২২ গজের সেলুলয়েড : এবার দক্ষিণ আফ্রিকা
ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!
‘অপরাজিত’ ম্যাচসেরা
১৫ ম্যাচ খেলে দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচসেরা হলেন সৌম্য সরকার। প্রথমবার হয়েছিলেন শেষ পাকিস্তান সিরিজের শেষ ম্যাচে। সেবার করেছিলেন অপরাজিত ১২৭ রান। মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ম্যাচ জেতানো ইনিংস এনে দিল আবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এবার করলেন অপরাজিত ৮৮। পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসে মেরেছিলেন ৬টি ছয়ের সাথে ১৩টি চার। আজ মারলেন ওই ১৩টিই চার, এবার অবশ্য একটি ছয়।
নাসিরের মাশরাফি ছোঁয়া
এই নাসির হোসেনকেই একসময় ডাকা হতো ‘মিস্টার ফিনিশার’ হিসেবে। সঙ্গে টুকটাক বোলিং। মাশরাফি অধিনায়ক হওয়ার পর বোলার নাসিরের ‘কদর’ বেড়ে গেল! ম্যাশ তো বলেই বসলেন, নাসিরই দেশসেরা অফস্পিনার!
মোট ৫২টি ম্যাচ খেলেছেন নাসির, উইকেট ১৫টি। আর মাশরাফির অধিনায়কত্বে খেলেছেন ৯টি ওয়ানডে, উইকেট ১০টি! সবমিলিয়ে গড় ৪১.২৬, ম্যাশের অধিনায়কত্বে সেই গড়ই নেমে আসে ২৬.৬০ এ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তো ক্যারিয়ার সেরাই বোলিং করলেন বাংলাদেশের ''ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম''! রাইলি রুশো, ফ্যাফ ডু প্লেসি আর কাইল অ্যাবোট, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুশো'র নীচে বেঁধে রাখার অনেক বড় কৃতিত্ব তো নাসিরেরই। মাশরাফিকেও নিশ্চয়ই এ কৃতিত্বের ভাগ দিতে চাইবেন নাসির!
উড়ন্ত রুবেল
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জয়ে আপনি এরকম কয়েকটি বল মনে রাখতে পারেন। ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প ছত্রখান, এক হাত উঁচিয়ে বীরবেশে রুবেল হোসেন! বাংলাদেশের জয় মানেই যেন অন্য এক রুবেল। ক্যারিয়ার গড় ৩৩.১৪ হলেও বাংলাদেশের জেতা ম্যাচে রুবেলের গড় ২১.৯১।
হাশিম আমলাকে অফস্ট্যাম্পের বাইরের থেকে ভেতরে ঢোকানো বলে বোল্ড করলেন, অফস্ট্যাম্পের ওপরের দিকে লেগে গোত্তা খেল স্ট্যাম্প, যে কোন পেসারের কাছে মধুরতম এক দৃশ্য! সংগে রুবেলের একহাত উঁচিয়ে সেই উদযাপন, বাংলাদেশের দর্শকের কাছেও আরো মধুর দৃশ্য!
মাহমুদুল্লাহর প্রত্যাবর্তন
বিশ্বকাপে টপঅর্ডারে যেন পুনর্জন্ম হয়েছিল তাঁর। তবে বিশ্বকাপের পর হারিয়ে খুঁজছিলেন নিজেকে, ব্যাট হাতে, বল হাতেও। তবে এবার যেন ‘স্বরূপে’ ফিরলেন মাহমুদুল্লাহ, ব্যাট এবং বল হাতে! ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে ডেভিড মিলারের উইকেট, পরে হাফসেঞ্চুরি, সৌম্যের সঙ্গে ম্যাচ জেতানো জুটি!
মাহমুদুল্লাহর এই রূপই তো দেখতে চায় বাংলাদেশ!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, আবারও!
না, এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেনি বাংলাদেশ। তবে ভারত সিরিজে দ্বিতীয় ওয়ানডে জয়ের পর ‘নিশ্চিত’ হয়েছিল একবার। সমীকরণ ছিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা, দুই সিরিজের একটি ম্যাচ জিতলেই ২০১৭ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস যাত্রা নিশ্চিত বাংলাদেশের। ভারতের সঙ্গেই প্রথম দুই ওয়ানডে জিতে তাই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে সংশয় ছিল না। তবে আগস্টে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পাকিস্তান সিরিজে তৃতীয় দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগমনই বাগড়া বাধায় এতে! নতুন হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে জিততে হতো একটি ম্যাচ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতে বাংলাদেশ পূরণ করলো সেই সমীকরনের হিসাব! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবারও নিশ্চিত বাংলাদেশের জায়গা, বাদ পড়তে হবে পাকিস্তান বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে কোন একটিকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার অচেনা, মাশরাফিদের চেনা স্বাদ!
এর আগে একটি ম্যাচই বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০৭ সালে গায়ানায়, বিশ্বকাপের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে! দক্ষিণ আফ্রিকার সেই একাদশের একজন ছাড়া কেউই আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন না এখন। সেই এবি ডি ভিলিয়ার্সও নেই বাংলাদেশের সাথে ওয়ানডে সিরিজে। দক্ষিণ আফ্রিকার সবার কাছেই তাই বাংলাদেশের কাছে হারের স্বাদটি অচেনা ছিল এতদিন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর অভিজ্ঞতা আছে, মানে গায়ানার সে ম্যাচেও খেলেছিলেন এই বাংলাদেশের চারজনঃ মাশরাফি, সাকিব, তামিম ও মুশফিক।