কস্তার গোল এবং 'ভিএআর'-এ স্বপ্নভঙ্গ ইরানের
৮৩ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে উইঙ্গার আমিরির ক্রস। স্পেন লেফটব্যাক জর্দি আলবার ওপর দুর্দান্তভাবে লাফিয়ে উঠে হেড করলেন তারিমি। ডাগআউটে উদযাপনের জন্য তখন দু'হাত উঁচিয়ে ইরান কোচ কার্লোস কুইরোজ। স্টেডিয়ামে উপস্থিত ইরান সমর্থকদের অনেকেই আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেছেন ততক্ষণে। সময়ও যেন থেমে গেল। কিন্তু না! হল না! ভাগ্য সহায় হল ডেভিড ডি গেয়া এবং স্পেনের। তারিমির হেড চলে গেল গোলের উপর দিয়ে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ফার্নান্দো হিয়েরোর দল। ডিয়েগো কস্তার একমাত্র গোলে কাজানে ইরানকে ১-০ গোলে হারিয়েছে স্পেন। আজকের জয় নিয়ে টানা ২২ ম্যাচ অপরাজিত থাকল 'লা রোহা'রা, যা আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড। কস্তার গোলে এই বিশ্বকাপের প্রতি ম্যাচেই অন্তত এক গোলের রেকর্ডটাও থাকল অক্ষুণ্ণ।
কাজানে অনুমিত ভাবেই 'আল্ট্রা ডিফেন্সিভ' ট্যাকটিক্সের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ইরান কোচ কার্লোস কুইরোজ। রক্ষণের সময় তার ৬-৪-০ ফর্মেশন ভেদ করে ইরানের ডিবক্সে ঢুকতেই বেগ পেতে হচ্ছিল ইনিয়েস্তাদের। প্রায় ৮০ ভাগ বল পজেশন নিয়েও গোলের তেমন সু্যোগ তৈরি করতে পারেনি 'লা রোহা'রা। প্রথমার্ধের বেশিরভাগ মাঝমাঠের পাসিংয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে হিয়েরোর দলকে। প্রথম সুযোগটা পেতে ৩২ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে স্পেনকে। ডিয়েগো কস্তা হেড থেকে ডিবক্সে বল পেয়ে যান সিলভা। কিন্তু তার শট চলে যায় গোলের সামান্য উপর দিয়ে। প্রথমার্ধের শেষদিকে স্পেনের সেরা সুযোগটাও পেয়েছিলেন তিনিই। কিন্তু মাঝমাঠ থেকে তার শট দারুণভাবে ব্লক করেন ডিফেন্ডার শাফি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই পাসিংয়ের চেয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবলে মনোনিবেশ করে স্পেন। ৫০ মিনিটে কর্ণার থেকে বুস্কেটসের হেডে বল পান পিকে। কিন্তু বার্সেলোনার ডিফেন্ডারের হেড লাইন থেকে দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন ডিফেন্ডার এজাতোলাহি। ডিফেন্ডারদের মতই দুর্ভেদ্য দেয়ালই হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইরানের গোলরক্ষক বিরানভান্ড। এর মিনিট দুয়েক পরই বক্সের বাইরে থেকে বুস্কেটসের বাঁকানো শট হাওয়ায় ভেসে রুখে দেন তিনি। ফিরতি বলে গোলের সামনে থেকে ভাজকেজ শট নেওয়ার আগেই আবারও বল ফিরিয়ে দেন বিরানভান্ড। ইরানও অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র নয়। দারুণ এক প্রতি আক্রমণে আজমুনের শট চলে যায় ডি গেয়ার গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। তবে ৫৪ মিনিটে আর শেষরক্ষা হয়নি ইরানের। ইস্কোর পাস থেকে ডিফেন্ডার মাজেদ হোসেইনির ক্লিয়ারেন্স কস্তার পায়ে লেগে জড়ায় ইরানের জালে। এবারের বিশ্বকাপে লক্ষ্যে তিনবার শট নিয়েছেন কস্তা, গোল পেয়েছেন প্রতিবারই।
গোলের পর থেকে রক্ষণের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে ইরান। ৬২ মিনিটে তো সমতায়ই ফিরেছিল তারা। আজমুনের ফ্রিকিক থেকে ডিবক্সে জটলার মাঝে বল পেয়ে ডি গেয়াকে পরাস্ত করেন এজাতোলাহি। গোলের পর ইরানীয়ানদের উদ্দাম উল্লাসে মুখরিত হয়ে উঠে কাজানের বাতাস। কিন্তু ভিএআর-এর সাহায্যে অফসাইডের কারণে গোল বাতিল করেন রেফারি। মাঠ থেকে ডাগআউট বা দর্শকসারিতে- ইরানের সবারই শূন্যদৃষ্টি যেন জানান দিচ্ছিল, আর বুঝি ফেরা হচ্ছে না ম্যাচে। তবে শেষ পর্যন্ত ঠিকই লড়াই করে গেছে কুইরোজের দল। ভাগ্য সহায় হলে তারিমির হেডে আরেকটু হলেই সমতায় ফিরত ইরান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই ফিরতে হল এশিয়ার দলটিকে। তবে ভালোমতোই টিকে আছে ইরানের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা। আর স্পেনেরও দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত নয় এখনই।
একাদশ:
স্পেন: ডি গেয়া; কারভাহাল, রামোস, পিকে, আলবা; বুস্কেটস, ইনিয়েস্তা, সিলভা; ভাজকেজ, কস্তা, ইস্কো
ইরান: বিরানভান্ড; শাফি, এজাতোলাহি, পৌরালিঙ্গাঞ্জি, ওমিদ; করিম, আমিরি, মেহদি, হোসেইনি; আজমুন, রামিন