জার্মানদের হতভম্ব করে জিতেই গেল মেক্সিকো
জুন ২, ১৯৮৫। ৩৩ বছর আগে এই একবারই জার্মানদের হারাতে পেরেছিল মেক্সিকো। আজকের প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই গত বছর কনফেডারেশনস কাপের সেমিফাইনালে ৪-১ গোলে হেরেছিল ‘এল ত্রি’রা। আজও ফেভারিট ছিল জোয়াকিম লো’র দলই। কিন্তু টুর্নামেন্টটা যখন বিশ্বকাপ, তখন যে কেউ হারাতে পারে যে কাউকেই। বহুল আওড়ানো এই বুলিটাই যেন সত্য প্রমাণ করল মেক্সিকো। হার্ভিং ‘চাকি’ লোজানোর একমাত্র গোলে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ১-০ গোলে হারিয়েছে হুয়ান কার্লোস অসোরিওর দল। দুর্দান্ত রক্ষণের কাছেই হার মেনেছে মুলাররা। ২০১০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্পেনের কাছে হারের পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে অপরাজিত আছেন 'ডি ম্যানশ্যাফট'রা। ১৯৮৬ সালের পর এবারই কোনো বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে গোল হজম করল জার্মানরা।
আক্ষরিক অর্থেই ম্যাচের শুরু থেকেই জার্মানদের রীতিমত টুঁটিই চেপে ধরেছিল মেক্সিকো। ২ মিনিটে কার্লোস ভেলার থ্রু পাস থেকে ডিবক্সে নয়্যারকে একা পেয়ে যান লোজানো। কিন্তু দুর্দান্ত এক ব্লকে মেক্সিকোকে নিশ্চিত গোলবঞ্চিত করেন জেরোম বোয়াটেং। শুরুতেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এভাবে নাড়িয়ে দেওয়ায় মেক্সিকোর সমর্থকেরাও স্বপ্নে বুঁদ অভূতপূর্ব কিছুর। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে ‘ডাবল পিভোট’ মিডফিল্ড খেলিয়েও ভেলা-লোজানোদের গতির কাছে রীতিমত অসহায়ই মনে হয়েছে জার্মানদের। বিশেষ করে জার্মানদের ডানপ্রান্তে কিমিখ বারবার উঠে যাওয়ায় ফাঁকা জায়গা পেয়ে তাদের বেশ ভুগিয়েছেন লোজানো। আক্রমণেও জার্মানরা ছিল বর্ণহীন। গোছানো আক্রমণের চেয়ে ক্রস বা বক্সের বাইরে থেকে শট নেওয়াতেই ব্যস্ত ছিলেন ক্রুসরা।
প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার আক্রমণভাগে সিদ্ধান্তহীনতায় গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মেক্সিকো। গোলের সামনে এমন নেতিয়ে পড়ায় ডাগআউটে অসোরিওর হাত-পা ছুঁড়ে অসন্তোষ প্রকাশও ছিল দেখার মত। তবে ৩৫ মিনিটে আর শেষরক্ষা হয়নি জার্মানদের। কপালটা পুড়েছে সেই প্রতি আক্রমণেই, রক্ষণের ডানপ্রান্তের সেই ফাঁকা জায়গা দিয়েই। চিচারিতোর থ্রু পাস থেকে মেসুত ওজিলকে কাটিয়ে নয়্যারকে একা পেয়ে যান লোজানো। ডানপায়ের জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। লুঝনিকিতে তখন কান পাতা দায়। অবশ্য প্রথমার্ধের শেষদিকে আরেকটু হলেই সমতায় ফিরেছিল জার্মানি। ৩৯ মিনিটে টনি ক্রুসের ফ্রিকিক দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া। আজ যেন গোল না খাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন এই গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধেও মেক্সিকোর প্রতি আক্রমণের সামনে বারবার হিমশিম খাচ্ছিল জার্মানি। কিন্তু আবারও সেই ‘ডিসিশন মেকিং’-এর ভুলে নয়্যারকে আর পরাস্ত করতে পারেনি তারা। দ্বিতীয়ার্ধের বাকিটা সময় জার্মান আক্রমণজোয়ার সামলাতেই ব্যস্ত ছিল মেক্সিকো। ডিফেন্স আরও জমাট করতে ভেলাকে উঠিয়ে মিডফিল্ডার এডসনকে নামিয়ে দেন অসোরিও। লোও কম যাননা। গোলের আশায় খেদিরার বদলে নামিয়ে দেন রয়েসকে। কিন্তু সমতায় আর ফিরতে পারেনি জার্মানরা। মুলার-ভার্নারদের বিপক্ষে রীতিমত দুর্গই হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মরেনো-সালসিদোরা। দ্বিতীয়ার্ধে গুয়ার্দাদোর বদলি হিসেবে নেমে মাত্র ৩য় ফুটবলার হিসেবে পাঁচ বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড করলেন রাফায়েল মার্কেজ।
৮৮ মিনিটে আরেকটু হলেই দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন বদলি মারিও গোমেজ। কিন্তু কিমিচের ক্রস থেকে তার হেড চলে যায় মেক্সিকো গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। এর মিনিটখানেক পর আরেক বদলি ফরওয়ার্ড জুলিয়ান ব্রান্ডটের আগুনে শট ওচোয়াকে পরাস্ত করলেও বাইরে দিয়ে চলে যায়। ম্যাচ শেষে রাফায়েল মার্কেজ, হাভিয়ের হার্নান্দেজদের মত অভিজ্ঞ ফুটবলারদের অশ্রু সাক্ষী, আজকের জয়টা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের জন্য।
একাদশঃ
জার্মানিঃ নয়্যার; কিমিচ, বোয়াটেং, হামেলস, প্লাটেনহার্ড; ক্রুস, খেদিরা; মুলার, ওজিল, ড্র্যাক্সলার; ভার্নার
মেক্সিকোঃ ওচোয়া; সালসিদো, আয়ালা, মরেনো, গায়ার্দো; হেরেরা, গুয়ার্দাদো; লায়ুন, ভেলা, লোজানো; চিচারিতো