স্টেডিয়ামে বসে ১১ বিশ্বকাপ!
নিজের অদ্ভুত বেশভূষার জন্য তিনি নজর কাড়েন সবখানেই। প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে, ফুটবল মাঠে একজন ধর্মযাজক আবার কী করছেন! গির্জার ফাদারদের মতো আলখেল্লা পড়েই হাজির হন মাঠে, মাথায় থাকে বিশাল টুপি। কিন্তু অন্য দশজন দর্শকের চেয়ে পোল্যান্ডের আন্দ্রেজ বোবস্কি একটু আলাদা। ৭৮ বছর বয়সী বোবস্কি যে এরই মাঝে মাঠে বসে দেখেছেন ১০ টি বিশ্বকাপ! নিজের ১১তম বিশ্বকাপ উপভোগ করতে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপেও যাচ্ছেন পোল্যান্ডের এই পাড় ভক্ত।
১১তম বিশ্বকাপ! এক বিশ্বকাপ মাঠে বসে দেখতেই যত হ্যাপা পোহাতে হয় আজকাল, সেখানে টানা ১১ বার স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা কম কথা নয়। বয়স, অসুস্থতা, অর্থ সংকট; বোবস্কির সামনে বাধা এসেছে বহু, কিন্তু বিশ্বকাপে যাওয়া থেকে তাকে আটকাতে পারেনি কিছুই।
সেই ১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে শুরু। নিজের প্রথম স্ত্রীর দেওয়া উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন একটি টিকেট। বোবস্কির মাঠে বসে খেলার দেখার নেশাটা পেয়েছিল সেবার থেকেই। এরপর পেরিয়ে গেছে ৪০ বছর, ৯টি বিশ্বকাপ। প্রতিটিতেই তিনি খেলা দেখেছেন স্টেডিয়ামে বসে। এই পর্যন্ত মাঠে বসে দেখা হয়েছ ১৩৫ টি ম্যাচ!
যে ১০ বার বিশ্বকাপ দেখতে গেছেন বোবস্কি, তার ৫ বারই মূল পর্বে ছিল না নিজের দেশ পোল্যান্ড। কিন্তু তাতে কি? জমকালো পোশাকে পোল্যান্ডের পতাকা হাতেই নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মাঠে। যে পোশাকের জন্য তার এত পরিচিতি, সেই পোশাক বানাতে বেশ কসরত করতে হয় দর্জিকে। পোল্যান্ডের একটি থিয়েটার বিশেষভাবে তৈরি করে তার আলখেল্লা। পোল্যান্ডের পতাকার আদলে তৈরি আলখেল্লাতে প্রাধান্য পায় লাল-সাদা রঙই। মাথায় থাকে লম্বা টুপি, টুপির ওপরে লাগানো ফুটবল। যতবার বিশ্বকাপে গেছেন, ফুটবলের সংখ্যাও বেড়েছে।
এবারের বাছাইপর্ব থেকেই স্বপ্ন দেখছিলেন, রাশিয়াতে পৌঁছাবে দল। সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ায় দারুণ খুশি বোবস্কি, ‘এবার যে আমরা মূল পর্বে খেলব, সেটা শুরু থেকেই বিশ্বাস ছিল। সেনেগালের বিপক্ষে পরথম ম্যাচটাই দেখতে যাবো, পরের দুই ম্যাচেও স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখবো। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাও অসম্ভব কিছু নয়!’
পোল্যান্ডের বিশ্বকাপ খেলায় সুবিধা হয়েছে আরেকটি। নিজের দেশ থেকেও আসবে বহু সমর্থক। পোল্যান্ডের সমর্থকদের মাঝে আবার দারুণ জনপ্রিয় বোবস্কি, পুরো সময়টাই গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন নেচে গেয়ে। সবার প্রিয় বোবস্কি তাই পেয়েছেন ‘কিং অফ পোলিস ফ্যানের’ খেতাবও!
বয়স তো কম হলো না। আগামী বিশ্বকাপে কাতারে যেতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বোবস্কি ‘দ্যা বব’। জামার পেছনে বড় বড় করে তাই কাতারের নাম লিখে পাশে বসিয়েছেন প্রশ্নবোধক চিহ্ন। চার বছর পর কী হবে সেটা হয়ত জানেন না, কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ যে রাঙ্গিয়ে তুলবেন, সেই ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তাই দিচ্ছেন ফুটবল পাগল বোবস্কি।