• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    সালাহর স্বপ্নভঙ্গের রাতে স্বপ্নদুয়ারে রাশিয়া

    সালাহর স্বপ্নভঙ্গের রাতে স্বপ্নদুয়ারে রাশিয়া    

    ৯৩ মিনিটে ডিবক্সের সামান্য বাইরে বল পেলেন। গত মৌসুমের পুরোটাই এমন পজিশন থেকে গোল করেছেন অহরহ। কিন্তু এবার আর ঠিক হলো না। সালাহর নিরীহদর্শন শট চলে গেল পোস্টের বাইরে। রাশিয়ার বিপক্ষে সেইন্ট পিটার্সবুর্গে এই খণ্ডদৃশ্যই হয়ে থাকল ম্যাচের প্রতিচ্ছবি। গোল করেছেন ঠিকই, কিন্তু দলকে আর বাঁচাতে পারলেন না মোহাম্মদ সালাহ। এরই সাথে প্রায় নিশ্চিতভাবেই ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে এসে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হচ্ছে মিশরকে। মিশরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শেষ ষো্লোর টিকেটও প্রায় নিশ্চিতই করে ফেলল স্বাগতিকেরা। 

     

     

    ম্যাচের আগেই রাশিয়া কোচ স্তানিস্লাভ চেরচেশভ রীতিমত প্রতিজ্ঞাই করেছিলেন, মোহাম্মদ সালাহকে রুখে দেবে তার দল। সেইন্ট পিটার্সবুর্গে প্রথমার্ধে কোচের আস্থার পূর্ণ প্রতিদানই দিয়েছেন রাশিয়ার ডিফেন্ডাররা। সালাহকে তো বটেই, সাথে মিশরের আক্রমণভাগের অন্য দুই তারকা ত্রেজেগে এবং মোহসেনকেও পকেটবন্দিই করে রেখেছিলেন ইগ্নাশেভিচরা। গোল করার চেয়ে গোল না খাওয়ার দিকেই বেশি মনোনিবেশ করেছিল দু’দল। প্রথমার্ধের অধিকাংশ সময় খেলাটা হয়েছে মাঝমাঠেই, গোলের তেমন সুযোগও তৈরি করতে পারেনি তারা। সালাহদের মত রাশিয়ার আক্রমণভাগে চেরিশেভ-জুবারাও ছিলেন নিষ্প্রভ। ৪২ মিনিটে প্রথমার্ধের একমাত্র সুযোগটা পেয়েছিলেন সালাহই। কিন্তু ডিবক্সের বাইরে থেকে সালাহর বাঁকানো শট চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে।

     

    প্রথমার্ধে মিশরের রক্ষণভাগকে একেবারেই পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি তার দল। দ্বিতীয়ার্ধের আগে চেরিশভের ‘হাফ টাইম টকে’ যেন স্বরূপেই ফিরল রাশিয়া। আর তাতেই পুড়ল সালাহ এবং মিশরের ভাগ্য। ৪৭ থেকে ৬২- এই ১৫ মিনিটের রাশিয়ান ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে মিশর। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সব স্বপ্ন দুঃস্বপ্নেই পরিণত হয় মিশরের। সামেদভের শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল নিজ জালেই ঠেলে দেন মিশরের অধিনায়ক আল ফাতিহ। কিন্তু সমতায় ফেরার এক দারুণ সুযোগ ঠিকই পেয়েছিল মিশর। কিন্তু ৫৪ মিনিটে সালাহর শট দুর্দান্ত এক ব্লকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন ডিফেন্ডার ইগ্নাশেভিচ।

     

    ম্যাচের বাকিটা গল্প রাশিয়ার দুর্দান্ত আক্রমণভাগের। ৫৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন প্রথম ম্যাচের সেরা ফুটবলার চেরিশেভ। আবারও সেই সামেদভের মাইনাস থেকে বাঁ-পায়ের আলতো টোকায় এলশানাউইকে পরাস্ত করেন তিনি। টুর্নামেন্টে তাঁর তিন গোল হয়ে গেল, ছুঁয়ে ফেললেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। 

    এর মিনিট তিনেক পরই মিশরের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন প্রথম ম্যাচে রাশিয়ার আরেক বদলি গোলদাতা জুবা। ৬২ মিনিটে কুতেপভের লম্বা ফ্রিকিক বুক দিয়ে দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি। এগিয়ে আসা আলী গাবরকে কাটিয়ে ডানপায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন জুবা।  

     

     

    ৭৩ মিনিটে একটা লাইফলাইন পেয়ে যায় মিশর। সালাহকে জবনিন ফাউল করলে রেফারি প্রথমে ফ্রিকিকের সিদ্ধান্ত দিলেও ভিএআর-এর সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি দেন তিনি। ১২ গজ থেকে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে প্রথম গোল পেয়ে যান সালাহ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়ে থাকল কেবলই সান্ত্বনা। খালি হাতেই ফিরতে হল আফ্রিকার দলটিকে। আর র‍্যাঙ্কিং-এ সবচেয়ে নিচে থেকে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও সবার আগে শেষ ১৬-তে এক পা দিয়েই রাখল চেরিশভের দল।

    একাদশ
    মিশর : এল শেনাউই, ফাথি, হেগাজি, গাবর, সাফই, এল সাইড, তারেক হামেদ, এলনেনি, ত্রেজেগে, সালাহ, মোহসেন 
    রাশিয়া : আকিনফেভ, ঝিরকভ, ইগনাশেভিচ, কুতেপভ, ফার্নান্দেস, জবনিন, গাজিনস্কি​, চেরিশেভ,গলোভিন, ফেদোর স্মলভ