আরও একটি ভুলে যাওয়ার মতো দিন বাংলাদেশের
বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ১ম একদিনের আন্তর্জাতিক
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ বাংলাদেশ ১৬০/১০, ৩৬.৩ ওভার (সাকিব ৪৮, নাসির ৩১, সৌম্য ২৭; কাগিসো রাবাদা ৬/১৬, ক্রিস মরিস ২/৩২); দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬৪/২, ৩১.১ ওভার (ডু প্লেসি ৬৩*, রাইলি রুশো ৪১*; নাসির ১/২৮, মাশরাফি ১/৩৬)
ফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরাঃ কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টস জিতে মাশরাফির ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। প্রশ্ন তুলতে পারেন আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে দু’ দু’দিন স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য ক্রিকেটারদের দিনভর শ্যুটিং নিয়ে। তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আজ যেভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন তাতে আর কোন প্রশ্ন তোলার সুযোগটা সামান্যই আছে বৈকি! একদিনের ক্রিকেটে আজই অভিষিক্ত প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা কার্যত একাই ধ্বসিয়ে দিলেন টাইগারদের ব্যাটিং লাইন আপ। আর স্বাগতিক শিবিরের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে যোগ দিলেন আসা-যাওয়ার দৃষ্টিকটু মিছিলে। সে ফলশ্রুতে ১৬০ রানের পুঁজিতে হারটা মূলত সময়ের ব্যাপার ছিল। ৩১.১ ওভারে ২ উইকেট খরচায় সফরকারীরা সেটা টপকে গেলো অনায়াসেই। সেই সাথে তিন ম্যাচের একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো আমলা বাহিনী।
অভিষেক একদিনের আন্তর্জাতিকে হ্যাট্রিকের রেকর্ডটা আজকের আগ পর্যন্ত একজনেরই ছিল, বাংলাদেশী স্পিনার তাইজুল ইসলামের। আজ সেটায় ভাগ বসালেন দক্ষিণ আফ্রিকান ডানহাতি পেসার কাগিসো রাবাদা, বাংলাদেশেরই বিপক্ষে। তাঁর প্রথম শিকার হয়ে ওপেনার তামিম ইকবাল ফিরে যান শুন্য রানে। ব্যাক্তিগত ক্যারিয়ারে তামিমের এটি পনেরোতম ‘ডাক’ (বাংলাদেশের হয়ে মোহাম্মদ রফিকের সাথে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ)। টানা তিন বলে তিন লেন্থের ডেলিভারিতে তামিমকে বিভ্রান্ত করে রাবাদা তাঁকে জব্দ করেন আচমকা এক ইয়র্কারে। তামিমকে ষোলোআনা জব্দ করে বল আঘাত হানে তাঁর অফ স্ট্যাম্পে।
পরের খানিকটা সময় দুঃস্বপ্নের মতোই কাটে বাংলাদেশের। ওই রাবাদার পরের দু’ বলেই একে একে ফিরে যান লিটন দাস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের তিন টপ অর্ডারকে ফিরিয়েই অভিষেক একদিনের আন্তর্জাতিকে হ্যাট্রিক আদায় করে নেন রাবাদা।
তিন ওভার বাদে আবারো আক্রমণে রাবাদা। এবার তাঁর শিকার উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া সৌম্য সরকার। ২৭-এ পৌঁছে যাওয়া সৌম্যকে কাভারে তালুবন্দী করেন ডুমিনি। বাংলাদেশের ইনিংসে দিনের সবচেয়ে বড় জুটিটা আসে এরপর, মুশফিক-সাকিবের ব্যাট থেকে। ৫৩ রানের সে জুটি ভাঙেন জেপি ডুমিনি। তাঁর ফুল ডেলিভারিতে মুশফিকের স্লগ সুইপ নীচু হয়ে আসা ক্যাচে অসামান্য দক্ষতায় লুফে নেন ইমরান তাহির।
মরিসের বলে সাব্বির রহমান (৫) বোল্ড হবার এক ওভার বাদে ফিরে যান সাকিব আল হাসানও, ব্যক্তিগত ৪৮ রানে ইমরান তাহিরের এলবিডব্লু ফাঁদে পা দিয়ে। মাশরাফি আর জুবায়েরের উইকেট দখলে নিয়ে ষষ্ঠক পূরণ করেন রাবাদা। মাত্র ১৬ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে গড়েন একদিনের ক্রিকেটে সেরা বোলিংয়ের নতুন বিশ্বরেকর্ড।
শেষ উইকেটে মুস্তাফিজকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংসটা সম্মানজনক পর্যায়ে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেন নাসির। মরিসের বলে বোল্ড হওয়ার আগে নাসির করেন ৩১ রান। অপরপ্রান্তে ১১ বলে শূন্য রানে অপরাজিত থাকা মুস্তাফিজুর অন্তত ধৈর্যের দিক থেকে লজ্জার কারণ হতে পারেন প্রথমসারির ব্যাটসম্যানদের।
১৬১ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ক্ষণিকের জন্যেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় নি সফরকারীরা। দলীয় ২২ রানে মাশরাফির বলে অধিনায়ক হাশিম আমলা (১৪) ও ৬৫ রানে নাসিরের বলে ডি কক (৩৫) ফিরে গেলেও সেভাবে বিপর্যয় দেখা দেয় নি মুহূর্তের জন্যেও। ডু প্লেসি-রাইলি রুশো জুটি বাকিটা পথ পাড়ি দেন অবিচ্ছিন্ন থেকেই।