আত্মঘাতী পোল্যান্ডের সঙ্গে সেনেগালের 'প্রথম'
চিওনেক সেখানে থাকতে চাননি।
সাদিও মানের বলটা বক্সের ঠিক সামনে পেলেন গাই। তার শটটা চিওনেকের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করলো, এতোটাই যে, সেজনি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন। পোলিশদের দুঃখগাঁথার সেই শুরু। চিওনেকের আত্মঘাতী গোল, আর শুরু সেনেগালে ভর করে রাশিয়া বিশ্বকাপে আফ্রিকার পতাকা ওড়ার। সেই সেজনি আর ক্রিকোভিয়াকের ভুলে আরেকবার এগিয়ে যাওয়া সেনেগালকে শেষ মুহুর্তের গোলেও আটকাতে পারেনি পোল্যান্ড। এ বিশ্বকাপে প্রথমা আফ্রিকান দল হিসেবে পয়েন্ট পেল সেনেগাল, প্রথম জয়টাও তাই তাদেরই। প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছে জাপান, গ্রুপ এইচটাই যেন বসেছে অঘটনের রোমাঞ্চকর পসরা সাজিয়ে।
প্রথমার্ধে দুই দলই খেলছিল প্রান্ত ঘেঁষে, প্রতি-আক্রমণে হুমকি তৈরি করলেও সেনেগাল যেন সফল হচ্ছিল না সেভাবে। প্রথম ২৫ মিনিট দুই দলই ছিল সমান-সমান। ৩৭ মিনিটে গাইয়ের সেই ব্রেকথ্রুতে সেনেগালের এগিয়ে যাওয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে নতুন শুরুর চেষ্টা ছিল পোল্যান্ডের। হাফটাইমে একটা বদলি করালেন কোচ অ্যাডাম নাওয়ালকা। তবে রবার্ট লেভানডস্কিরা জ্বলে উঠতে পারলেন না। উল্টো ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে গেল সেনেগাল। ৬০ মিনিটে সেই চাপেই আরও এলোমেলো তারা।
ক্রিকোভিয়াক বলটা ব্যাকপাস দিয়েছিলেন গোল ছেড়ে বেড়িয়ে আসা সেজনির দিকে। সেজনি লাফিয়ে উঠেও নাগাল পেলেন না, ছুটে এসে যেটা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন নিয়াং। সামনে ফাঁকা গোল, নিয়াং তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করতে ভুল করলেন না একেবারেই।
সেজনি নিশ্চয়ই তার গোলটা এমন অরক্ষিত রেখে বের হয়ে যেতে চাননি!
পোল্যান্ড এরপর প্রাণপণে চেষ্টা করে গেল। তার আগে থেকেই চেষ্টা করছিল। ৫০ মিনিটে সেট-পিস থেকে লেভানডস্কির কিক বাঁদিকে লাফিয়ে আটকে দিয়েছেন সেনেগাল গোলরক্ষক এন’দিয়াই। ৭০ মিনিটে পিজজেকের ফ্লিকটাও গেল গোলের একটু বাইরে দিয়ে। ৭৯ মিনিটে কওয়ানাস্কির হেড এন’দিয়াই ঠেকিয়েছেন আরও আয়েশে। ৮২ মিনিটে লেভানডস্কি বেরই হতে পারলেন না ডিফেন্ডারদের বলয় থেকে, বক্সের ভেতরই।
৮৬ মিনিটে গিয়ে গ্রসিস্কির ফ্রি-কিকে ক্রিশোভিয়াকের হেড লক্ষ্যভেদ করলো ঠিকই। এই বিশ্বকাপ আত্মঘাতী গোল দেখেছে আগে, শেষ মুহুর্তের নাটকীয় গোল দেখেছে- পোল্যান্ডের আশা তখন সেটারই পুনরাবৃত্তির।
তেমন কিছু হলো না। বিশ্বকাপে এই প্রথম আফ্রিকান কোনও দেশের সঙ্গে হারলো পোল্যান্ড। শেষ নয় বিশ্বকাপ ম্যাচের সাতটিতেই হারলো পোল্যান্ড। আর ২০০২ সালের বিশ্বকাপটা যেখান থেকে শেষ করেছিল সেনেগাল, ২০১৮ সালে শুরু করলো সেখান থেকেই। সেবার সেনেগালের অধিনায়ক আলিউ সিসে ডাগ-আউটে উল্লাসে মাতলেন আরেকবার।
আর ১৯৭৮ সালে পোল্যান্ডের সোনালি প্রজন্মের সাক্ষী নাওয়ালকা থাকতেই চাইলেন না বেশিক্ষণ ডাগ-আউটে। চিওনেক যেমন ওই সময়ে ওখানে থাকতে চাননি। সেজনি বের হতে চাননি। অবশ্য পোলিশদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ভাবতে তখন বয়েই গেছে সেনেগালের!
পোল্যান্ড
সেজনি, পাজদান, চিওনেক, মিলিক, ক্রিকোভিয়াক, গ্রসিস্কি, রাইবাস, ব্লাসচেকভস্কি, জিয়েলিনস্কি, পিজজেক, লেভানডস্কি
সেনেগাল
এন’দিয়াই, ওয়াগি, সানে, কৌলিবালি, সাবালি, গাই, এন’দিয়াই, সার, মানে, নিয়াং, দিওফ