পানামাকে বিশ্বকাপে "স্বাগত" জানালেন লুকাকুরা
জাতীয় সঙ্গীতের সময় কেঁদেই দিলেন রোমান তরেস। পানামার প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসার অনুভূতিটা ফুটে উঠলো তাতেই। প্রথমার্ধে বেলজিয়ামকে আটকে রাখলেন তরেস-পেনেডোরা। রাশিয়া বিশ্বকাপ হয়তো তখন অপেক্ষা করছে আরেকটি চমকের। তবে বেলজিয়ামের যে আক্রমণ নিয়ে এতো কথা, সেই আক্রমণভাগ ঝলক দেখালো ঠিকই। রোমালু লুকাকুর জোড়া গোলের সঙ্গে ড্রাইস মেরটেনসের স্কোরে পানামাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে "স্বাগত" জানিয়েছে রেড ডেভিলরা।
প্রথমার্ধে বেলজিয়াম আক্রমণকে বলতে গেলে একা হাতেই রুখে দিয়েছিলেন পানামা গোলরক্ষক জেইমি পেনেডো। একদিকে বেলজিয়ান আক্রমণ, অন্যদিকে পেনেডো। ৮ মিনিটে কারাসকো, ৩৮ মিনিটে হ্যাজার্ড, ৩৯ মিনিটে লুকাকুর অন-টার্গেটের শট আটকে দিয়েছেন তিনি। কেভিন ডি ব্রুইনের ক্রসের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন রোমালু লুকাকু, বলতে গেলে তার মুখের সামনে থেকে বলটা ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন বাছাইপর্বে পানামার নায়ন রোমান তরেস। ৬০ শতাংশ বল পজেশন নিয়েও তাই প্রথমার্ধে সাফল্যের মুখ দেখেনি বেলজিয়াম।
তিন বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডের মাঝে ছিল সমন্বয়ের অভাব, তাদেরকে প্রয়োজনীয় জায়গাও দেয়নি পানামার রক্ষণ। আক্রমণ থেকেও দারুণ সমর্থন পেয়েছে পানামার রক্ষণ, মাইকেল মুরিলো ও এরিক ডেভিস কাজ করেছেন রক্ষণের। পুরো বিপরীত চিত্র ছিল বেলজিয়ামে, আক্রমণের উইং-ব্যাকে থমাস মুনিয়ের ও ইয়ারিক কারাসকো যোগান দিতে পারেননি তেমন। অনেকটা সময় জুড়ে খেলা হয়েছে পানামার অর্ধেই, বেলজিয়ামের ডি-বক্সে পানামা প্রথমবার ঢুকেছে ৩৪ মিনিটে গিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে বাঁধ ভেঙেছে বেলজিয়াম, ব্রেকথ্রু পেয়েছে প্রথমার্ধের শুরুতেই। ৪৭ মিনিটে পানামার ডিফেন্ডারের মাথা থেকে পাওয়া বলে দারুণ এক ভলি মেরটেনসের, এবার পেনেডোরও করার ছিল না কিছুই। বাঁ কর্নার দিয়ে ঢুকেছে বল, পানামা বিশ্বকাপে প্রথম গোল হজম করেছে তাতেই।
সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল পানামা, এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রথমার্ধে চেয়ে চেয়ে খেলা দেখা বেলজিয়ান গোলরক্ষক কোর্তোয়া। মাইকেল মুরিলোর শট আটকে গেছে কোর্তোয়ার পায়ে।
এরপর ২২ মিনিটের অপেক্ষা, ৬৯ মিনিটে একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ঢুকেছিলেন ডি ব্রুইন, ডান বুটের বাইরের অংশ দিয়ে করা বাঁকানো ভলি লুকাকুর মাথায়। ভিএআরে অফসাইড চেক করা হয়েছে, তবে লুকাকুর গোল তাতে আটকায়নি। বাছাইপর্বে ৯ গোল করা লুকাকু বেলজিয়ামকে এনে দিয়েছেন দ্বিতীয় গোল।
ছয় মিনিট পর ম্যাচে বেলজিয়ামের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয়টি করেছেন লুকাকু। মাঝমাঠের আগে ডি ব্রুইন ও উইটসেলের কাছে পাওয়া বলটা টেনে লুকাকুকে বাড়িয়েছিলেন হ্যাজার্ড। বাঁ পায়ে চিপ করে পেনেডোকে সুযোগ দেননি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরোয়ার্ড। প্রথমার্ধে ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই, তবে জাত স্ট্রাইকার কাকে বলে, সেটা বুঝিয়েছেন দ্বিতীয়ার্ধে। সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল হয়নি, বাছাইপর্বে বেলজিয়ামের সর্বোচ্চ গোলদাতা প্রথম ম্যাচেই দাঁড়িয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে।
শেষ মুহুর্তে মাঝমাঠ থেকে ধেয়ে আসা বলে প্রায় ভড়কে গিয়েছিলেন কোর্তোয়া, বলকে অবশ্য ঢুকতে দেননি জালে। পানামার বিশ্বকাপের উদ্বোধনটা শেষ হয়েছে বড় পরাজয়েই।
১৩তম ম্যাচে এসে প্রথম লাল কার্ড দেখার খুব কাছে চলে গিয়েছিল বেলজিয়াম-পানামার এই ম্যাচ। জাম্বিয়ান রেফারি জ্যানি সিকাজওয়ে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন মোট ৮টি। অবশ্য লালটা বের করতে হয়নি তাকে। আজ যে বেলজিয়ামের লাল রঙটাই ফুটে উঠলো সোচিতে। প্রথমার্ধে তাদেরকে ভড়কে দিতে গিয়ে পরে ঝলসে গেল পানামাই!
একাদশ
বেলজিয়াম
কোর্তোয়া, অ্যালডারউইরেল্ড, বোয়াটা, ভেট্রোনহেন, মুনিয়ের, ডি ব্রুইন, উইটসেল, কারাসকো, মেরটেনস, লুকাকু, হ্যাজার্ড
পানামা
পেনেডো, মুরিলো, তরেস, এস্কোবার, ডেভিস, গোমেজ, গদয়, বার্সেনাস, কুপার, রদ্রিগেজ, পেরেজ