ব্রাজিলকে উদ্ধার করলেন কৌতিনহো
গোলটা ব্রাজিলের প্রাপ্যই ছিল। পুরো খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছে ব্রাজিল, আক্রমণে বারবার ভীতি ছড়িয়েছে কোস্টারিকার রক্ষণে। কিন্তু এই বিশ্বকাপের গল্পটা তো একটু অন্যরকম। বড় দলগুলোই খুঁড়িয়েছে। ৯০ মিনিট পর্যন্তও যখন ম্যাচের স্কোরলাইন গোলশূন্য, তখন বড় দলগুলোর হতাশার গল্পে যোগ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল এই ম্যাচটাও। সেখান থেকে ব্রাজিলকে রক্ষা করেছেন ফিলিপ কৌতিনহো। রবার্তো ফিরমিনোর হেডে বলটা পায়ে নামিয়ে এনেছিলেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। পেছন থেকে দৌড়ে এসে ফিলিপ কৌতিনহো শেষ পর্যন্ত কোস্টারিকার জালে জড়ালেন বল। তাতে বাধ ভাঙল কোস্টারিকার। এরপর আরও একটি গোল করলেন নেইমার। সেন্ট পিটার্সবার্গে ব্রাজিলের হতাশার গল্পটা পালটে গেল ইনজুরি টাইমে। ২-০ গোলের জয়ে ব্রাজিল অনেকটাই এগিয়ে গেল শেষ ষোলর পথে।
কৌতিনহোর গোলটা কতখানি স্বস্তির ছিল, সেটা ব্রাজিল কোচ তিতের উদযাপনেই ফুটে উঠেছে। সাধারণত আবেগ দেখান না তিনি। কৌতিনহোর গোলের পর উদযাপন করতে গিয়ে পিছলেই পড়লেন তিনি! তাতে অবশ্য আঘাত পাননি, ব্রাজিলের উৎসবে রঙ চড়েছে ওই মুহুর্তটা। অথচ কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুটা নড়বড়ে ছিল ব্রাজিলের। ১৩ মিনিটেই হোর্হে বোর্হেস ব্রাজিলকে চাপে ফেলে দিতে পারতেন। ডিবক্সের ভেতরে ভালো জায়গায় বল পেয়েছিলেন, অন টার্গেটেও মারতে পারেননি শট। কোস্টারিকার সেরা সুযোগ ছিল ওটাই। এরপর গল্পটা একপেশে। ব্রাজিলের আক্রমণ আর কোস্টারিকার ডিফেন্ডারদের রক্ষণে দুর্গ তুলে দেওয়া। দুর্গের পেছনে কেইলর নাভাস বারপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী। ২৭ মিনিটে ওয়ান অন ওয়ানে নেইমারকে সুযোগই দিলেন না। প্রথমার্ধে মার্সেলো আর কৌতিনহো বেশ কয়েকবার ডিবক্সের বাইরে থেকে শট করেছিলেন, সেগুলো নাভাসকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারেনি।
যোগ করা সময়ে কৌতিনহোর গোলে ব্রাজিলে স্বস্তি/এএফপি
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই নাভাস নামলেন আসল পরীক্ষায়। ৫০ মিনিটে একবার বারপোস্টে লাগল হেসুসের শট, বেঁচে গেলেন নাভাস, হতাশ হলো ব্রাজিল। হতাশা আরও বাড়ল যখন ফিরতি বলে কৌতিনহোর গোলমুখী শট ব্লক করলেন গাম্বোয়া। ৬ মিনিট পর আরও ভালো সুযোগ আসলো ব্রাজিলের কাছে। ডানদিক থেকে আসা ক্রসে নেইমারের শট আঙ্গুলের ছোঁয়ায় বারপোস্টের ওপরে তুলে দিলেন নাভাস। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের আক্রমণে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার পেছনে ভালো অবদান ছিল ডগলাস কস্তার। বিরতির পরই উইলিয়ানের জায়গায় মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ব্রাজিলের আক্রমণে গতি বাড়িয়েছিলেন তিনিই। ৫৮ মিনিটে আবারও সেই কস্তাই শুরু করেছিলেন আরেকটা আক্রমণ, কস্তার ক্রস এরপর পাউলিনহো বল দিলেন কৌতিনহোকে। তিনি শটও নিলেন, কিন্তু আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ালেন নাভাস। অন্যপ্রান্তে কোস্টারিকা তখন রক্ষণেই মনযোগী। তবে ৬৭ মিনিটে একটা আক্রমণ থেকে ভালো কিছুর করার সুযোগ ছিল। ব্রায়ান রুইজের ক্রস বিপদ বাড়ানোর আগেই সেটা ক্লিয়ার করেছিলেন মিরান্ডা।
অন্যপ্রান্তে কোস্টারিকার রক্ষণের ভুলে নেইমার ১৮ গজ দূর থেকেও গোলের বাইরে দিয়ে শট করলে অনেকেই ম্যাচের পরিণতি দেখে ফেলেছিলেন। সবকিছুই শেষে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তবে তার আগে ভিএয়ার ‘সুনাম’ কুড়িয়েছে কিছু। ৭৮ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করার অপরাধে ব্রাজিলকে পেনাল্টি দিয়ে দিয়েছিলেন রেফারি। পরে ভিএআর আর সাহায্যে বাতিল হয় সেই পেনাল্টি। ডিবক্সের ভেতর নেইমার নিজেই পড়ে গিয়েছিলেন।
শেষে যোগ করা সময়ের রোমাঞ্চে সব ভুলেছে ব্রাজিল। কৌতিনহো শুরু থেকেই শট করে যাচ্ছিলেন, প্রথম দুইবার মেরেছিলেন বারপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে। পরের দুইবার নামিয়ে এনেছিলেন শট, দুইবারই গোলে মেরেছিলেন। শেষে পাঁচবারের চেষ্টায় আর সুযোগ নষ্ট করেননি। ৯১ মিনিটে ব্রাজিলকে উল্লাসে ভাসিয়েছেন। আর নেইমারও পুরো ম্যাচের হতাশা ভুলেছেন শেষে গোল করে। ম্যাচ শেষে নেইমার কেঁদেছেন আনন্দে, আর সেন্ট পিটার্সবার্গে ব্রাজিলের সেই আনন্দ আছড়ে পড়েছে রিওর অলিগলিতে।
একাদশ
ব্রাজিল
ফ্যাগনার, সিলভা, মিরান্ডা, মার্সেলো, পাউলিনহো, কাসেমিরো, কৌতিনহো, উইলিয়ান, হেসুস, নেইমার
কোস্টারিকা
নাভাস, গাম্বোয়া, আকস্তা, গঞ্জালেজ, ডুরাতে, কালভো, রুইজ, বোর্হেস, গুজমান, ভেনেগাস, উরেনা