• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    রহস্যের নাম ভিএআর

    রহস্যের নাম ভিএআর    

    ১.
    ঘরে বসে বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচ দেখছেন, পছন্দের দল গোলও করেছে।  সেই উৎসবে মেতেছেন আপনি। বিশ্বকাপের মাসে আপনার বিশেষ স্বজাতি সমর্থকেরাও আতশবাজি পুড়িয়ে সেই গোলের উদযাপন সারছেন ঘরের বাইরে। উল্লাসের রেশ না কাটতেই টিভি পর্দায় নজর গেল আপনার। গলির উৎসবও থেমে গেছে ততোক্ষণে। রাশিয়ার মাঠে যাদের উদযাপন দেখে আপনার এতো মাতামাতি তাদের উৎসবই তো মলিন হয়ে গেছে। কারণ গোলটাই যে বাতিল হয়ে গেছে ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারির সিদ্ধান্তের সাহায্যে। আপনার ম্লান হওয়া উৎসব হয়ত অন্যের উদযাপনের কারণ হয়ে গেছে! সেটা দেখে গা জ্বলছে আপনার। পুরো ঘটনার উলটোটাও হতে পারে আবার, আপনি তখন গল্পের অন্য চরিত্র!

    ক্রিকেটের রিভিউয়ের কল্যাণে এসব দৃশ্যের সঙ্গে অবশ্য আমরা আগে থেকেই পরিচিত। কিন্তু ক্রিকেটের সঙ্গে ফুটবলের টানটান উত্তেজনার তুলনা করা তো বোকামি। আর বিশ্বকাপ ফুটবল তো ভিন্ন মাত্রার বস্তু! সময় থাকতেই তাই মানিয়ে নিন। এবার বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে ভিডিও সহকারি রেফারি। ক্রিকেটের থার্ড আম্পায়ারের মতোই, তবে আরেকটু  বিস্তৃত কাজের পরিধি।

    ২.
    ভিএআর বা ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারি- নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল গতবছরের কনফেডারেশনস কাপেও। তবে শুরুটা তারও কিছুদিন আগে। এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলে। তবে কনফেডারেশনস কাপটা ছিল মাইলফলক। তখনই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, ফুটবলে একটা পরিবর্তন আসছে। এরপর যথার্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গেল মার্চে নিশ্চিত করা হয়েছে, বিশ্বকাপেও রেফারিরা পাচ্ছেন সিদ্ধান্ত রিভিউ করার সুযোগ। কিন্তু সেটার প্রয়োগ হবে কিভাবে?

    একজন প্রধান রেফারি, দুইজন অ্যাসিসটেন্ট আর একজন ম্যাচ অফিসিয়াল- এই চারজন মিলেই পরিচালনা করতেন একটা ফুটবল ম্যাচ। এবার তাদের সঙ্গে যোগ হবেন চার জনের একটা দল। যারা স্টেডিয়ামের বাইরের নিরিবিলি একটা কক্ষ থেকে নজর রাখবেন ম্যাচের সুক্ষ্ণ ঘটনাগুলোর। বিশ্বকাপের ৬৪ টি ম্যাচের প্রত্যেকটিই ভিএআর পর্যবেক্ষণ করা হবে মস্কো থেকে। ভিডিও অফিসিয়াল রুম বা ভিওআর কক্ষে থাকবেন প্রধান একজন (ভিএআর), তার সহকারি আরও তিনজন (এভিএআর ১, এভিএআর ২, এভিএআর ৩)। দুইজন সাহায্য করবেন ভিএআরকে। আর শেষজন রিপ্লে অপারেটর। ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারির কাজ প্রতিনিয়ত মাঠের রেফারির  সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে তাকে অবগত করা। আর এভিএআর ১ সাহায্য করবেন ভিএআরকে।  রিভিউ চলাকালীন খেলা বন্ধ থাকা অবস্থায় মাঠের দর্শক, ও টেলিভিশনের দর্শকদের সঙ্গে সমন্বয় ঠিক করা তার কাজ। দ্বিতীয় জনের কাজ অফসাইডের জন্য রাখা আলাদা দুইটি ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলে সার্বক্ষণিক নজর রাখা। আর রিপ্লে অপারেটরের ১২ টি ক্যামেরার সাহায্যে রেফারির সুবিধামতো বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তুলে ধরবেন ঘটনার ফুটেজ। মাঠের ৩৩টি অ্যাঙ্গেল থেকে দেখানো ক্যামেরা তো আছেই, সঙ্গে থাকবে ৮টি সুপার স্লো মোশন ক্যামেরা। থাকবে আরও ৪ টি আল্ট্রা স্লো মোশন ক্যামেরা। টেলিভিশনের ধারাভাষ্য বা রিপ্লে কোনোটাই দেখার সুযোগ থাকবে না ভিডিও রুমে। তাদের সামনে রাখা মনিটরে ভেসে ওঠা ফুটেজ কেবল রেফারিদের কাজের জন্যই আলাদা করে ব্যবহার হবে। আর ব্রডকাস্টার, ধারাভাষ্যকারেরা দর্শকদের অবগত রাখবেন রিভিউ চলাকালীন সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে।

