• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    আত্মবিশ্বাসী সুইজারল্যান্ডে আটকে গেল ব্রাজিলও

    আত্মবিশ্বাসী সুইজারল্যান্ডে আটকে গেল ব্রাজিলও    

     

    আগেরদিন আর্জেন্টিনার ড্র, এরপর জার্মানির হার, দিন শেষ ম্যাচে আবার ব্রাজিলের পয়েন্ট হারানো- রাশিয়া বিশ্বকাপ চমক দেখিয়েই যাচ্ছে। রস্তভ অন দনে ব্রাজিল থেমেছে সুইজারল্যান্ডের কাছে। বিশ্বকাপ জিততে এসে প্রথম ম্যাচেই ধাক্কা, শুরুতে এগিয়ে হয়নি জেতা। ১-১ গোলে শেষ হয়েছে ম্যাচ।

    খেলা প্রথম আধঘন্টা বাদ দিলে পুরো ম্যাচে দারুণ খেলেছে সুইজারল্যান্ডই। তিতের ব্রাজিলের ‘সুন্দর ফুটবলের’ দেখা মেলেনি। শুরুর খানিকটা সময় অবশ্য সুইসদের চেপে ধরে ছিল ব্রাজিলের আক্রমণ। পাউলিনহো একটা সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু গোলরক্ষক ইয়ান সমার সময়মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে আঙুলের ছোঁয়ায় দলকে বাঁচিয়েছিলেন। নিজেদের ডিবক্সের ভেতর দুর্গ গড়ে তুললেও সুইসদের কপাল পুড়েছিল কৌতিনহোর ২৫ গজ দূর থেকে করা শটে। বারপোস্টে লেগে পরে ওই শট পরিণত হয়েছে গোলে। ব্রাজিলের উল্লাসে ভাসার মতো ওই একটা মুহুর্তই এসেছে ম্যাচে, বাকিটা সময় হতাশায় কেটেছে নেইমার, উইলিয়ানদের।

    ভয়ডরহীন সুইসরা গোল হজমের পরও মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। জেমাইলি, বেহরামিদের মিডফিল্ডের কাছে ব্রাজিলের তারকার ঠাসা মিডফিল্ড লাইন মনে হয়েছে বিবর্ণ। কিন্তু প্রথমার্ধে সেভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করা হয়নি। উলটো প্রথমার্ধের শেষদিকে থিয়াগো সিলভার হেড অল্পের জন্যে বাইরে দিয়ে গেলে হাফ ছেড়ে বাঁচে সুইসরা।  তবে আধিপত্য বিস্তার করার সুফল সুইসরা পেয়েছে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই। ৫০ মিনিটে কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে গোল করেছেন স্টেফান জুবের। সুইসরা যেভাবে খেলছিল তাতে ওই গোল তাদের প্রাপ্যই ছিল। কিন্তু গোলের একেবারে সামনে ব্রাজিল ডিফেন্ডাররা যে তাকে ফাঁকায় রেখে যাবেন সেটা বোধ হয় নিজেও ভাবেননি জুবের। গোল করতে তাই তেমন অসুবিধাই হয়নি তার।

     

     

    গোল হজমের পরও জেগে ওঠা হয়নি ব্রাজিলের আক্রমণভাগের। গ্যাব্রিয়েল হেসুস বলের দেখাই পাননি তেমন, নেইমার একের পর এক ভুল পাস দিয়ে পজেশন হারিয়েছেন। দূর থেকে একটা শট সোজা গোলরক্ষকের হাতে, আর পরে একটা দুর্বল হেড ছাড়া নেইমারও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার সুযোগ পাননি। পাউলিনহোর জায়গায় নামা রেনাটো আগুস্তো আর উইলিয়ানও বলার মতো কিছুই করতে পারেননি। রাইটব্যাকে নামা দানিলোকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি মাঠে, আরেক ফুলব্যাক মার্সেলোকেও কড়া পাহারায় রেখেছিলেন সুইস অধিনায়ক স্টেফান লিচস্টেইনার। রক্ষণ সামলে মাঝমাঠে বল পজেশন বজায় রাখার কাজটা করেছেন জেমাইলি, বেহরামি আর শাকা মিলে। শাকিরি আর সেফেরোভিচ মিলে বেশ কয়েকবার সংশয়েই ফেলে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের রক্ষণকে। মন্দের ভালো হিসেবে অবশ্য থিয়াগো সিলভার নির্ভুল রক্ষণ ভরসা যোগাতে পারে সেলেসাওদের।  তবে যে আক্রমণভাগ নিয়ে ব্রাজিলের আশা, তারাই হতাশ করেছেন। পুরো ম্যাচে মাত্র ৪ বার গোলে শট করতে পেরেছে তিতের দল।

    দ্বিতীয়ার্ধে সুইসদের রক্ষণে প্রথমবার ভীতি ছড়াতে ব্রাজিলের অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭০ মিনিট পর্যন্ত। সে দফায় অবশ্য কৌতিনহো সমারকে চমকে দিতে পারেননি। অনেক বাইরে দিয়ে গেছে তার হাফ ভলি। এর মিনিট চারেক পর আকাঞ্জির বিপক্ষে একটা পেনাল্টির আবেদন করেছিলেন হেসুস। সেই ডাকেও সাড়া পাননি। তার জায়গায় নেমেই অবশ্য রবার্তো ফিরমিনো কাজের কাজটা করে ফেলেছিলেন প্রায়, কঠিন অ্যাঙ্গেল থেকে চেষ্টা শট করেছিলেন সোজা গোল বরাবর। শটটা ওপর দিয়ে গেছে, কিন্তু ওইটুকু চেষ্টাই তো এতোক্ষণ করতে পারছিল না ব্রাজিল। ফিরমিনো এর চেয়ে ভালো সুযোগও পেয়েছিলেন। ৯০ মিনিটে হেডে প্রায় গোলটা করেও ফেলেছিলেন, কিন্তু সমারে আটকে গেছেন তিনিও। আক্রমণের খেলোয়াড়রা ব্যর্থ হলেও সুইস গোলরক্ষককে আরেকটু হলেই বোকা  বানিয়ে ফেলেছিলেন মিরান্ডা। ৯১ মিনিটে শটটা মারলেন নামিয়েই, দিক নিশানাও ভুল ছিল না। সেই শট গেল বারপোস্টের ঠিক পাশ দিয়ে। ভাগ্যটাও সহায় হলো না সেলেসাওদের।

    ব্রাজিলের হতাশ হওয়ার দিনটা অবশ্য দারুণ গেলো ভ্লাদিমির পেটকোভিচের দলের। বিশ্বকাপ জিততে আসা একটা দলের বিরুদ্ধে পুরো ৯০ মিনিট তারা যেভাবে লড়ে গেছে সেটা গ্রুপের বাকি দেশগুলোর জন্য সতর্কবার্তাই। রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণভাগ- সব মিলিয়ে সাজানো গোছানো এক দল। আত্মবিশ্বাস আর অভিজ্ঞতার সবটুকু কাজে লাগিয়েই ব্রাজিলের সঙ্গে জয়ের সমান ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ল সুইসরা।   

     একাদশ
    ব্রাজিল :
    অ্যালিসন, সিলভা, মিরান্ডা, মার্সেলো, দানিলো, কাসেমিরো, কৌতিনহো, পাউলিনহো, উইলিয়ান, হেসুস, নেইমা

    সুইজারল্যান্ড : সোমার, লিচস্টেইনার, আকিঞ্জি, রদ্রিগেজ, শার, শাকা, বেহরামি, জুবের, জেমাইলি, শাকিরি, সেফেরোভিচ