'মিরাকলের' খোঁজে সন
সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় সুইডেনের সঙ্গে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ দক্ষিণ কোরিয়ার। তবে হিউ-মিন সনের জন্য এই বিশ্বকাপের চেয়েও বড় একটা টুর্নামেন্ট আসছে সামনে। এশিয়ান গেমস! যেটা হবে এ বছরের আগস্টে, ইন্দোনেশিয়ায়।
টটেনহাম তারকার সময় যে ফুরিয়ে আসছে। দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকেই বাধ্যতামূলকভাবে ২১ মাস সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেটা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায়, এশিয়ান গেমসে ভাল করা। বিশ্বকাপ সাফল্য যে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য এখন মিরাকলের মতো!
সন বুন্দেসলিগায় যোগ দিয়েছিলেন কৈশোরেই। বিশ্বজুড়ে এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে উঠেছেন তিনি। তবে জাতীয় দলের হয়ে তেমন বড় কোনও অর্জন না থাকলে দুই বছরের (এ সময়টা কম-বেশি হতে পারে) মধ্যে তাকে দেশে ফিরতে হবে। যোগ দিতে হবে সামরিক দায়িত্বে। চুল ছাঁটাতে হবে, মাসিক ১০০ ইউরো পাবেন জীবন ধারণের জন্য। খেতে হবে শুধু ইন্সট্যান্ট নুডলস, সেটাও দ্রুত গতিতে।
এই অলিম্পিক পদক বা এশিয়ান গেমসের পদক জয়েই সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া সম্ভব। ২০০২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে দক্ষিণ কোরিয়ানরা অব্যাহতি পেয়েছিলেন। তবে এবারের গল্পটা ভিন্ন। বাছাইপর্বে ধুঁকেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সুইডেন, মেক্সিকো ও জার্মানির সঙ্গে একই গ্রুপে থেকে প্রথম পর্ব পেরুনোই বেশ মুশকিল।
সন অবশ্য সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে কোয়ার্টার ফাইনালে হন্ডুরাসের সঙ্গে হেরে বিদায় নিয়েছিলেন চোখের জলে। বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন সেবার। ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান গেমসই তাই শেষ সুযোগ সনের।
এই শেষ সুযোগটা অবশ্য ঝামেলা তৈরি করবে টটেনহাম হটস্পারের জন্যও। ২০১৪ সালে এশিয়ান গেমস ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্ট, তিনজন খেলতে পারতেন যে কোনও বয়সী। সন তখন বায়ার্ন লেভারকুসেনে, তবে ফিফা স্বীকৃত টুর্নামেন্ট নয় বলে সনকে অব্যাহতি দেয়নি তারা। দলবদলের বাজারে লেভারকুসেনকে এই সিদ্ধান্ত হয়তো বেশ ক্ষতি করিয়েছে। আর সন দূর থেকে দেখেছেন তাদের সতীর্থদের উল্লাস, একটা প্রজন্ম ২১ মাসের সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছে মাত্র চার মাসের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়েই।
এবার স্পার্সদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। সন অবশ্য ইন্দোনেশিয়ায় যেতে প্রস্তুত। দক্ষিণ কোরিয়ার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ কিম-হাক বিওমও চান, সন এ টুর্নামেন্টে খেলুন। “এশিয়ান গেমসে খেলতে সনের ইচ্ছা প্রবল। তবে তার আগে বিশ্বকাপ। সনকে বলেছি, এশিয়ান গেমসের জন্য দেখা হওয়ার আগে সে যাতে বিশ্বকাপে ভাল খেলে। এটা স্পর্শকাতর ইস্যু।”
তবে ঝামেলার এই শেষ নয়।
২০১৯ এশিয়ান কাপ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, জানুয়ারিতে। এই মহাদেশের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট, যেটা আবার ফিফা স্বীকৃতও। দক্ষিণ কোরিয়ার তাই সনকে ডাকার অধিকার আছেই। তবে রাশিয়ায় জুন জুলাইয়ে বিশ্বকাপ, এরপর আগস্টের বেশিরভাগ সময়জুড়েই এশিয়ান গেমস, জানুয়ারিতে এশিয়ান কাপ- টটেনহামের মতো ক্লাব বেঁকে বসতেই পারে!
এশিয়ান গেমসে খেলা ফুটবলারদের তাই জানুয়ারির টুর্নামেন্টে নাও ডাকতে পারে দক্ষিণ কোরিয়া। আর তেমন হলে আবার খেপে উঠবে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন, তাদের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে বড় তারকারা খেলুক- তাদের আশা তো এমনই!
তবে সনের হাতে অবশ্য বিকল্প আছে আরও। সেসব আরও ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া বয়ে আনতে পারে।
২০১২ সালে পার্ক চু-ইয়ং ঘোষণা দিয়েছিলেন, ১০ বছরের জন্য সামরিক দায়িত্ব নেওয়া স্থগিত করছেন তিনি। ফ্রান্সে মোনাকোর হয়ে তিন বছর খেলেছিলেন, তার আইনজীবী এই সুযোগটাই নিয়েছিলেন। তবে প্রতিক্রিয়া এমনই ভয়ঙ্কর ছিল, পার্ককে দেশে ফিরে ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে হয়েছিলেন।
সে সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা পার্ক জি-সুংয়ের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন চু-ইয়ং। সেই জনপ্রিয়তা আর কখনোই ফিরে পাননি তিনি। ধনী আর বিখ্যাতদের এমন অনেক অজুহাত দেখিয়ে দায়িত্ব পালন স্থগিত করা নিয়ে রীতিমতো ক্লান্ত দক্ষিণ কোরিয়ানরা। র্যাপার এমসি মং ২০১০ সালে ইচ্ছা করে দাঁত তুলিয়েছেন দায়িত্ব পালন না করতে। তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তবে ক্যারিয়ারটা আর দাঁড় করাতে পারেননি তিনি।
পেশাদার ক্যারিয়ারে বেশিরভাগ সময়ই ইউরোপে খেলেছেন সন। গুজব আছে, পার্ক চাইলেই তার খ্যাতি কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইতে পারেন। তবে তিনি এমন করবেন, এটা মানতে পারেন না অনেকেই। এশিয়ান গেমসে পদক জেতাটাই বরং সহজ রাস্তা তার জন্য।
তবে তার আগে বিশ্বকাপ। সুইডেনের সঙ্গে ম্যাচ দিয়েই হয়তো শুরু হতে পারে এক অসম্ভব যাত্রার। যে যাত্রার শেষটা হতে পারে মিরাকল দিয়ে। যে মিরাকল সমাধান দেবে অনেক সমস্যার। যে মিরাকল সনকে দিতে পারে মুক্তি!
তথ্যসূত্র ও ছবি কৃতজ্ঞতা- দ্য গার্ডিয়ান/এএফপি/গেটি ইমেজেস