    ফুটবলে রেফারিদের প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্য এবারই প্রথম নয়। গত বিশ্বকাপে চালু করা হয়েছিল গোললাইন টেকনোলজি। ভিএআরের সঙ্গে এবার সেটাও থাকছে রাশিয়ায়।

    ৩.
    ভিডিও রেফারির মোটা দাগের বর্ণনা পড়ে অবশ্য চমকে উঠতে পারেন। বারবার খেলা বন্ধ হলে ফুটবলের সেই উত্তেজনা না মাটি হয়ে যায়! আপনার মতো করে ভেবে রেখেছে ফুটবলের আইন প্রণেতা আইএফএবিও। তাই ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারির মূলনীতি হচ্ছে- মিনিমাম ইন্টারফেরেন্স, ম্যাক্সিমাম বেনিফিট। আর রিভিউয়ের সময় বন্ধ থাকা খেলার সময় যোগ করা হবে ম্যাচ অফিসিয়ালের অ্যাডিশনাল টাইমের সঙ্গে।  মাঠের খেলা তার চিরাচরিত গতিতেই চলবে, শুধুমাত্র বল বাইরে গেলে বা মাঝমাঠে অগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বল থাকলেই কেবল খেলা থামাতে পারবেন রেফারিরা। খেলা থামানো যাবে দুই উপায়ে- চেক ও রিভিউ। খেলা থামিয়ে রেফারিকে কানে হাত দিয়ে বিড়বিড় করতে দেখা গেলে, সেটা হবে চেক। এই পদ্ধতিতে নিজের সিদ্ধান্ত— জানিয়ে ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারবেন মূল রেফারি। অথবা ভিডিও রেফারির পরামর্শে খেলা থামিয়ে দিতে পারবেন রিভিউ পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে দুইহাত দিয়ে চারকোণা বাক্স বানিয়ে টেলিভিশনের সংকেত দেখাবেন। ক্রিকেটের থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য চাওয়ার মতোই। এরপর সহকারির দেওয়া রিভিউ সিদ্ধান্তে— সন্তুষ্ট না হলে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেও চাইলে যাচাই করে নেওয়ার সুযোগও পাচ্ছেন রেফারি। মাঠের পাশে রাখা মনিটরে নিজেও আরেকবার দেখে নিতে পারবেন ঘটনা। দিনশেষে মাঠের রেফারির কাছেই থাকবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দায়ভার। মাঠে রেফারির দেওয়া পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্ত গুলোই কেবল বদলাবে। কিছুক্ষেত্রে দুই রেফারির মধ্যে হতে পারে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। সেক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয় থাকলে সেটাও নির্ভর করবে মাঠে ম্যাচ পরিচালনাকারী রেফারির ওপর।

