• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    বিশ্বকাপের ব্যবচ্ছেদঃ গ্রুপ ডি

    বিশ্বকাপের ব্যবচ্ছেদঃ গ্রুপ ডি    




    আর্জেন্টিনা
    বাছাইপর্বের ৪ ম্যাচ বাকি থাকতে কোচ বদল, তারপর ধুঁকতে ধুঁকতে বিশ্বকাপে, তাও লিওনেল মেসির একার কাঁধে ভর করে। এরপরও তেমন বদলায়নি আর্জেন্টিনার খেলার ধরন। নিজের সেরা দল কোনটা সেটা এখনও জানেন না হোর্হে সাম্পাওলি। প্রীতি ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে বড় হার সঙ্গে নাইজেরিয়ার সঙ্গেও হেরে যাওয়া- আর্জেন্টিনার দলকে ফেলে দিয়েছে অনেকগুলো প্রশ্নের সামনে। সেসব প্রশ্নের উত্তরও অজানা। ক্লাবের হয়ে যতই আলো ছড়ান, জাতীয় দলে ঠিক ততোটাই অন্ধকার আর্জেন্টাইনদের পারফরম্যান্স। রক্ষণের পুরনো সমস্যাটা আছে। নিকোলাস অটামেন্ডি, মার্কোস রোহো, ফ্রেডেরিকো ফাজিওদের ভরসা করার মতো ডিফেন্ডার নন। মিডফিল্ডে সমস্যাটা আরও বড়, হাভিয়ের মাসচেরানো নিজের সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছেন। সেন্টার ডিফেন্সিভ পজিশনে লুকাস বিলিয়া খেলতে পারেন তাই, কিন্তু তিনিও অধারাবাহিক। সাম্পাওলি শেষ কয়েকটি ম্যাচে ৪-২-৩-১ ফর্মেশন অনুসরণ করেছেন, বিশ্বকাপেও হয়ত সেটাই করবেন। ৩ মিডফিল্ডারের একজন অ্যানহেল ডি মারিয়া। রাইট উইং দিয়ে শুরু করবেন লিওনেল মেসি, এরপর থাকবেন ফ্রি রোলে। রাইটব্যাককে মূলত  উইডথের যোগান দিতে হবে। সার্জিও আগুয়েরো পুরোপুরি ফিট নন, স্ট্রাইকার পজেশনে গঞ্জালো হিগুয়াইনের শুরু করা প্রায় নিশ্চিত। এতোসব কিছুর মধ্যে আবার ইনজুরি সমস্যাও আছে। গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো বাদ পড়েছিলেন আগেই, গতকাল ম্যানুয়েল লানজিনিরওঁ বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে। লানজিনিকে সাম্পাওলির কৌশলের বড় অস্ত্রই মনে করা হচ্ছিল। শেষ মুহুর্তে ওই সিদ্ধান্তও বদলাতে হচ্ছে কোচকে।

    শক্তি

    • আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা আর্জেন্টিনার জার্সিতে ভালো করতে না পারলেও, ভরসা রাখতে হবে তাদের ওপরই। হিগুয়াইন, আগুয়েরোরা জ্বলে না উঠলে একা মেসিতে ভর করে বিশ্বকাপে খুব বেশিদূর যেতে পারার কথা নয় আর্জেন্টিনার।
    • পাভন, মেজাদের ইউরোপিয়ান লিগের অভিজ্ঞতা নেই। ক্লাব ফুটবল খেলেন আর্জেন্টিনায়। তবে চমক দেখাতে পারেন এইবার, সময়মতো জ্বলে উঠলে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ভাগ্যও ভালো দিকে এগুতে পারে।
       

    দুর্বলতা

    • দলের তিন গোলরক্ষকদের আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। সর্বোচ্চ ৬ ম্যাচ খেলেছেন নাহুয়েল গুজমান। তার সুযোগ হয়েছে রোমেরোর ইনজুরির কারণে। শেষ পর্যন্ত হয়ত উইলি ক্যাবেয়ারোই খেলবেন। তবে গোলরক্ষকের বড় ভুলে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্নে আঁচড় লাগার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
    • মিডফিল্ডে নিজের সেরা সমন্বয়টা কি সেটা হয়ত এখনও জানেন না, সাম্পাওলি। ২-৩-৫, ২-৩-৩-২ ফর্মেশনে দলকে বাজিয়ে দেখেছেন, কিন্তু কোনটাইতে ভালো ফল আসেনি। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনেও স্পেনের কাছে ৬-১ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা।


