পেরুর ফেরায় জয়টাই পেল ডেনমার্ক
ম্যাচের ৬ মিনিট বাকি থাকতে আন্দ্রে কারিওর মাইনাসে জেফারসন ফারফানের জোরালো শট। স্টেডিয়ামে আসন ছেড়ে তখন দাঁড়িয়ে অনেক পেরু সমর্থক। ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের মূল আসরে খেলতে আসা পেরু তখন সমতায় ফেরার দুয়ারে। কিন্তু হল না সেটা! দুর্দান্তভাবে শটটি ফিরিয়ে দেন ডেনিশ গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মেইকেল। শূন্যদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ফারফান-কারিওরা। বারবার দ্বারপ্রান্ত থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে লাতিন আমেরিকার দলকে। ফারফানদের এই অভিব্যক্তিই হয়ে থাকল পুরো ম্যাচের প্রতিচ্ছবি। পেরুকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের শুরুটা জয় দিয়েই করল ডেনমার্ক।
পেরুর ফেরার ম্যাচে বেশ বড়সড় এক চমক দেখিয়েছেন কোচ রিকার্ডো গারেচা। সর্বোচ্চ গোলদাতা পাওলো গুরেরোকে রেখেছিলেন বেঞ্চে। তবে শুরু থেকেই গারেচার 'প্রেসিং' ফুটবল দর্শনে ডেনিশদের চেপে ধরে তাঁর অভাবটা বুঝতে দেননি ফারফান-কুয়েভারা। প্রথম সুযোগটাও পেয়েছিল লাতিন আমেরিকার দলটিই। ১৩ মিনিটে প্রায় ২০ গজ দূর থেকে আন্দ্রে কারিওর জোরাল শটে দক্ষহাতে ফিরিয়ে দেন ডেনিশ গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মেইকেল। পেরুর 'প্রেসিং'-এ প্রথমার্ধে একেবারে খেই হারিয়ে ফেলা ডেনমার্কের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয় মিডফিল্ডার উইলিয়াম কেভিস্টের স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়া। বল দখলে এগিয়ে থাকলেও গোলের তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না গারেচার দল। পারেনি ডেনমার্কও। পুরো প্রথমার্ধে এরিকসেনের ফ্রিকিক ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগই পায়নি তারা। স্পার্সের মিডফিল্ডারের সেই শটটিও ফিরিয়ে দিয়েছেন পেরু গোলরক্ষক পেদ্রো গালেসি। প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে লিড নেওয়ার সবচেয়ে বড় সুযোগটা পেয়েছিল পেরুই। ৪৫ মিনিটে কারিওকে ডিবক্সে ফেলে দেন লার্সেন। প্রথমে আবেদন নাকচ করলেও ভিডিও রেফারির সহায়তায় ঠিকই পেনাল্টির বাঁশি দেন মূল রেফারি। পেরু সমর্থকেরা যখন দারুণ কিছুর অপেক্ষায়, তখন ১২ গজ থেকে বল পোস্টেই রাখতে পারেননি কুয়েভা।
প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক সূচনা করেছিল পেরুই। ৫৭ মিনিটে আরও এক দারুণ সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু ফ্লোরেস, কুয়েভাদের কেউই লক্ষ্যে শট নিতে না পারায় আবারও হতাশ হতে হয় তাদের। পেরুর মিসের মহড়ায় প্রতি আক্রমণে এর মিনিট দুয়েক পর ঠিকই লিড নেয় ডেনমার্ক। ৫৯ কিনিটে এরিকসেনের থ্রু পাস থেকে গালেসিকে পরাস্ত করেন ইউসেফ পলসেন। জার্সিতে প্রয়াত বাবার স্মরণে ইউসুফ না লিখে লিখিয়েছেন 'ইউরারি' (বাবার নাম)। উদযাপনের সময় হাঁটু গেড়ে দু'হাত আকাশের দিকে উঁচিয়ে গোলটা যেন বাবাকেই উৎসর্গ করলেন তিনি।
পিছিয়ে পড়েও দমে যায়নি পেরু। উলটো ৬১ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারত তারা। কিন্তু ফ্লোরেসের শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন স্মেইকেল। গোলের আশায় এর মিনিটখানেক পরই গুরেরোকে নামিয়ে দেন গারেচা। ৭৯ মিনিটে দারুণ এক ব্যাকহিল গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে গেলে দলকে সমতায় ফেরাতে পারতেন তিনিই। পুরো দ্বিতীয়ার্ধ প্রতি আক্রমণে খেলা ডেনমার্ক ৮১ মিনিটেই জয় নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু মাতিয়াস ইয়োর্গেনসেনের শট দুর্দান্তভাবে ব্লক করেন আদভিঙ্কুলা। থেমে থাকেনি পেরুও। কিন্তু ভাগ্য একেবারেই সহায় হয়নি তাদের। ইস্পাতদৃঢ় ডেনিশ রক্ষণের কাছে শেষমেশ খালি হাতেই ফিরতে হল গুরেরোদের।