    ভিডিও অ্যাসিসেন্ট রেফারি সাহায্য করতে পারবেন ৪ ক্ষেত্রে;

    • গোল
    • পেনাল্টি সিদ্ধান্ত
    • লাল কার্ড
    • মিসটেকেন আইডেন্টিটি

    ৪.
    গোওওওওল বলে চেঁচিয়ে ওঠার পর তাই কিছুটা সাবধানেই থাকুন এবার, অপেক্ষা করুন আর কিছুক্ষণ। গোল হজম করলেও স্বান্তনা খুঁজুন, যদি খুঁত বের হয়! ম্যাচের প্রতিটি গোলই রিভিউ করবেন ভিডিও রেফারি। ধরুণ ডিফেন্ডারকে ধাক্কা দিয়ে শুন্যে লাফিয়ে হেডে গোল করেছেন কেউ, কিন্তু রেফারির চোখ এড়িয়ে গেছে সেই ঘটনা। ধরা পড়বে ভিডিও রিভিউতে, ততক্ষণে উদযাপন হয়ত করে ফেলবেন গোলদাতা, কিন্তু খানিক্ষণ পরই হতাশ হতে হবে তাকে। গোলের বিল্ড আপের সময়ও আইনবিরুদ্ধ কিছু ঘটলে সেটাও দেখবেন ভিডিও রেফারি। এপিপি, অ্যাটাকিং ফেইজ অফ প্লে নির্ধারণ করবে সেই সময়সীমা। ধরা যাক, নিজের অর্ধ থেকে একজন ডিফেন্ডার বল রিসিভ করে মাঝমাঠে সতীর্থের কাছে পাঠালেন। বল রিসিভ করার সময় মিডফিল্ড পজিশনে থাকা ওই খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগলো, কিন্তু সেটা এড়িয়ে গেল রেফারির চোখ। এবার ওই মিডফিল্ডার সতীর্থ স্ট্রাইকারের কাছে থ্রু পাস দিলেন, তিনি কোনোরকম ফাউল ছাড়াই বল জড়ালেন জালে। ভিডিও রেফারির তৎক্ষণাৎ মাঠের রেফারিকে ভুলটা ধরিয়ে দেবেন, বাতিল হবে গোল। কিন্তু ওই মিডফিল্ডার যদি বল রিসিভ করার পরও সামনে পাস না দিয়ে বলের পজেশন ধরে রাখতেন বা ব্যাকপাস দিতেন অন্য কারও কাছে, এরপর যদি সেই আক্রমণ থেকেই গোল করতেন ওই স্ট্রাইকার- তাহলে আবার সেটা ন্যায্য হিসেবেই ধরা হত। এই সময়সীমাটাকেই বলা হচ্ছে অ্যাটাকিং ফেইজ অফ প্লে।  শুধুমাত্র গোলের বিল্ডআপে করা ফাউল নয়, অফসাইডের সিদ্ধান্তেও বাতিল হতে পারে গোল। ভিএআরের সাহায্যে সূক্ষাতি সূক্ষ্ণ অফসাইডও নির্ণয় করা যাবে। অফসাইড সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ফ্রি কিক থেকে আবারও শুরু হবে খেলা, অন্যান্য ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ জায়গা থেকে ড্রপ বলের মাধ্যমে। তবে রেফারির দেওয়া ভুল ফ্রি কিক বা ভুল থ্রো-ইন থেকে গোল হলে সেটা গোল হিসেবেই ধরা হবে। আবার ডিফেন্ডারকে ফাউল করে শুন্যে লাফিয়ে ওঠা স্ট্রাইকারের হেড যদি গোলে পরিণত না হয়ে গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিয়ে বাইলাইনের বাইরে বল পাঠিয়ে দিতেন- সেক্ষেত্রেও কর্নারের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকতেন রেফারি। ভিডিও অ্যাসিসট্যান্টও রেফারিকে পরামর্শ দিতেন না, কারণ ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেওয়া সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুতেই নাক গলাবেন না তিনি। খেলার নিজ গতিকে বাধা না দিয়েই ঠিক করা হয়েছে নিয়ম।

