সামুরাইতে স্তব্ধ সিংহের হুংকার
দুইবার পিছিয়ে পড়েছিল জাপান, দুইবার ফিরে এসেছে তারা। জাপানের সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জেতা হয়নি সেনেগালের। ব্লু সামুরাইদের লড়াকু মানসিকতা তাদের দিয়েছে এক পয়েন্ট, দিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার আশাও। আর সেনেগালের অবস্থাও একই, জিততে না পারলেও এক পয়েন্টে খুশিই হওয়ার কথা তাদের। দুই দলের ম্যাচ ড্র হয়েছে ২-২ গোলে।
ইয়েকাতেরিনবুর্গে গুছিয়ে ওঠার আগেই গোল খেয়ে বসেছিল জাপান। ১১ মিনিটে ভুলটা করেছিলেন জাপানের গোলরক্ষক। বাঁ দিক থেকে আসা ক্রসটা নীচু হয়ে পাঞ্চ করেছিলেন তিনি। সেটাও গেল সাদিও মানের পায়ে। প্রথম ম্যাচে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও সেনেগালকে এগিয়ে দিলেন মানেই। এরপরও সেনেগালেরই কর্তৃত্ব ছিল বল দখলের লড়াইয়ে। কিন্তু জাপানিজদের হার না মানা মনোভাবের কাছে প্রথমার্ধেই একবার হারতে হলো সেনেগালিজদের। ৩৪ মিনিটে নাগাতোমর কাছ থেকে পাওয়া বলে কোণাকুণি শটে গোল করেন তাকাশি ইনুই। গ্যালারির ব্লু সামুরাইদের উল্লাস তখন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়েছে মাঠে। তাতে আরও উজ্জীবিত জাপান। কিন্তু প্রথমার্ধের আগে আর তেমন ভীতি ছড়ানো হয়নি সেনেগালিজ রক্ষণে।
আরেকবার ফিরে আসা জাপানের উল্লাস/এএফপি
বিরতির পরই জাপানের ভয়ঙ্কর রূপটা দেখল তেরেঙ্গার সিংহরা। ৬১ মিনিটে শিবাসাকির ক্রসটা পায়ে ছোঁয়াতে পারলেই নিশ্চিত গোল হতে পারত, কিন্তু আগের ম্যাচে জাপানের জয়ের নায়ক ইয়ুয়া ওসাকো আজ আর পারলেন না। ইনুই একাও হয়ে যেতে পারতেন খবরের শিরোনাম। আরও একবার দেখার মতো একটা শট করেছিলেন। কিন্তু এবার আর জালে জড়ালো না বল, বারপোস্টে লেগে গোলবঞ্চিত ইনুই।
জাপানের গোল মিসের সুযোগে অন্যপ্রান্তে তেরেঙ্গার সিংহরাও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল। সবচেয়ে কমবয়সী স্ট্রাইকারই গোল করে জয়ের আশা দেখাচ্ছিলেন সেনেগালকে। ১৯ বছর বয়সী স্ট্রাইকার, আগে কখনও গোলই করেননি জাতীয় দলের হয়ে। সেই মুসা ওয়াগাউই ডান দিক থেকে আসা ক্রসে গোল করে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে দেন সেনেগালকে।
কিন্তু ম্যাচ শেষে তিনিও শিরোনাম হতে পারেননি। ম্যাচের গল্পটা চলেছে একই ধারায়, সেনেগাল এগিয়ে যাবে, জাপান লড়াইয়ে করে ফিরবে আরও শক্তিশালী হয়ে। সেই কাজটা করলেন কেইসুকে হোন্ডা। আগের ম্যাচে প্রথম জাপানি খেলোয়াড় হিসেবে ৩ বিশ্বকাপে অ্যাসিস্ট পূর্ণ করেছিলেন। আজ গোলের রেকর্ডটাও হয়ে গেল তার। ম্যাচে প্রথম গোলে যেমন গোলরক্ষকের ভুল ছিল, শেষটাতেও তাই। শুধু প্রান্ত বদল হলো এবার। সেনেগালের খাদিম এনদায়ি এবার ভুলের জন্য দায়ী। উপর থেকে উড়ে আসা ক্রস পাঞ্চ করতে চেয়েছিলেন, পারেননি, লুটিয়ে পড়েছেন মাটিতে। সেই বল বাঁ প্রান্ত পেয়েছেন ইনুই। তার ক্রস, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ছিলেন হোন্ডা, বাঁ পায়ের নির্ভুল শটে গোল করে জাপানকে ফিরিয়ে আনলেন তিনিই।
বাকি সময়ে সেনেগাল-জাপান দুই দলই লড়াই করেছে জয়ের জন্য। কিন্তু রক্ষণটা আগে আগলেছে দুই দলই। হার এড়াতে পারলেই তো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হয় দ্বিতীয় রাউন্ডের পথে। শেষ ম্যাচে পর্যন্ত ঝুলে থাকল দুই দলের ভাগ্য। আজ কলম্বিয়া-পোল্যান্ডের ম্যাচের ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু।