আসল কলম্বিয়াকে দেখল পোল্যান্ড
হামেস রদ্রিগেজের ডিফেন্সচেরা পাস থেকে পোল্যান্ড গোলরক্ষককে শেজনিকে পরাস্ত করলেন হুয়ান কুয়াদ্রাদো। বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মাতল কাজানে উপস্থিত কলম্বিয়ার সবাই-ই। ক্যামেরা চলে গেল দর্শকসারিতে। আটকে গেল হাসিমুখে আলিঙ্গনে আবদ্ধ বাহারি চুলের দুজনের ওপর। কার্লোস ভালদেরামা এবং রেনে হিগুইতা। নিজেদের সময়ের পর রাশিয়া বিশ্বকাপে এ যুগের সোনালী প্রজন্মের গর্জনটা মাঠেই শুনলেন কলম্বিয়ার দুই কিংবদন্তী। কাজানে পোলিশদের যেভাবে হারাল কলম্বিয়া, তাতে নিশ্চিতভাবেই তারা গর্ববোধ করছেন। আর ৩-০ গোলের পরাজয়ে ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল পোল্যান্ড।
কুয়াদ্রাদোর গোলের আগেই অবশ্য প্রায় নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল কলম্বিয়ার জয়। প্রথমার্ধে ইয়েরি মিনার পর দ্বিতীয়ার্ধে রাদামেল ফালকাওয়ের গোলে তখন ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে হোসে পেকারম্যানের দল। বড় ব্যবধানে জিতলেও প্রথমার্ধে অবশ্য রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতেই দল সাজিয়েছিলেন পেকারম্যান। রক্ষণের দিকেই মনযোগটা বেশি ছিল পোলিশ কোচ অ্যাডাম নাওয়ালকারও। গোল করার চেয়ে গোল না খাওয়ার দিকেই ঝোঁকটা বেশি ছিল পেকারম্যান এবং নাওয়ালকার। ৪-২-৩-১ ফর্মেশন থেকে সরে এসে ৪-৫-১ এ দল সাজিয়েছিলেন তারা। আক্রমণভাগের ফুটবলাররা নিষ্প্রভ থাকলেও রক্ষণে দু’দলের ডিফেন্ডাররা ছিলেন ইস্পাতদৃঢ়।
ডিফেন্ডারদের দক্ষতায় তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি ফালকাও-লেভানডফস্কিরা। ফালকাওকে প্রতি আক্রমণে কয়েকবার ভয়ঙ্কর মনে হলেও লেভানডফস্কিকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি একেবারেই। প্রথম ম্যাচে সেনেগালের পর আজও নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন। তবে বায়ার্নের স্ট্রাইকারকে রীতিমত পকেটবন্দি করার মূল কৃতিত্বটা অবশ্যই কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনার। রক্ষণে নিজের কাজটা করে দলকে লিড এনে দেওয়ার দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নেন মিনা। সফলও হয়েছেন তাতে। ৪০ মিনিটে কর্নার থেকে কুইন্তেরোকে পাস দেন হুয়ান কুয়াদ্রাদো। প্রথম টাচেই ডানপ্রান্তে ফাঁকায় দাঁড়ানো হামেসকে পাস বাড়ান হুয়ান কুইন্তেরো। হামেসের আলতো ক্রসে এগিয়ে আসা পোলিশ গোলরক্ষক সেজনির ওপর লাফিয়ে উঠে হেড করে দলকে লিড এনে দেন মিনা। আজকের অ্যাসিস্ট নিয়ে বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার শেষ ৭ ম্যাচে ৯ গোলে সরাসরি অবদান রাখলেন হামেস (৬ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট)।
মিনার গোলের পর আর পেছনে ফিরতে হয় পেকারম্যানের দলকে। দ্বিতীয়ার্ধের গল্পটা শুধুই কলম্বিয়ার। শুরুতে লেভানডফস্কির গোলমুখে শট বাদ দিলে কলম্বিয়ার কাছে পাত্তাই পায়নি পোল্যান্ড। প্রথমার্ধে মাঝমাঠে যতটুকু প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল নাওয়ালকার দল, দ্বিতীয়ার্ধে দেখা মেলেনি তার ছিঁটেফোঁটাও। ফালকাও-হামেসরাও ফিরলেন স্বরূপে, আর তাতেই কপাল পুড়ল পোলিশদের। ৭০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফালকাও। ম্যাচে নিঃসন্দেহে কলম্বিয়ার সেরা ফুটবলার কুইন্তেরোর ডিফেন্সচেরা থ্রু পাস থেকে শেজনিকে একা পেয়ে যান ‘এল তিগ্রে’। ডানপায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি তিনি। এর মিনিট পাঁচেক পর পোল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন কুয়াদ্রাদো। নিশ্চিত পরাজয় জেনেও চেষ্টা করে গেছেন লেভানডফস্কি। শেষদিকে এসে দু’বার পরীক্ষায় ফেলেছিলেন ওসপিনাকে। কিন্তু দুবারই তাকে খালি হাতে ফিরিয়েছেন আর্সেনালের গোলরক্ষক। লেভানডফস্কির সাথে খালি হাতেই রাশিয়া বিশ্বকাপের বিদায়ঘণ্টা বেজে উঠল পোল্যান্ডের।