• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    স্পেনকে জিততে দিলেন না অতিমানব রোনালদো

    স্পেনকে জিততে দিলেন না অতিমানব রোনালদো    

    অতিমানব? এমন বিশেষণ তো কতইবারই জুড়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নামের সঙ্গে। কিন্তু বিশ্বকাপে এতোদিন বিবর্ণই ছিলেন। সেটাই বা থাকবে কেন? অসম্ভবকে সম্ভব করা যার কাজ, তিনি বিশ্ব আসরে মলিন হবেন কেন? সোচিতে শিহরণ জাগানো ম্যাচে তাই সবটুকু আলো কেড়ে নিলেন রোনালদো, করলেন হ্যাটট্রিক।  স্পেনের বিপক্ষে ৩-৩ গোলের ড্রটা তাই জয়ের মতোই মনে হলো পর্তুগালের কাছে।

    স্পেন-পর্তুগাল ম্যাচ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল, তার সবটুকুই পূরণ করেছে দুইদল। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলের ম্যাচ শিকে ঝুলে ছিল একেবারে শেষ পর্যন্ত। ৮৮ মিনিটে ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে রোনালদোকে ফাউল করে ফ্রি কিক দিয়েছিলেন জেরার্ড পিকে। রোনালদো স্বমহিমায় সেখান থেকেই জালে জড়িয়েছেন বল। ওই গোলেই সমতায় ফিরেছে ম্যাচ। আর ওই গোলটাই বোধ হয় ছন্দে তুলে দিল রাশিয়া বিশ্বকাপকেই।


      
    এমনিতেই কোচ বদলের ঝামেলায় স্পেনকে নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেক। ম্যাচে তাদের শুরুটাও ছিল ভঙ্গুর। স্পেনের বিপক্ষে যেখানে বলের দখল পাওয়াই কঠিন, সেখানে শুরুতেই পর্তুগাল হয়ে গেল আক্রমণাত্মক। ৩ মিনিটে রোনালদো ডিবক্সের ভেতর ফেলে দিয়ে নিজেদের বিপদ আরও বাড়িয়ে দিলেন নাচো ফার্নান্দেজ। স্পট কিক থেকে গোল করতে মোটেই অসুবিধা হয়নি রোনালদোর। ওই গোলে করে ফেলেছেন একটা রেকর্ডও। ৪ বিশ্বকাপে গোল করা মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় এখন রোনালদো। পর্তুগিজ অধিনায়ক অবশ্য সেখানেও থামনেনি, প্রথমার্ধ শেষের আগে আরেক গোল করে দ্বিতীয়বারের মতো দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। ৪৪ মিনিটের ওই গোলের দায়টা অবশ্য ডেভিড ডি গিয়ার। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক মানা হয় তাকে, বড় আসরে বড় সময়ে গড়বড় পাকিয়েছেন। রোনালদোর শটটা হাতেই যাচ্ছিল তার, ঠিকমতো ধরতে পারেননি। গোল খেয়ে মাসুল দিয়েছে স্পেন

    এর আগে ডিয়েগো কস্তার দারুণ এক গোলে ম্যাচে ফিরেছিল লা ফুরিয়া রোহারা। বিশ্বকাপে প্রথম অন টার্গেটের শট থেকেই ২৪ মিনিটে গোলটা করেছিলেন কস্তা। এরপর ইনিয়েস্তার শট গেছে বারপোস্টে ঠিক পাশ দিয়ে, ইস্কোর শট ফিরেছে বারপোস্টে লেগে গোললাইন থেকে। প্রথমার্ধে ভালো খেলেও তাই লাভ হয়নি স্পেনের। সমতায় ফেরার পর বলের দখল ধরে রেখে গুছিয়ে উঠছিল স্পেন, কিন্তু প্রতি আক্রমণে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল পর্তুগালও। রোনালদোর পাস থেকে গুইদেস শটটা ভালোমতো করতে পারলে এগিয়ে যেতে পারত বর্তমান ইউরো জয়ীরাও। সেই আফসোস অবশ্য প্রথমার্ধের আগেই মিলিয়ে গেছে পর্তুগালের।  রোনালদোর দ্বিতীয় গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গিয়েছিল ফার্নান্দো সান্তোসের দল।

    প্রথমার্ধের টান টান উত্তেজনায় খানিকটা ভাটা পড়েছিল শুরুতে। দ্বিতীয়ার্ধের উত্তাপের শুরু ৫৫ মিনিটে। আবারও সেই কস্তা। স্পেনকে সমতায় ফেরানোর গোলে কস্তা যত না খুশি হলেন, তার চেয়ে বেশি স্বস্তি পেলেন ডি গিয়া। আরও একজন শাপমোচন করলেন ৩ মিনিট পরেই। হাফ ভলি থেকে দুর্দান্ত এক গোল করে স্পেনকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন নাচো। এরপরে খেলাটা একপেশেই হয়ে গিয়েছিল। স্পেনের পজেশন বজায় রাখা ফুটবলের কাছে অসহায়ই মনে হচ্ছিল পর্তুগালকে। ৭০ মিনিটে কস্তার শটটা বাইরে দিয়ে চলে গেলে হাফ ছেড়ে বাঁচেন রুই প্যাট্রিসিও।

    স্পেন জয়ের পথেই এগুচ্ছিল। শেষ ১২ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাত্র দুইবার জয় পেয়েছে স্পেন। আর গত দুই বিশ্বকাপে তো হেরেই বসেছিল। শেষ পর্যন্ত আর সেই জুজু কাটানো হয়নি স্প্যানিশদের। রোনালদোর ফ্রি-কিকের কাছে হার মানতে হয়েছে। ডি গিয়া নিজের জায়গা থেকে নড়ারই সুযোগ পাননি, জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখেছেন। সেই অবিশ্বাস আছড়ে পড়েছে সোচির গ্যালারিতেও, কেউ আনন্দে, কেউ বিস্ময়ে, ক্রোধে- সবাই অবাক হয়েই দেখেছেন রোনালদোর উদযাপন। গ্যালারি তো বটেই রোনালদোর এই পারফরম্যান্স তো বিশ্বকাপই মনে রাখবে অনেকদিন!

    একাদশ
    স্পেন : ডি গিয়া, নাচো, রামোস, পিকে, আলবা, বুস্কেটস, কোকে, ডেভিড সিলভা, ইস্কো, ইনিয়েস্তা, কস্তা
    পর্তুগাল : প্যাট্রিসিও, সোয়ারেস, পেপে, ফন্ট,  গুরেরো, কার্ভালহো, মৌতিনহো, ব্রুনো ফার্নান্দেস, বের্নার্দো সিলভা, গুইদেস, রোনালদো