    ভবিষ্যৎবাণীঃ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে, সেখান থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের কাছে হেরে বাদ

    ক্রোয়েশিয়া
    লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মাঞ্জুকিচ, ইভান পেরিসিচ- নামগুলো শুনলেই ভীতি চড়ে যাওয়ার কথা যে কোনো দলেরই। কিন্তু দল হয়ে একসঙ্গে খেলার ব্যাপারটা আসলে কেমন রঙ হারিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার। এবার অবশ্য এসব সমালোচনা ঝেড়ে ফেলার একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে  ক্রোয়াটরা। প্রীতি ম্যাচে তাদের কাউন্টার প্রেসিং বিপদে ফেলে দিচ্ছিল ব্রাজিলকে। পরে অবশ্য নেইমার নৈপুণ্যের কাছে হার মানতে হয়েছে। ওই গোলের পর ক্রোয়াটদের আক্রমণও ঝিমিয়ে পড়েছিল। ৯০ মিনিট একই তালে খেলতা না পারার একটা দুর্নামও আছে তাদের। সেটা কি ঘোচাতে পারবেন কি?

    শক্তি

    • মিডফিল্ডে মদ্রিচ খেলেন নাম্বার টেন রোলে। ইভান রাকিটিচ ক্লাবের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে খেলেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডে। ফিওরেন্টিনার মিলান বাদেল খেলেন ডিফেন্সিভ রোলে। ফুটবলের অসুন্দর কিন্তু কার্যকরী কাজটা কাজটা করেন তিনি, রক্ষণের প্রথম নিরাপত্তা দেন বাদেল। সবমিলিয়ে দারুণ এক মাঝমাঠ, বল পজেশন বজায় রেখেও খেলে তারা। টেকনিক্যালি প্রায় সব মিডফিল্ডারই দারুণ, বেঞ্চেও আছে অপশন।
    • আক্রমণে মাঞ্জুকিচের সঙ্গে কালিনিচ বা আনতে রেবিচের সমন্বয়ও বেশ ভালো। গোল পেতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না ক্রোয়াটদের।


    দুর্বলতা

    • দলটা দারুণ হলেও, খেলোয়াড় আর সমর্থকদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অধিনায়ক মদ্রিচ সমর্থন হারিয়েছেন নিজ দেশে। ফুটবলের দুর্নীতি নিয়ে অসন্তোষ আছে সমর্থকদের মাঝে। টিম স্পিরিটের ঘাটতি ভোগাতে পারে এবার।
    • রক্ষণের ভেড্রান করলুকা ধীর গতির, ড্যান লভ্রেনও অধারাবাহিক। গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ মাঝে মধ্যেই ভুল করে বসেন।


    ভবিষ্যতবাণীঃ  তৃতীয় হয়ে গ্রুপপর্ব থেকে বাদ

    আইসল্যান্ড

    বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে আইসল্যান্ড। গত ইউরোতে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলাটা অনুপ্রেরণা হিসেবেই রাশিয়া নিয়ে যাচ্ছে তারা। আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই কারও ভেতরই। বাছাইপর্বে ক্রোয়েশিয়াকে টপকে সরাসরি বিশ্বকাপে এসেছিল আইসল্যান্ড। গ্রুপপর্বেও একই কাজটাই করতে চাইবে তারা। নিরপেক্ষ সমর্থকদের এই গ্রুপটা বিনোদন যোগাবে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। গ্রুপ ডি নিয়ে ভবিষ্যত বাণী করাটাও তাই কঠিন। বিশেষ করে আইসল্যান্ড যে গ্রুপে আছে, সেখানে তো ঘটে পারে যে কোনো কিছুই!

