পর্তুগাল আর মরক্কোর মধ্যে পার্থক্য শুধু রোনালদোই
গুণতে বসতে পারেন। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ…..
পুরো ম্যাচ না, শুধু দ্বিতীয়ার্ধে মরক্কো সুযোগ পেয়েছে এক কথায় অসংখ্য। সেসব শট বা হেড ওপর দিয়ে গেছে, বাইরে বেরিয়ে গেছে, পর্তুগাল গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও দারুণ সেভ করেছেন- শুধু লক্ষ্যভেদটাই করা হয়নি মরক্কোর। আজ যে তাদের দিন নয়! আজ দিনটা পর্তুগালের, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। তার চার মিনিটে এনে দেওয়া লিডটাই তাই ম্যাচের একমাত্র হয়ে থেকেছে, মরক্কো হুমকি কাটিয়ে জিতেছে পর্তুগালই।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে দারুণ খেলতে থাকা মরক্কো অবশ্য প্রথমার্ধে রক্ষণে ছিল বেশ ভঙ্গুর। টানা দ্বিতীয় কর্নার থেকে মৌতিনহোর ক্রসে হেড করে রোনালদো ইতিহাসে ঢুকে গেছেন ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই। আগের ৩ বিশ্বকাপ মিলিয়ে রোনালদো করেছিলেন ৩ গোল, এবার দুই ম্যাচেই করলেন চতুর্থটি। পর্তুগালের হয়ে এটি তার ৮৫তম গোল, ইউরোপিয়ানদের মধ্যে আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যায় এখন সবচেয়ে এগিয়ে তিনিই। এর আগে ৮৪ গোল নিয়ে এ রেকর্ড ছিল ফেরেঙ্ক পুসকাসের।
রোনালদোর সেই গোলের পর থেকেই প্রতি-আক্রমণে নির্ভরতা বেড়ে গেছে পর্তুগালের। আর এদিকে মিস করা শুরু করেছে মরক্কো। প্রথমার্ধে অন্তত চারটি আক্রমণ বিফলে গেছে তাদের। বেনাতিয়ার হেড ব্লক করেছেন প্যাট্রিসিও, দূর থেকে করা চেষ্টাটা বেশিই দূর্বল ছিল জিয়াচের, আমরাবাত আর গেরেরোর সমন্বিত আক্রমণের পর করা পেনাল্টির আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি, ভিএআর নিয়ে একচোট বিতর্কও হয়ে গেছে ছোটখাট। যোগ করা সময়ে বেলহান্দার হেড বেনাতিয়ার সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেছে, মাথাটা ছোঁয়াতে পারলেই হতে পারত গোল।
প্রথমার্ধে লিড নিয়ে বিশ্বকাপে কোনও ম্যাচই হারেনি পর্তুগাল, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তারা ছিল বেশ ইতিবাচকই। সিলভা-ফন্টের নেওয়া কর্নার থেকে সুযোগ তৈরি হয়েছিল, গুইদেসের মিস থেকে পাওয়া বলটা অনেক ওপর দিয়ে মেরেছিলেন রোনালদো। ম্যাচে দুইটি ফ্রি-কিক পেয়েছিলেন স্পেনের বিপক্ষে ‘অতিমানব’ হয়ে থাকা রোনালদো। তবে এদিন থেকেছেন মর্ত্যেই, তার সেট-পিসের শট আটকে গেছে মরক্কোর রক্ষণের দেয়ালে।
মরক্কোর মিসের দ্বিতীয় সংস্করণ শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। তাদের আক্রমণে নাজেহাল অবস্থা পর্তুগালের প্রায়, অথচ হচ্ছে না গোল! অবশ্য আক্রমণগুলো বক্সের কাছে গিয়ে খেই হারিয়েছে বারবার, বক্সের ভেতরের সুযোগগুলোও হাতছাড়া হয়েছে সমন্বয়ের অভাবে। জিয়েচ বারকয়েক মেরেছেন ওপর দিয়ে, বেলহান্দার শট দারুণভাবে আটকে দিয়েছেন প্যাট্রিসিও। ৯০তম মিনিটে বা যোগ করা সময়েও সুযোগ পেয়েছেন জিয়েচ-বেনাতিয়ারা, তবে গোলের সিঁকেটা ছেঁড়েনি তাদের। আর দ্বিতীয়ার্ধে একটাও ‘শট অন টার্গেট’ না করা পর্তুগাল যেন বেঁচেছে হাফ ছেড়ে।
ম্যাচশেষে তাই অশ্রুজলে সিক্ত হতে হয়েছে আফ্রিকান দেশটিকে। পর্তুগালের জালে পৌঁছাতে পারলো না তারা, রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে তাই বিদায়ঘন্টাই বেজে গেছে তাদের।
এখন শুধু সেই অপেক্ষাটাই। সেই অপেক্ষা করতে করতেই মরক্কো হিসাব করতে বসে যেতে পারে, ঠিক কতটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে তারা এদিন মস্কোয়। এক, দুই, তিন...
পর্তুগাল একাদশ
প্যাট্রিসিও, সেডরিক, পেপে, ফন্ট, গুরেরো, সিলভা, কার্ভালহো, মৌতিনহো, হোয়াও মারিও, রোনালদো, গুইদেস
মরক্কো একাদশ
মোহামেদি, দিরার, দা কস্তা, বেনাতিয়া, হাকিমি, এল আহমাদি, বুসোউফা, বেলহান্দা, হারিত, বুতাইব, জিয়েচ