সুয়ারেজ-কাভানি নয়, দিনটা এল হাদারির
কিছুই পাওয়ার ছিল না মিশর-সৌদি আরবের। সামান্য কিছু ছিল উরুগুয়ে-রাশিয়ার। এই দুই দলই নকআউটে উঠে গেছে আগেই, আজ শুধু গ্রুপ চ্যাম্পিয়নটাই ঠিক হওয়ার ছিল। তাতে রাশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের সত্যিকার শক্তিটা প্রথম বারের মতো জানান দিল উরুগুয়ে। আর শেষ মুহূর্তের গোলে মিশরকে হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম জয় পেয়েছে সৌদি আরব। তবে ‘এ’ গ্রুপের সত্যিকার নায়ক আজ সুয়ারেজ-কাভানিরা কেউ নন, বরং মিশরের ৪৫ বছর বয়সী গোলরক্ষক ইসাম এল হাদারি।
বিশ্বকাপে যে রেকর্ডের স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন, প্রথম দুই ম্যাচে তা পূরণ হয়নি হাদারির। শেষ ম্যাচটা যখন গুরুত্বহীন, মিশর কোচ হেক্টর কুপার সুযোগ নিলেন হাদারিকে। ৪৫ বছর ১৬১ দিনে সবচেয়ে বেশি বছর বয়সে বিশ্বকাপ অভিষেক হলো হাদারির। পেশাদারির এই যুগে যে রেকর্ডটা হয়তো টিকে থাকবে অনেক দিন। দল হেরে যাওয়ায় হাদারি মুহূর্তটা উদযাপন করতে পারবেন না বটে, তবে যেভাবে খেলেছেন মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তেই পারেন।
২২ মিনিটে সৌদি রক্ষণের ভুলে মো সালাহ পেয়ে যান বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় গোল। মিনিটখানেকের মধ্যেই আরেকটি সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু ফাঁকা পোস্টে চিপ রাখতে পারেননি। ৪১ মিনিটে অবশ্য সৌদি আরব পেয়ে যায় পেনাল্টি। যদিও মিশরের আহমেদ ফাতহি বলটা ইচ্ছা করে হাতে লাগিয়েছেন কি না সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। রেফারি রিভিউ করে পেনাল্টির বাঁশিও বাজিয়েছেন। এরপরেই দৃশ্যপটে এল হাদারি, ডান দিকের দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন ফাহাদ আল মুয়াদ্দাদের কিক।
তবে এই সিদ্ধান্তটা যদি বিতর্কিত হয়, ৪৫ মিনিটে রেফারি যেটা করেছেন সেটাকে ‘উপহাস’ বলা ছাড়া উপায় নেই। সৌদি আরবের আল মুয়াদ্দাদ ইচ্ছা করে পড়ে গেছেন বলেই মনে হচ্ছিল। রেফারি ভিডিও সহকারীর সাথে আলোচনা করলেন, অনেক বার রিপ্লে দেখলেন, শেষ পর্যন্ত পেনাল্টির বাঁশিই বাজালেন। এবার আল পারেননি হাদারি, সালমান আল ফারাজ সমতা ফিরিয়েছেন সৌদিদের হয়ে।
আল হাদারির হৃদয়টা অবশ্য ভেঙেছে শেষ বাঁশি বাজার একটু আগে। বক্সের ভেতর থেকে শটে সালেম আল দাওসারির গোলে জয় পেয়েছে সৌদি আরব, ১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো। তাতে এল হাদারির অর্জন খুব একটা খাটো হয়নি।
সৌদি-মিশরের তুলনায় রাশিয়া-উরুগুয়ে ম্যাচটা যেমন জমজমাট হওয়ার কথা ছিল, সেই আশা পূরণ হয়েছে কমই। ম্যাচের অর্ধেকেরও বেশি সময় অবশ্য ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়েছে রাশিয়াকে। তার আগেইপিছিয়ে পড়েছে স্বাগতিকেরা। ১০ মিনিটে বেন্টাকারকে ফাউল করায় বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রিকিক পেয়েছিল উরুগুয়ে। ডান পায়ের নিচু শটটা ঠেকাতে পারেননি রাশিয়া গোলরক্ষক আকিনফেভ, সুয়ারেজ পেয়েছেন টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় গোল।
২৩ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা অবশ্য একেবারেই দুর্ভাগ্য রাশিয়ার। উরুগুয়ে লেফটব্যাক ডিয়েগো লাক্সালটের বক্সের বাইরে থেকে শট পোস্টের বাইরে দিয়েই চলে যেত। কিন্তু ডেনিশ চেরিশেভের গায়ে লেগে দিকবদল করে তা ঢুকে গেছে জালে। প্রথম দুই ম্যাচের দুর্দান্ত রাশিয়াকে যেন চেনাই যাচ্ছিল না।
সেই গোলটাই বোধ হয় রাশিয়ানদের খানিকটা এলোমেলো করে দিল। ৩৬ মিনিটে ইগর স্মলনিকভ দেখলেন দ্বিতীয় হলুদ কার্ড , রাশিয়া হয়ে গেল দশজনের। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সেই দশজন নিয়েই দারুণ লড়ে গেল রাশিয়ানরা। সামারায় প্রতিটা বল পেলেই স্বাগতিকেরা চেঁচিয়ে সমর্থন দিয়ে গেছেন দর্শকদের। আর্তেম জুইবারা সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ব্যবধান কমিয়েও ফেলতে পার রাশিয়া।
শেষ পর্যন্ত উরুগুয়েই দিল আরেকটি গোল। পুরো ম্যাচেই একটা গোলের জন্য হন্যে হয়ে ছিলেন এডিনসন কাভানি, দারুণ কিছু সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। ৯০ মিনিটে কর্নার থেকে আকিনফেভের ঠেকিয়ে দেওয়া নল জালে ঢেলে পেয়েছেন নিজের প্রথম গোল। সুয়ারেজের পর দ্বিতীয় উরুগুইয়ান হিসেবে তিন বিশ্বকাপে গোল হলো কাভানির। সেই সঙ্গে স্পেন বা পর্তুগালকেও বার্তা দিয়ে রাখল, উরুগুয়েকে হারানো সহজ হবে না মোটেই।