    গোলের মতো পেনাল্টি কিকও নির্ধারণ করে দিতে খেলার ফল, তাই সেটাও ভিএআরের বিবেচ্য বিষয়। মাঠে দেওয়া রেফারির যে কোনো পেনাল্টি সিদ্ধান্তই রিভিউ হয়ে আসবে ভিডিও অ্যাসিসটেন্টের কাছ থেকে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত মিললেই হবে পেনাল্টি। এক্ষেত্রে অবশ্য আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, ভিডিও রেফারি দেবেন পরামর্শ, সিদ্ধান্ত নয়। তার পরামর্শে সন্তুষ্ট না হলে নিজে ভিডিও দেখে নিজের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবেন মূল রেফারি। অর্থাৎ সবক্ষেত্রে তিনিই কর্তা।

    ৫.
    এন্ড টু এন্ড স্টাফ। এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। একপ্রান্তে গোলের সামনে থেকেও প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের ধাক্কায় পড়ে গেলেন স্ট্রাইকার। রেফারির চোখে পেনাল্টি মনে হয়নি, তিনি খেলা চালিয়ে গেছেন। সেখান থেকে আক্রমণে উঠল বিপরীত দল, অন্যপাশের জালে বল জড়িয়ে গোল করে ফেলল তারাই। ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারির কাজ এখন দুইটি। প্রথমে সম্ভাব্য পেনাল্টি যাচাই করা। মাঠের রেফারি পরিস্কার ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকলে তাকে জানানো হবে। তার পরামর্শে সন্তোষজনক মনে হলে রেফারি বাতিল করবেন সেই গোল। অন্যপ্রান্তেও ঘোষণা করবেন পেনাল্টি। ফাউলের অপরাধ গুরুতর মনে হলে লাল বা হলুদ কার্ডও দেখাতে পারেন ওই ডিফেন্ডারকে। পেনাল্টি ছাড়াও লাল কার্ড দেখানোর মতো অপরাধও রেফারির চোখ এড়িয়ে গেলে সেটা জানানো হবে তাকে। অথবা রেফারি কাউকে সরাসরি লাল কার্ড  দেখালে সেই সিদ্ধান্ত রিভিউ করার সুযোগ থাকবে। তবে হলুদ কার্ডের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রয়োগ হবে না।

    কার্ড আর পেনাল্টির ব্যাপারটা আরেকটু স্পষ্ট হওয়া যাবে একটা পরিস্থিতি চিন্তা করে নেওয়া গেলে। কোনো এক দলের পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিয়েছেন রেফারি। নিশ্চিত গোলের দিকে এগুতে থাকা স্ট্রাইকারকে ধরতে গিয়ে ফাউল করে বসেছেন আরেক দলের ডিফেন্ডার। রেফারি পেনাল্টিও দিলেন, সঙ্গে লাল কার্ডও দেখালেন সেই ডিফেন্ডারকে। কিন্তু ভিডিও সহকারি রিভিউ করে জানালেন, ওই স্ট্রাইকার আসলে পাস রিসিভ করার সময় ছিলেন অফসাইড পজিশনে। এক্ষেত্রে পেনাল্টির সঙ্গে বাতিল হবে ডিফেন্ডারের লাল কার্ডও। কিন্তু ঘটনা যদি এমন হয় যে ওই ডিফেন্ডার আসলে কনুই মেরে বসেছিলেন, বা দুই পায়ে ট্যাকেল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্ট্রাইকারের ওপর- সেক্ষেত্রে পেনাল্টি বাতিল হলেও, লাল কার্ডেও সিদ্ধান্তটা বহালই থাকবে।

