কেইন সেভড দ্য কুইন
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে নিয়ে মাতামাতি ছিল না খোদ ইংল্যান্ডেই। ব্যাপারটা খটকা লাগার মতোই। তরুণ দল, তরুণ কোচ, তাদের অধিনায়কও তরুণ- দলের অনভিজ্ঞতা আর অতীত ইতিহাসের কথা মাথায় রেখেই বোধ হয় বাস্তবতা বুঝতে পেরেছিল ইংলিশ সমর্থকেরা। তবে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে আজকের জয়ের পর আবারও ইংলিশ সমর্থকদের প্রত্যাশা ফুলে ফেলে উঠতেই পারে। নতুন দল নিয়ে নতুন এক ইংল্যান্ডকেই দেখা গেল রাশিয়ায়। প্রথমবারের মতো যোগ করা সময়ের গোলে জিতল থ্রি লায়ন্সরা। ইংলিশদের অনুপ্রেরণা যোগালেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন, শুরু করেছিলেন তিনি, শেষও করেছেন তিনি। তার জোড়া গোলেই তিউনিসিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড।
বিশ্বকাপে ইংলিশদের সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ, প্রথম ম্যাচ, সেখানেই অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে তার। হ্যারি কেইন দায়িত্বটা পালন করলেন ভালোমতোই। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তুলনামূলক ছোট দলগুলো এবার শুরু থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে অবশ্য সেটা হলো না। শুরু থেকেই আক্রমণে সুযোগ তৈরি করতে থাকলো ইংলিশরা। কেইনের ১১ মিনিটের প্রথম গোলের আগেই গোটা দুই সুযোগ পেয়েছিল তারা। তার একটা ঠেকাতে গিয়েই তিউনিসিয়ার গোলরক্ষক ইনজুরিতে পড়েন। পরে মাঠও ছাড়তে হয়েছে তাকে, কিন্তু সেটা গোল হজমের পরই। কর্নার থেকে জন স্টোনস হেড করেছিলেন, লাফিয়ে পড়ে ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন আহত মউয়েজ হাসেন। ঠিক সময় ঠিক জায়গায় ছিলেন কেইন, ফিরতি বলই তিউনিসিয়ার জালে। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত শুরু ইংল্যান্ডের।
গোল পাওয়ার পর আরও ভয়ঙ্কর ইংল্যান্ডের কেভিন ট্রিপিয়ের আর হ্যারি ম্যাগুয়ের। সেট পিস থেকেই সুযোগগুলো বেশি পাচ্ছিল ইংল্যান্ড। তবে গোল করতে না পারায় খুব বেশি হতাশ হওয়ার কারণও ছিল না তেমন কেইনদের। যেভাবে খেলে যাচ্ছিল, তাতে দ্বিতীয় গোলটাও সময়ের ব্যাপারই ছিল তাদের জন্য। কিন্তু সেই স্বস্তি হুট করেই উধাও হয়ে গেল, কাইল ওয়াকারের ছেলেমানুষীতে। ডান দিক থেকে আসা ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে কনুই মেরে বসলেন পেছন থেকে আসা বেন ইয়োসেফকে। রেফারিও বাজালেন পেনাল্টির বাঁশি। পরে স্পট কিক থেকে ফেরজানি সাসি গোল করে সমতা ফেরান ম্যাচে।
ওই একটা মুহুর্ত বাদ দিলে প্রথমার্ধটা ছিল ইংল্যান্ডের। ৩৯ আর ৪২ মিনিটে দারুণ দুইটি সুযোগ পেয়েছিলেন স্টোনস আর লিনগার্ড। দুইজনই ব্যর্থ হয়েছেন, পরেরজন ফিরেছেন বারপোস্টে বাঁধা পেয়ে। বিশেষ করে লিনগার্ড যতগুলো সুযোগ পেয়েছিলেন, তার অর্ধেক কাজে লাগাতে পারলেও ইংল্যান্ড এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে পারত। রাহিম স্টার্লিংও আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন ক্লাবের ফর্ম দেশের জার্সিতে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু ভালো খেলেও সুযোগ কাজে না লাগানোর হতাশা নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু করতে হয় গ্যারেথ সাউথগেটের দলের।
ইংল্যান্ড কোচের থ্রি ম্যান ডিফেন্সকে পুরো ম্যাচেই তেমন বেগ পেতে হয়নি। হ্যারি ম্যাগুয়ের আর কেইরন ট্রিপিয়ের খেলেছেন অসাধারণ। রক্ষণ সামলে মিডফিল্ডেও দলকে সাহায্য করেছেন ম্যাগুয়ের, আর ট্রিপিয়ের ডান দিক দিয়ে আক্রমণে সাহায্য করেছেন ইংল্যান্ডকে। জর্ডান পিকফোর্ডকেও তেমন একটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারেনি তিউনিসিয়া। কিন্তু সব ঠিকঠাক করেও দ্বিতীয়ার্ধের একটা সময় ঝিমিয়েই পড়েছিল ইংল্যান্ডের আক্রমণভাগ। পরে মার্কোস র্যাশফোর্ড নেমে গতি ফিরিয়ে এনেছিলেন খেলায়। ৮০ মিনিটে নামা রুবেন লফটাস চিকও ধার বাড়িয়েছিলেন আক্রমণে। তার প্রভাবটা আরও বড় হতে পারত। একটা ক্রস করেছিলেন, র্যাশফোর্ড আর লিনগার্ডের ভুল বোঝাবুঝিতে সে দফায় তিউনিসিয়ার অনিয়মিত গোলরক্ষক বেন মুস্তাফা পর্যন্তই যায়নি সেই আক্রমণ। নতুন আসরে আরও একবার পুরনো ইংল্যান্ডের গল্পটা তখনই অনেকে লিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মুস্তাফার দলের শেষ রক্ষা হয়নি। কেইন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিউনিসিয়ানদের হাসি।
কিন্তু আফ্রিকান দলটা তীরে এসে ডুবিয়েছে তরী। এই বিশ্বকাপের নিয়মিত গল্পই হয়ে গেছে শেষ মুহুর্তের গোল। সেই গল্পের সব হারানোর দলে ঢুকে গেছে তিউনিসিয়াও। কর্নার থেকে ম্যাগুয়ের লাফিয়ে উঠে হেড করেছিলেন, পরের হেডে মুস্তাফার জালে বল, হ্যারি কেইনের গোল। বিশ্বকাপে এমন শুরুই তো চেয়েছিলেন কেইন!
একাদশ
ইংল্যান্ড : পিকফোর্ড, ম্যাগুয়ার, স্টোনস, ওয়াকার, ট্রিপিয়ের, অ্যালি, হেন্ডেরসন, লিনগার্ড, ইয়াং, স্টার্লিং, কেইন
বদলি : র্যাশফর্ড, লফটাস চিক, ডায়ার
তিউনিসিয়া : হাসেন, মালাউল, ব্রন, ইয়োসেফ, মেরিয়াহ, স্খিরি, বাদ্রি, সাসি, বেন ইয়োসেফ, খাজরি, স্লিতি
বদলি : বেন মুস্তাফা, বেন আমর, খালিফা