দুর্দান্ত রাশিয়ায় শুরু বিশ্বকাপ
রাশিয়ার বিশ্বকাপ, প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে জয় না পেলে সেটা হত হতাশারই। নিজেদের দল নিয়ে যতই হতাশা থাকুক, রাশিয়ানরা আজ লুঝনিকি থেকে বাড়ি ফিরেছে খুশি মনে। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের শুরুটা যেমন হওয়ার কথা ছিল তেমনই হয়েছে, হয়ত সেটা ছাড়িয়ে গেছে রাশিয়ানদের প্রত্যাশাকেও। সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে হারিয়ে রাশিয়ান উৎসবে রঙ চড়েছে আরও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছেন আসলে আরেকজন। রাশিয়া পেয়েছে তাদের নতুন নায়ক, ডেনিস চেরিশেভ। তার জোড়া গোলে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়েছে একপেশেই। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে এর চেয়ে বড় জয় আছে মাত্র একটি, ১৯৩৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ৭-১ গোলে হারিয়েছিল ইতালি।
ফিফা র্যাংকিংয়ের হিসাব নিকাশ পাশে সরিয়ে আজ মাঠে নেমেছিল উজ্জীবিত এক রাশিয়া। বিশ্বকাপের সবচেয়ে তলানীর দল তারা, অথচ শুরু থেকে সেটা বোঝার উপায় ছিল না। সৌদি আরবের সঙ্গে শুরুটাই আক্রমণাত্মক ছিল রাশিয়ানদের। প্রথম গোলটা পেতেও অপেক্ষা করতে হয়নি বেশিক্ষণ, মাত্র ১২ মিনিটেই দেশকে স্বপ্নের শুরু এনে দিয়েছিলেন ইউরি গাজিনস্কি। আন্দ্রে গলোভিন ক্রসটা করেছিলেন বেশ ভেতরের দিকেই। অপেক্ষায় ছিলেন তিনজন রাশিয়ান, তাদের সামনে সৌদি লেফটব্যাক সাহরানি। তিনিই ভুলটা করলেন, কাজের সময় পিছলে পড়লেন। পেছন থেকে গাজিনস্কি লাফিয়ে উঠে হেডে করলেন বিশ্বকাপের প্রথম গোল।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথম শট অন টার্গেটেই গোল করেছিলেন ফিলিপ লাম। ২০০৬ সালে লামের করা সেই রেকর্ডের সঙ্গে ঢুকে গেছে গাজিনস্কির নামও। কয়েক মিনিট পরই দ্বিতীয় গোলটাও পেয়ে যেতে পারত রাশিয়া। গোলরক্ষক আবদুল্লাহ আল মুয়াইয়ফ নিজের বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে যাত্রায় রক্ষা করেছিলেন দলকে।
অন্যপ্রান্তে আল সাহলাউইও হেড করেছিলেন, তিনিও গোল করার মতো অবস্থাতেই ছিলেন। ইগর আকিনফেভকে অবশ্য জায়গা থেকেই নড়তে হয়নি, সালাহউইর হেড বাইরে দিয়েই চলে গিয়েছিল।
২৪ মিনিটে আরেকবার দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল রাশিয়া। অ্যালান জাগোয়েভ হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন তখনই। তার জায়গা নামা ডেনিস চেরিশেভ অবশ্য রাশিয়ার জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছিলেন। ৪৩ মিনিটে তিনিই রাশিয়াকে এগিয়ে দিয়েছিলেন দুই গোলে। তিনিও করেছেন রেকর্ড, চেরিশেভের অবশ্য রেকর্ডে ভাগীদার নেই। উদ্বোধনী ম্যাচে গোল করা প্রথম বদলি খেলোয়াড় হয়ে গেছেন তিনি।
বিরতির আগেই দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধটাও ভালোভাবেই শুরু করেছিল রাশিয়া। তবে ঘড়ির কাঁটা ঘন্টা ছোঁয়ার আগে সৌদি আরবও তাদের সুযোগ পেয়েছিল। সালাহউই বাঁ জসিম দুইজনই পারতেন একটা গোল শোধ করতে, ব্যর্থ হয়েছেন দুইজনই। পুরো ম্যাচে আন্তোনিও পিজ্জির দলের পাওয়া সেরা সুযোগ হয়ে থেকেছে সেটাই। রাশিয়ার জয়োৎসবেও তাই ছেদ পড়েনি এতোটুকুও। ৭১ মিনিটে আরেক বদলি আর্তেম যুইবা মাঠে নেমেই গোল করলে রাশিয়ানদের ভরসা বাড়ে আরেকটু। কোচ স্তানিশ্লাভ চেরচেশভের কৌশল তো ম্যাচে কাজে লেগেছে প্রায় শতভাগই!
তবে সবকিছুই ছাড়িয়ে গেছে ম্যাচের শেষদিকে। দুইটি গোল আশা বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়ানদের। অমন গোলে অবশ্য আশার পালা হাওয়া লাগেই। ৯০ মিনিটে ডিবক্সের ভেতর থেকে আউট সাইড অফ দ্যা বুটের শটে দারুণ এক গোল করেন চেরিশেভ। এবারের বিশ্বকাপে সেরা গোলের তালিকায়ও শেষ পর্যন্ত থাকার কথা চেরিশেভের দ্বিতীয় গোলটি। পরেরটাও কম দর্শনীয় নয়, ফ্রি কিক থেকে করা গলোভিনের গোলটার কথাও রাশিয়া মনে রাখবে অনেকদিন। রাশিয়ানরা তো বটেই, ভিআইপি গ্যালারিতে বসা ভ্লাদিমির পুতিনকেও সন্তুষ্টই মনে হয়েছে দেশের খেলায়। এ তো স্বপ্নের মতো শুরু!
একাদশ
রাশিয়াঃ আকিনফেভ, ফার্নান্দেস, কুতেপভ, ইগনাশেভিচ, ঝিরকভ, গাজিনস্কি, জবনিন, সামেদভ, গলোভিন, জাগোয়েভ , স্মোলভ
বদলিঃ চেরিশেভ, কুজায়েভ, যুইবা
সৌদি আরবঃ মোসাইলেম, শাহরানি, হাওসাউই, হাওসাউই, আল হারবি, অতায়ফ, দাওসারি, জাসিম, আলখাইবারই, সেহরি, আল সাহলাউই
বদলিঃ মুয়ালাদ, সুলতান বাভির, আসিরি
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ স্কোয়াকা