    শক্তি

    • সেট পিস আর কাউন্টার অ্যাটাকে ডাইরেক্ট ফুটবল খেলে আইসল্যান্ড। সে ধরনের খেলোয়াড়ও আছে তাদের। বাছাইপর্বে ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলালেও কোচ হেইমির হ্যালগ্রিমসন বদলে ফেলতে পারেন কৌশল। ৪-২-৩-১ এ আরও শক্ত হবে দলের রক্ষণ। আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়ার পজেশন নির্ভর ফুটবলের বিপক্ষে কার্যকর হতে পারে নতুন ফর্মেশনটাই।

     

    • হারানোর নেই কিছু, এই মন্ত্রে ভালো বাদে খারাপ কিছু হাওয়ার সম্ভাবনা আইসল্যান্ডের নেই বললেই চলে! গিলফি সিগুর্ডসনের সেট পিস তো আছেই, অধিনায়ক অ্যারন গানারসনের লং থ্রো বিপদে ফেলতে পারে যে কোনো দলকেই। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে লং থ্রো থেকে গোল আদায় করার ভালো সম্ভাবাই আছে আইসল্যান্ডের।


    দুর্বলতা

    • লিওনেল মেসি, লুকা মদ্রিচদের মতো খেলোয়াড়দের বিপক্ষে নিয়মিত খেলার অভ্যাস নেই আইসল্যান্ড ডিফেন্ডারদের। বড় আসরে বড় খেলোয়াড়দের কাছে চাপে ভেঙে পড়লে অবাক হওয়ার মতো কিছুই থাকবে না।
    • কাউন্টার অ্যাটাকে খেলা দলের বিপক্ষে খেলার মন্ত্র অজানা আইসল্যান্ডারদের।

    ভবিষ্যতবাণীঃ এক ড্র, দুই হার নিয়ে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায়

    নাইজেরিয়া
    আরও একবার আর্জেন্টিনার সঙ্গে একই গ্রুপে আফ্রিকার সুপার ঈগলরা। আগের দুইবার তুলনামূলক সহজ হলেও, এবার গ্রুপটা কঠিন। তাতে অবশ্য খুব বেশি দমে যাওয়ার কথা নয় নাইজেরিয়ানদের। অভিজ্ঞতা আর তারুন্যের মিশ্রণে দারুণ এক দল নিয়েই রাশিয়া যাচ্ছে তারা। নাইজেরিয়ার খেলার ধরন মূলত কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর। আর্জেন্টিনার হাই ডিফেন্সিভ লাইনের বিপরীতে যেটা খুবই কার্যকরী। ক্রোয়েশিয়ার পজেশন বেজড ফুটবলের বিপক্ষে অবশ্য ঘাম ঝরাতে হবে নাইজেরিয়াকে। শারীরিক শক্তিমত্তাটা এখানেই কাজে আসবে গের্নোট রোরের দলের। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের ফুটবল খেলাটা কঠিনই হবে তাদের, তবে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলতে পারলে জয়টা কঠিন হওয়ার কথা নয় তাদের।

    শক্তি

    • বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের ঝামেলা আফ্রিকান দেশগুলোর নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এবার সেটা নেই। নাইজেরিয়া বিশ্বকাপে যাচ্ছে পুরো মনযোগ, শক্তি আর ইচ্ছা নিয়েই।
    • অধিনায়ক জন অবি মিকেল জাতীয় দলে খেলেন কিছুটা আক্রমণাত্মক ভূমিকায়। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় উইলফ্রেড নিদিদি ভরসা যোগাচ্ছেন। মিডফিল্ডের বাকিদের বেশিরভাগই খেলেন প্রিমিয়ার লিগে, গতি আর কৌশল সবই আছে তাদের।


    দুর্বলতা

    • গোলরক্ষক ভিক্টর এনিয়েমা এবার নেই। তার জায়গায় প্রথম পছন্দের কার্ল ইকেমেও নেই অসুস্থতার কারণে। ইকেচকু ইজেনওয়া আর ফ্রান্সিস উজোহোর ভেতর পছন্দ করতে হবে কোচকে। উজোহো হয়ত এগিয়ে থাকবেন, তবে অভিজ্ঞতা নেই একদমই। বয়সও মাত্র ১৯! সবকিছু ঠিক থাকলেও এই গোলরক্ষকের জায়গায় ভুগলে ঢাকা পড়ে যাবে নাইজেরিয়ার সাফল্য।


    ভবিষ্যতবাণীঃ দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলতে, সেখানে ফ্রান্সের কাছে হেরে বাদ