মাত্রা। সালাহর না থাকলে কুপার কীভাবে নিজের কৌশল সাজান, সেটাই প্রশ্ন।
    • আগে ঘর সামলাও নীতিতেই খেলতে পছন্দ করেন কুপার, খোলসে একটু বেশি ঢুকে থাকার জন্য সমালোচনাও কম হয়নি তাঁর। সৌদি আরবের মতো দলের সঙ্গে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।

    ভবিষ্যতবাণীঃ গ্রুপ রানার্স আপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড।

     

    উরুগুয়ে

    দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা একটা সময় বিশ্বকাপের মানচিত্র থেকে হারিয়েই যেতে বসেছিল। তবে গত কয়েকটি আসরেই উরুগুয়ে দলটা সমীহ জাগানো, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

    কোচ অস্কার তাবারেজ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্বে, এই দলটা চেনেন হাতের তালুর মতোই। তবে এই উরুগুয়ে দল নিয়ে আগাম কিছু বলাটা মুশকিল। রক্ষণ আর আক্রমণ যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারে, অনেক দূর যাওয়ার সামর্থ্য আছে তাদের। আবার অনভিজ্ঞ মধ্যমাঠের খেসারতও দিতে হতে পারে।

    বিশ্বকাপ স্বপ্নের সবচেয়ে বড় দুই সারথী আছেন এবারও। লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানি মানেই দারুণ এক যুগলবন্দি। ক্লাবের ফর্মটা দেশের হয়ে টেনে আনতে পেরেছেন দুজনই। দেশের হয়ে ৯৭ ম্যাচে সুয়ারেজের গোল ৫০, ১০০ ম্যাচে কাভানির গোল ৪২। রক্ষণ সামলাবেন অভিজ্ঞ গডিনের সঙ্গে তরুণ হিমেনেজ, অ্যাটলেটিকোতেও দুজন সতীর্থ। গোলপোস্টের নিচে অভিজ্ঞ মুসলেরা তো আছেনই।

    তবে মধ্যমাঠটাই তাদের বড় দুশ্চিন্তা। জুভেন্টাসের রদ্রিগো বেন্টাকুর, দেপোর্তিভোর ফেদেরিকো ভালভের্দে, ইন্টার মিলানের মাতিয়াস ভেসিনোরা নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন এর মধ্যেই। তবে অভিজ্ঞতার অভাবটা কতটা ঢাকতে পারেন, সেটাই এখন প্রশ্ন। পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সর্বশেষ দুই প্রীতি ম্যাচে একটিতে ড্র করেছে, আরেকটিতে হেরেছে উরুগুয়ে। তাবারেজের জন্য এটাও হবে দুশ্চিন্তার। 

    শক্তি

    • অনেকদিন পর তাবারেজ এমন একটা মধ্যমাঠ পেয়েছেন, যেখানে সৃষ্টিশীলতার অন্তত ঘাটতি হওয়া উচিত নয়। মাতিয়াস ভেসিনো ইন্টারে দারুণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন, ফেদেরিকো ভালভের্দে ১৯ বছর বয়স হলেও বেশ পরিণত, ডানে নাহিয়ান নান্দেজের আছে গতি। রদ্রিগো বেন্টাকুরও সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন জুভেন্টাসে।

    দুর্বলতা

    • বাছাইপর্বে প্রতি-আক্রমণই দর্শন ছিল তাবারেজের, পুরো বাছাইপর্বে ৪০ শতাংশ বল পজেশন ছিল উরুগুয়ের। কিন্তু বিশ্বকাপে যে তিন দল প্রতিপক্ষ, তাঁদের সঙ্গে আক্রমণত্মক না হলে উলটো বিপদে উড়ে যেতে পারে উরুগুয়ে। তাবারেজ নিজের কৌশল আদৌ বদলাবেন কি না সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
    • সুয়ারেজ-কাভানির যুগলবন্দি যেমন শক্তি, তেমনি এই দুজন থেকে একসাথে সেরা বের করে আনার কাজটাও এখন কিছুটা কঠিন তাবারেজের জন্য। দুজনেই এখন সেন্ট্রাল পজিশনে খেলেন, শেষ পর্যন্ত সুয়ারেজকে জায়গা দিতে কাভানিই নিচে নামতে পারেন।

     

    ভবিষ্যতবাণী: গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড, সেখান থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল

     

    সৌদি আরব

    সৌদি আরবের নামটা এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ২৪ বছর আগের এক মুহূর্ত। সাইদ আল ওয়াহরাইনের অবিশ্বাস্য এক দৌড়ের পর বেলজিয়াম রক্ষণ ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া সেই গোল হয়ে গিয়েছিল ১৯৯৪ বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপন। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সেবার সৌদি আরব পা রেখেছিল বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। তবে সেবারই শেষ, এরপর থেকে বিশ্বকাপ মানেই উষর মরুর দেশটির কাছে হতাশা-বিষাদের ভুলে যাওয়ার এক যুগলবন্দি।

