স্বপ্নের বিশ্বকাপ যখন দুঃস্বপ্ন
খেলায় জয় পরাজয় নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা- বহু পুরনো আপ্তবাক্য। তবে কখনও কখনও সেই অংশ নেওয়াটাই হয়ে ওঠে দুঃস্বপ্নের মত। বিশ্বকাপে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে বেশ কয়েকটি দলের। এ তালিকায় আগে থেকেই আছে সৌদি আরব, রাশিয়া বিশ্বকাপ আবার সেই তালিকায় নিয়ে যাবে তাদের?
জায়ারে, ১৯৭৪
পয়েন্ট: ০
গোল ব্যবধান: -১৪
‘৭৪ -এ প্রথম সাব-সাহারান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিল জায়ারে। কিন্তু সেবার আক্ষরিক অর্থেই কোনোমতে জান বাঁচিয়ে দেশে ফিরেছিল তারা। প্রথম ম্যাচ স্কটল্যান্ডের কাছে ২-০ এবং পরের ম্যাচে যুগোস্লাভিয়ার কাছে ৯-০ গোলের হার। স্বভাবতই রাগান্বিত দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং একনায়ক মোবুতু সিসি ঘোষণাই দিলেন, প্রাণে বাঁচতে চাইলে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে ৩ গোলের বেশি ব্যবধানে হারা যাবে না। জায়ারের কপাল বেশ ভাল, জার্জিনিয়ো-রিভেলিনোদের কাছে তারা হেরেছিল সেই ৩ গোলেই। স্বপ্নের বিশ্বকাপ দুঃস্বপ্নে পরিণত হলেও অন্তত জানে বেঁচে তো ফিরেছিল তারা।
এল সালভাদর, ১৯৮২
পয়েন্ট: ০
গোল ব্যবধান: -১২
রূপকথার মতো এক বাছাইপর্বের পর নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে এসেছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত এল সালভাদর। কিন্তু প্রথম ম্যাচে রীতিমত অপদস্থই হতে হয়েছিল তাদের। হাঙ্গেরির কাছে ১০-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল তারা, যা বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সবচেয়ে বড় হারের রেকর্ড। পরের দুই ম্যাচে অবশ্য বেশ রয়ে-সয়েই খেলেছিল তাদের প্রতিপক্ষ। বেলজিয়ামের কাছে ১-০ এবং শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে ২-০ গোলে হেরে নিজেদের একমাত্র বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় এল সালভাদর।
সৌদি আরব, ২০০২
পয়েন্ট: ০
গোল ব্যবধান: -১২
বিশ্বকাপে সৌদি আরব শুনলেই মনে পড়ে ‘৯৪-এ বেলজিয়ামকে হারানো সাঈদ আল-ওয়াইরানের দুর্দান্ত গোল। তবে এর আট বছর পরই মুদ্রার উল্টোদিকটাও দেখতে হয় তাদের। জার্মানির বিপক্ষে ৮-০ গোলে হারের পর মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়ে তারা। আর সেই হারের বৃত্ত থেকে বেরুনো হয়নি তাদের। বাকি দুই ম্যাচে ক্যামেরুন (১-০) এবং আয়ারল্যান্ডের (৩-০) কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় তাদের। ১৬ বছর পর রাশিয়া বিশ্বকাপ দিয়ে আবারও মূলপর্বে ফিরেছে তারা। তবে রাশিয়ার বিপক্ষে পারফরম্যান্স যেন জানান দিচ্ছে ‘০২-এর দলকেও ‘ছাড়িয়ে’ যাওয়ার।
চীন, ২০০২
পয়েন্ট: ০
গোল ব্যবধান: -৯
যুগোস্লাভিয়ান কোচ বোরা মিলুটোনোভিচের কারিশমায় কোরিয়া এবং জাপান বিশ্বকাপের মূলপর্বে গিয়েছিল চীন। তবে ব্রাজিল, তুরষ্ক এবং কোস্টারিকার বিপক্ষে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি দলটি। রোনালদো-রিভালদোদের জাদুতে ৪-০ গোলের হার দিয়ে শুরু হয়েছিল চীনের হতাশাময় এক বিশ্বকাপ। পরের দুই ম্যাচে ৪ গোল খেয়ে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। ‘৮৬ থেকে ‘৯৮- এই ৪ বিশ্বকাপে কোস্টারিকা, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। ‘০২ বিশ্বকাপেই প্রথমবার গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল মিলুটোনোভিচের দল।
উত্তর কোরিয়া, ২০১০
পয়েন্ট: ০
গোল ব্যবধান: -১১
এশিয়ার বাছাইপর্বে রানার-আপ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টিকেট কেটেছিল উত্তর কোরিয়া। ব্রাজিলের বিপক্ষ ২-১ গোলে হারলেও তাদের আশাজাগানিয়া পারফরম্যান্সে দারুণ কিছুর প্রত্যাশায় বুক বাঁধছিল উত্তর কোরিয়াবাসী। কিন্তু পরের ম্যাচেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের কাছে ৭-০ গোলের হারে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। শেষ ম্যাচে আইভরি কোস্টের কাছে ৩-০ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় গ্রুপপর্ব থেকেই।
তথ্যসূত্র ও ছবি কৃতজ্ঞতা- দ্য গার্ডিয়ান