দশ জনের কলম্বিয়াকে হারিয়ে জাপানের ইতিহাস
ব্রাজিল বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে কলম্বিয়ার কাছে ৪-১ গোলে হেরেছিল জাপান। গত বিশ্বকাপটা জাপানের গেছে হতাশায়, কোনো ম্যাচ না জিতেই। চার বছর পর প্রথম ম্যাচেই কলম্বিয়াকে পেয়ে প্রতিশোধই নিল জাপান। দশ জনের কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ব্লু সামুরাইরা। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দলকে হারানো প্রথম এশিয়ান দলও তারা।
কলম্বিয়ার শুরুটাই ছিল বাজে। ম্যাচের তিন মিনিটের ভেতর লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন কার্লোস সানচেজ। অপরাধটা ছিল গুরুতরই, কিন্তু ইচ্ছা করেই করেছিলেন কি না সেটা কেবল তিনিই জানেন। ইয়ুয়া ওসাকার শট প্রথমে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ডেভিড অস্পিনা। কলম্বিয়া গোলরক্ষকের ফেরানো বল শিনঝি কাগাওয়ার পায়ে, আবার নিলেন শট, গোলের দিকেই এগুচ্ছিল সেটা। সানচেজ লাফিয়ে উঠে বনে গেলেন গোলরক্ষক, বল লাগল হাতে। পেনাল্টি, সঙ্গে লাল কার্ড। স্পট কিক থেকে জাপানকে এগিয়ে দিলেন সিনঝি কাগাওয়া। সেখান থেকে কলম্বিয়া অবশ্য ফিরে এসেছিল, কিন্তু একজন কম নিয়ে খেলে শেষ পর্যন্ত আর জেতা হয়নি তাদের।
আরও পড়ুন ঃ বিশ্বকাপে কাটল লাল কার্ড খরা
৩ মিনিটের মধ্যে এক গোল পিছিয়ে আর একজন কম নিয়ে বিপদে পড়ে যায় কলম্বিয়া। পুরো ফিট না থাকার কারণে শুরুর একাদশে ছিলেন না কলম্বিয়ার গোল্ডেন বয় হামেস রদ্রিগেজ। গতবার রাদামেল ফ্যালকাওয়ের না থাকাটা বুঝতেই দেননি তিনি। ফ্যালকাও হামেসকে প্রতিদানটা প্রায় দিয়েই ফেলেছিলেন প্রথমার্ধে। ১৩ আর ৩৭ মিনিটে দুইবার মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বলে বুট ছুঁয়েছিলেন। কিন্তু একবারও মনমতো নাগালটা পাননি, তাই গোলরক্ষক এইজি কাওয়াশিমাকেও অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি। আক্রমণে ধারালো মনে হলেও প্রতি আক্রমণে জাপানকে সামলাতে কলম্বিয়ার দুর্দশা বোঝা গিয়েছিল শুরুতেই। তাই ম্যাচের আধঘন্টা পেরুতেই হোসে পেকারম্যানকে কঠিন একটা সিদ্ধান্তই নিতে হলো, হুয়ান কুয়াদ্রাদোকে উঠিয়ে উইলিয়াম বারিয়স্কে নামিয়ে দিলেন তিনি। তাতে কলম্বিয়ার আক্রমণ হয়ে গেল আরও সাদামাটা।
তবে প্রথমার্ধ শেষের আগেই হুয়ান কিন্তেরোর দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে সমতায় ফেরে কলম্বিয়া। ডিবক্সের ঠিক বাইরে ফ্যালকাওই আদায় করে নিয়েছিলেন ফাউলটা। কিন্তেরো মেরেছিলেন গ্রাউন্ড শট, জাপানের মানব দেয়ালের নিচ দিয়ে গড়িয়ে, গোলরক্ষককেও বোকা বানিয়ে লাইন অতিক্রম করে সেই শট।
৩৯ মিনিটে সমতায় ফেরার পর অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধে আবারও জাপানের কাছে মলিন হয়ে যায় কলম্বিয়া। অস্পিনাকেও বেশ কয়েকবার বেকায়দায় ফেলে জাপান। ৫৪ মিনিটে অসাকার শট ঠেকিয়ে শুরু, পরে তাকাশি ইনুইকেও গোলবঞ্চিত করেন তিনি। ম্যাচের ঘন্টা পেরুনোর আগে শিবাসাকির ফ্রি-কিক থেকে মায়া ইয়োশিদার হেড ওপর দিয়ে না গেলে তখনই পিছিয়ে যেতে পারত কলম্বিয়া।
এরপরই হামেসকে মাঠে নামান পেকারম্যান। কিছুক্ষণ পর স্ট্রাইকার কার্লোস বাক্কাও নামেন। তবে হামেসের আগে ম্যাচে প্রভাব ফেলেন জাপানের বদলি কিয়েসুকি হোন্ডা। টানা তিন বিশ্বকাপে অ্যাসিস্ট করা প্রথম এশিয়ার খেলোয়াড় হয়ে গেছেন তিনি। ৭৩ মিনিটে তার পাস থেকেই আক্রমণের শুরুটা হয়েছিল, পরে সাকাইয়ের শট পরিণত হয় কর্নারে। সেখান থেকেই আসে জাপানের জয়সূচক গোল। হোন্ডাই নিয়েছিলেন কর্নারটা। লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করে জাপানকে এগিয়ে দেন ওসাকা।
গোল করেই দায়িত্ব শেষ করেননি জাপান স্ট্রাইকার। রক্ষণে তার একটা বড় ভূমিকা ম্যাচ জিতিয়েছে জাপানকে। ৭৮ মিনিটে হামেস আর গোলের মধ্যে বাধা ছিলেন কেবল গোলরক্ষক। হামেসের শট সময়মত ব্লক করে দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন ওসাকা। এর বাকিটা সময় মেজাজ ধরে রেখে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে জাপান।