    অস্ট্রেলিয়া, জাপানের সঙ্গে বাছাইপর্বে এক গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হয়েই নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপ, তাও আবার সর্বশেষ ম্যাচে জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়ে। স্থানীয় ক্লাব আল হিলাল ও আল আহলিতেই খেলেন বেশিরভাগ খেলোয়াড়, বোঝাপড়াটাও তাই তাদের মধ্যে ভালোই। তবে নতুন কোচ আন্তোনিও পিজ্জি কতটা কী করতে পারেন, সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র গত ডিসেম্বরে, তার আগে কয়েক ম্যাচের জন্য দায়িত্বে ছিলেন এদগার্দো বাউজা। তাদের বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়ার কারিগর বার্ট ফন মারউইক বিদায় নিয়েছেন আগেই।

    শক্তি

    • খেলোয়াড়েরা কমবেশি সবাই এক লিগে খেলেন, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াও ভালো হওয়ার কথা

    দুর্বলতা

    • আগের দুই বিশ্বকাপে মূল্য দিতে হয়েছে এটার জন্য। এবারও খেলোয়াড়দের শীর্ষ লিগের অভিজ্ঞতার অভাবই কাল হতে পারে তাদের জন্য। ঘরোয়া লিগের তিন জন খেলোয়াড়কে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য স্পেনে পাঠানো হয়েছিল, পুরো ৯০ মিনিট খেলার সুযোগ পাননি কেউই।
    • পিজ্জির সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে ছয় মাসের মধ্যে দলটা গুছিয়ে আনতে পারা। ফন মারউইক এই দলটা নিজের হাতে গড়েছিলেন, খেলোয়াড়দেরও ভালোই চিনতেন। এরপর বাউজাও দায়িত্বে ছিলেন মাত্র পাঁচ ম্যাচে। নকআউট পর্বে নিতে পারাটা হবে পিজ্জির জন্য বিশাল সাফল্য। 

    ভবিষ্যতবাণী: কোনো জয় ছাড়াই প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়। 

     

    রাশিয়া

    আট বছর আগেও রাশিয়া বিশ্বকাপের স্বাগতিক হলে অনেকদূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারত। ২০০৮ ইউরোতে সেমিফাইনালে গিয়েছিল তারা, জেনিত জিতেছিল ইউয়েফা কাপ। অনেক রাশিয়ান খেলতেন প্রিমিয়ার লিগে, কিন্তু এবার তাদের নিয়ে দেশেই আশাবাদীর সংখ্যা কম।

    রাশিয়ার এই দলকে তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই দুর্বলতম মনে করা হচ্ছে। ২০১৬ ইউরোর পর থেকে সেই ফর্ম আরও পড়তির দিকে। ওই ইউরোর পর রাশিয়া ১৯টি প্রীতি ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র ছয়টিতে (সেই জয়গুলো এসেছে ঘানা, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও ক্লাব দল ডায়নামো মস্কোর বিপক্ষে)। ২০১৭ অক্টোবরের পর থেকে কোনো জয় নেই। আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, স্পেন, ব্রাজিলের বিপক্ষে চার ম্যাচ খেলে গোল খেয়েছে ১০টি। এই মুহূর্তে রাশিয়ার ফিফা র‌্যাঙ্কিং ৬৬। আলবেনিয়া, হাইতি, বুরকিনা ফাসোর মতো দলও তাদের ওপরে।

    শক্তি

    • রাশিয়ার পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। তবে অ্যালান জাগোয়েভ, আলেকজান্ডার গলোভিন ও ফেদর স্মোলোভ নিজেদের দিনে প্রতিপক্ষ রক্ষণকে ভালোই ভোগাতে পারেন। চেনা পরিবেশে খেলা তাদের বাড়তি সুবিধা দিতে পারে, রাশিয়ান কোচের দ্রুত আক্রমণে যাওয়ার কৌশলও তাদের ধরনের সঙ্গে যায়।

    দুর্বলতা

    • এমনিতেই অভিজ্ঞ তিনজন অবসর নিয়েছেন, তার ওপর দুই ভরসা ভিক্টর ভাসিন ও গিওর্গি ঝিকিয়া লম্বা সময় চোটের জন্য বাইরে- রক্ষণ রাশিয়ার জন্য বড় দুশ্চিন্তাই। গোলপোস্টের নিচে ইগর আকিনফেভ অনেক দিন ধরেই আছেন, তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভুল করার বদভ্যাসটা আছে ভালোমতোই।

     

    ভবিষ্যতবাণী: গোল পার্থক্যে মিশরের পরে থেকে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ।