ইংল্যান্ডের ছয়ের চেয়েও দামি পানামার এক
ফেলিপে ব্যালয় কাঁদছেন। ৩৭ বছর বয়স, পানামার স্কোয়াডের সবচেয়ে বয়সী তিনি, বিশ্বকাপের পর হয়তো অবসরই নেবেন। এর চেয়ে ভাল মুহুর্ত তিনি আর পেতে পারতেন না ক্যারিয়ারে, নিশ্চিতভাবেই! তার গোলেই অর্ধেক স্টেডিয়াম উল্লাসে মাতোয়ারা, তার গোলের পর কোচ হার্নান দারিও গোমেজের প্রতিক্রিয়াটা আপনার পাষাণ হৃদয়ও কোমল করে দেবে নিশ্চিতভাবেই।
কে বলবে, এই পানামার জালে গোল-উৎসব করেছে ইংল্যান্ড? কে বলবে, ম্যাচে পানামা হজম করেছে ৬টি গোল! পানামার তাতে কিছু যায় আসে না, ব্যালয় তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম গোলটা করে তো নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক জায়গায়! শুধু নিঝনি নভগোরদ নয়, ব্যালয় নিশ্চিতভাবেই উল্লাসে ভাসিয়েছেন পুরো পানামাকেই! বিশ্বকাপে ৪র্থ বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে গোলের রেকর্ডও এখন তার।
অ্যালিভোর ফ্রি-কিকে স্লাইড করা ব্যালয়ের ছোঁয়াতে ম্যাচে ওই আনন্দের উপলক্ষ্যটা পেয়েছে পানামা, ম্যাচের ৭৮ মিনিটে। এর আগেই যা করার, তার চেয়ে বেশি করে ফেলেছে ইংল্যান্ড। হ্যারি কেইনের হ্যাটট্রিক, জন স্টোনসের জোড়া গোল, লিনগার্ডের দুর্দান্ত গোলে ইংল্যান্ড শুধু রেকর্ডই ভেঙেছে একের পর এক!
১৯৬৬ সালের পর এই প্রথম এক ম্যাচে চারটির বেশি গোল করলো ইংল্যান্ড। সেটা ছাড়িয়ে ইংল্যান্ড প্রথমবার এক ম্যাচে করেছে পাঁচ গোল, যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টেই প্রথমবারের মতো। প্রথমার্ধেই এসেছে সেই পাঁচটি গোল, বিশ্বকাপে প্রথমার্ধেই পাঁচটি গোল করা পঞ্চম দল হলো ইংল্যান্ড। গত বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ৭ গোলে হারানোর ম্যাচে জার্মানি শেষ গড়েছিল এই রেকর্ড।
আরেকটি গোল, ইংল্যান্ডের আরেকবার উল্লাস/এএফপি
ট্রিপিয়েরের কর্নার থেকে জন স্টোনসের গোল দিয়ে শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। হ্যারি কেইনের পেনাল্টি দিয়ে আপাতত শেষ। মাঝে স্টোনস করেছেন আরেকটি, পেনাল্টি থেকেই আরেকটি করেছেন কেইন। ডি-বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শটে আরেকটি গোল জেসি লিনগার্ডের। আর শেষে ‘অপ্রত্যাশিত’ গোলে হ্যাটট্রিকটা পেয়ে গেছেন কেইন।
স্টোনস জোড়া গোল করেছেন হেড থেকে। ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম ম্যানচেস্টার সিটির কেউ গোল করলো বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে। আর কেইনের দুইটি পেনাল্টিই এসেছে পানামার করা ফাউল থেকে, একবার যেটার শিকার ছিলেন লিনগার্ড, আরেকবার কেইন নিজেই। দুইবারই বাম পাশে টপ কর্নারে মেরেছেন কেইন।
এরপর লিনগার্ড করলেন এ বিশ্বকাপেরই অন্যতম সেরা এক গোল। বাঁদিক থেকে বলটা আলতো করে বাড়িয়েছিলেন রাহিম স্টার্লিং, বাঁদিক থেকেই ছুটেছিলেন লিনগার্ড। বক্সের বাইরে থেকেই ডান পায়ে টপ কর্নারে বল ঢুকিয়েছেন দুর্দান্তভাবে।
লফটাস-চিকের কাট কেইনের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকেছে জালে। ভিএআর আবার অফসাইড দেখেছে, তবে কেইনের হ্যাটট্রিক বা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যাওয়া আটকায়নি তাতে। পাঁচটি গোল এখন তার, ছাড়িয়ে গেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও রোমেলু লুকাকুর চারটি গোলকে।
ম্যাচশেষে দর্শকদের নিয়ে উদযাপন সেরে নিলেন গ্যারেথ সাউথগেট, হ্যারি কেইনরা। শেষ ষোল নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের। বিশ্বকাপ শুরুর আগে যে দলকে নিয়ে উচ্চাশা ছিল খোদ ইংলিশদেরই, সেই দলের ওপর ভর করেই যে অন্যরকমের স্বপ্ন দেখছে এখন ইংল্যান্ড!