৩৮ বছর পর ইরানের মেয়েদের খেলা দেখার 'স্বাধীনতা'
বিশ্বকাপে খেলছে দেশ, সেই ম্যাচ বড় পর্দায়ও দেখানো হবে বাড়ির পাশের স্টেডিয়ামেও। তেহরানের প্রায় প্রতি ঘরের পুরুষরাই গালে পতাকা এঁকে, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে হাজির হন স্টেডিয়ামে। হয়ত বাড়িতে থাকা মেয়েটিও যেতে চায় বাবা-ভাই-স্বামীর সাথে, কিন্তু সেই ইচ্ছটা চাইলেও পূর্ণ করা সম্ভব ছিল না এতদিন। তবে প্রায় ৩ যুগ পর গতকাল ইরানের মেয়েরাও পুরুষদের সাথে খেলা উপভোগ করেছে তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামে বসেই।
অপেক্ষা ছিল প্রায় ৩৮ বছরের। ১৯৭৯ সালের ইসলামিক শাসনতন্ত্র আসার পর থেকেই ইরানের মেয়েরা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার অধিকার হারিয়েছিল। গত তিন যুগে এ নিয়ে কম প্রতিবাদ হয়নি। এই বছরের মার্চেই কথাই ধরুন, ৩৫ জন মহিলা ফুটবল ভক্ত আজাদি স্টেডিয়ামের বাইরে হাজির হলেন প্ল্যাকার্ড নিয়ে। ভেতরে চলছিল দুই ক্লাবের খেলা। ভেতরে ঢোকার অনেক চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়েই সমালোচিত হয় ইরান। এর রেশ ধরেই কিনা পরের দিন ইরানের ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি আশ্বাস দেন, খুব দ্রুতই স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারবে মেয়েরাও, সেটা হতে পারে রাশিয়া বিশ্বকাপের আগেই। আশায় বুক বাধে ইরানের মেয়েরা।
তবে বিশ্বকাপ আসলেও দলের প্রথম ম্যাচ মাঠে গিয়ে বড় পর্দায় উপভোগ করতে পারেনি মেয়েরা। ওই ম্যাচে রাশিয়াতে প্রতিবাদ করে খেলা দেখতে যাওয়া বহু ইরানি সমর্থক। অবশেষে সাফল্য আসে ২০ জুন সকালেই। তেহরানের আদালত ঘোষণা দেয়, আজাদি স্টেডিয়াম ও তাখতি স্টেডিয়ামে মেয়েরা বসে দেখতে পারবে তেহরানের মেয়েরা। সেই আনন্দ ছুঁয়ে যাওয়ার আগেই জানা যায়, স্পেন-ইরানের ম্যাচ নাকি বড় পর্দায় দেখানোই হবে না স্টেডিয়ামে!
আবারও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তেহরানের মেয়েরা। খেলা শুরুর দুই ঘণ্টা আগেই হাজারো ছেলের সাথে মেয়েরাও উপস্থিত হয় আজাদি স্টেডিয়ামের বাইরে। তাদের বিক্ষোভের মুখে খেলা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কর্তৃপক্ষ খেলা দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লাসে ফেটে পড়ে উপস্থিত মেয়েরা।
স্পেনের বিপক্ষে পুরো ম্যাচের সময়ই ছিল তাদের এই উল্লাস। দল না জিতলেও জয় হয়েছে তেহরানের মেয়েদের।