    সবশেষে থাকলো মিসিটেকেন আইডেন্টিটি। নাম শুনেই বুঝে ফেলার কথা, যাকে কার্ড দেখানোর কথা তাকে না ভুলে অন্য কাউকে দেখিয়ে দিলেও  শুধরে নেওয়া হবে রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত। লাল বা হলুদ- দুই রঙের কার্ডের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হবে এই নিয়ম।

    ৬.
    “ভিএআর ছাড়া টুর্নামেন্টটা হত অন্যরকম। সেই টুর্নামেন্ট হত কম খানিকটা কম নির্ভুল" – রাশিয়ার কনফেডারেশনস কাপের পর ভিএআর নিয়ে বলেছিলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। আর বিশ্বকাপে ভিএআর ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়ার পর জানিয়েছিলেন নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে তিনি দারুণ  উচ্ছ্বসিত। ফিফা প্রেসিডেন্ট যতই উচ্চকিত হন, নতুন এই নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে সিরি আ, বুন্দেসলিগা, ডাচ লিগে প্রয়োগ করা হয়েছিল ভিএআর। সেসব দেশের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পাওয়া গেছে মিশ্র অনুভূতি। তাদের কেউই অবশ্য এর বিপক্ষে কথা বলেননি। তবে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে ব্যবহারের জন্য এখনই প্রস্তুত কিনা সেই প্রশ্ন রেখেছেন কোচ-খেলোয়াড়দের সবাই। রাশিয়া বিশ্বকাপে মোট ১৩ জন ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারি নিয়োগ পেয়েছেন। নতুন নিয়মে তাদের অভিযোজিত হওয়া, সঙ্গে খেলোয়াড়দের খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়টাও থাকছে জবাব না পাওয়া প্রশ্নের খাতায়। ফিফা অবশ্য বরাবরই দাবি করে আসছে তাদের রেফারিরা বিশ্বকাপের জন্য  প্রস্তুত। কিন্তু খেলোয়াড়েরা কি প্রস্তুত? তারা পেয়েছেন নতুন কিছু নির্দেশাবলী। সবগুলো নির্দেশ আবার বায়নারি নয়, গ্রে জোনও থেকে যাচ্ছে তাতে; সহকারি রেফারি অফসাইডের পতাকা নাড়ালেও খেলা চালিয়ে যাও। খেলা চালিয়ে যাও যতক্ষণ না পর্যন্ত রেফারির বাঁশি বাজে। জালে বল পুরে দিয়ে আসার পর রেফারি বাঁশি বাজালে রিভিউয়ের সিদ্ধান্তে তো অনসাইডেও থাকতে পারো তুমি! আর রেফারি যদি সহকারির পতাকা দেখেই বাঁশি বাজিয়ে দেন, সেক্ষেত্রে অনসাইডে থাকলেও তোমার কপাল মন্দ। কারণ এমন অবস্থায় রেফারি বাঁশি বাজালেই তো শেষ!  তাহলে মাঠের রেফারিরা অফসাইড বা সেটপিস থেকে গোলরক্ষককে করা ফাউলের বাঁশিটা বাজাবেন কখন? সেই আক্রমণ গোলে পরিণত হওয়ার আগে নাকি পরে? দুই প্রান্তেই সমান দক্ষতায় ৯০ মিনিট ধরে কাজটা চালিয়ে যেতে পারবেন? এসব প্রশ্নের জবাব থেকে গেল অজানাই। তাই ভিএআর থাকার পরও বিতর্কের রাস্তা থাকছে খোলা।

    খেলোয়াড় আর রেফারিদের সঙ্গে প্রশ্ন কিন্তু থেকে যাচ্ছে আপনাকে নিয়েও। নতুন এই নিয়মের সঙ্গে বিশ্বযজ্ঞের এই এক মাস আপনার আনন্দ-বেদনা মুহুর্তেই রঙ বদলাতে পারে। আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন তো?