• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    গোল্ডেন বুট এবং কিছু মিথ

    গোল্ডেন বুট এবং কিছু মিথ    

    বিশ্বকাপ কে জিতবে সেটা যদি কোটি টাকার প্রশ্ন হয় তাহলে গোল্ডেন বুট কে পাবে সেটা অন্তত লাখ টাকার প্রশ্ন হওয়া উচিত। জুয়াড়িদের কাছে অবশ্য সেটা লাখ-টাখ ছাড়িয়ে আরও অনেক অনেক বেশি। এর মধ্যেই যেমন বাজির দরে লিওনেল মেসি, নেইমার, রোনালদোরা এগিয়ে আছেন। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, সেটা জানার জন্য আরও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে গোল্ডেন বুট নিয়ে আপনার যে ধারণা ছিল, সেটা ভুলও হতে পারে!

    অনেকেই হয়তো গোল্ডফেন বুটের ভবিষ্যতবাণী করতে গিয়ে ভাবছেন,  নিশ্চয় সহজ গ্রুপে পড়াটাই সোনার বুট পাওয়ার পূর্বশর্ত। গ্রুপ পর্বে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ সহজ না হলেও খুব কঠিন বলা যাবে না। তবে নেইমার, মেসিরা গ্রুপ পর্বেই গোল করে সোনার বুটে এক পা গলিয়ে রাখবেন সেটা ভাবাটা ভুল হতে পারে। আবার রোনালদো, লুকাকুরা তুলনামূলক কঠিন গ্রুপে পড়েছেন বলে সম্ভাবনা যে কম সেটাও কিন্তু বলা যাচ্ছে না।

    ১৯৮৬ সাল থেকে গোল্ডেন বুট পাওয়া ফুটবলারদের তালিকাটা খতিয়ে দেখলে কিছু মজার ব্যাপার বেরিয়ে আসে। সে বছর থেকে গোল্ডেন বুটজিয়ীরা গোল করেছেন ৫৪টি, এর মধ্যে ২৯টি এসেছে গ্রুপ পর্বে। বাকি ২৫টিই এসেছে নকআউট পর্বে। এর মধ্যে আবার ওলেগ সালেঙ্কো ১৯৯৪ সালে একাই এক ম্যাচে করেছিলেন পাঁচ গোল। সেবার রিস্ট স্টয়চকভের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন, কিন্তু তারপরও রাশিয়াকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিতে পারেননি। আর একটা ব্যতিক্রম ২০০৬ সালের মিরোস্লাভ ক্লোজা। সেবার পাঁচ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন, এর মধ্যে চারটি করেছিলেন গ্রুপ পর্বে। তা বাদে বিশ্বকাপের বেশির ভাগ আসরে নকআউট পর্বই ঠিক করে দিয়েছে সোনার বুটের নিয়তি।

     

     

    গত বারের কথাই ধরুন, কলম্বিয়া গ্রুপ পর্বে সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছিল বটে, সেখানেই তিন গোল করে ফেলেছিলেন হামেস রদ্রিগেজ। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে উরুগুয়ের সঙ্গে দুইটি ও ব্রাজিলের সঙ্গে কোয়ার্টারে একটি করেই গোল্ডেন বুট পেয়ে যান। মেসিরও গ্রুপ পর্বে চারটি গোল ছিল, কিন্তু পরে আর গোলই করতে পারেননি। কাজেই কলম্বিয়া সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়াতেই যে হামেস পুরস্কারটা পেয়ে গেছেন, সেটা বলা যাচ্ছে না। তার আগের আসরেও মুলার, স্নেইডার, ভিয়া বা ফোরলানদের সবাই নিজেদের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন।

     

    পাওলো রসি তো সবচেয়ে ব্যতিক্রম। ১৯৮২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে কোনো গোলই পাননি, ইতালিও খোঁড়াচ্ছিল। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলের সঙ্গে সেই হ্যাটট্রিকের পর আর রোখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সেবার করেছিলেন ছয় গোল, সবকটিই নকআউট পর্বে।

    গোল্ডেন বুট অবশ্য এমন চমক কম উপহার দেয়নি। গত বার কে ভেবেছিল, রোনালদো-মেসি-নেইমাররা থাকতে হামেস এসে এমন বাজিমাত করে দেবেন? তার আগের বার মুলারও যে গোল্ডেন বুট পেয়ে যাবেন, সেটাও ভাবেননি অনেকেই। ২০০২ সালে রোনালদো বা ২০০৬ সালে ক্লোসারটাও তাও কিছুটা অনুমিত ছিল। তবে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ডেভর সুকার বা ১৯৯৪ সালে সালেঙ্কো-স্টয়চকভকে নিয়ে বাজি ধরেছিলেন খুব কম লোকই।

    তবে শিলাচি বা রসির গল্প এসবের তুলনায় কিছুই নয়। ১৯৯০ বিশ্বকাপে শিলাচি মূল একাদশেই ছিলেন না, প্রথম দুই ম্যাচে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। এরপর সেই যে গোলের শুরু, তৃতীয় স্থান নির্ধারণি ম্যাচ অবদি তা টেনে নিয়ে গেছেন। সেজন্য গোল্ডেন বুটের পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বলও পেয়েছিলেন। রসির কাহিনি তো আরও চমক জাগানিয়া। ১৯৮২ বিশ্বকাপে খেলারই কথা ছিল না তাঁর। বেটিং কেলেঙ্কারিতে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিন বছরের জন্য, পরে সেটা কমে আসে দুই বছর। কিন্তু খেলার মতো ফিটনেসও ছিল না, ধারও হারিয়ে ফেলছেন। তাঁকে দলে রাখা নিয়েই কম সমালোচনা হয়নি। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেও তো নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। তারপরও কোচ সুযোগ রেখেছিলেন তাঁর ওপর, আর বাকিটা তো ইতিহাস।