ইরানের স্বপ্নভঙ্গের রাতে স্বস্তি পর্তুগালেরই
দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের খেলা চলছে তখন। কিছুক্ষণ আগেই ভিডিও রেফারির সাহায্যে পাওয়া পেনাল্টি থেকে অধিনায়ক আনসারিফার্দের গোলে সমতায় ইরান। আজমুন সর্দারের পাস থেকে ডিবক্সে বল পেয়ে গেলেন মাহেদী তারিমি। মাঠে উপস্থিত ইরান সমর্থকেরা তখন আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে। তারিমির পায়ে তখন অবিশ্বাস্য কিছুর স্বপ্ন দেখছে ইরান। তারিমি শট জড়ালো জালে, তবে বাইরের দিকে! শেষ বাঁশির পর মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন ইরানের ফুটবলাররা, চোখজোড়া বেয়ে নেমে আসল অশ্রুধারা। তীরে এসে তরী ডুবল তাদের। স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে এসে খালি হাতে ফিরল এশিয়ার দলটি। আর হাঁফ ছেড়ে বাঁচল পর্তুগাল। ১-১ গোলের ড্রয়ে গ্রুপ রানার-আপ হয়ে শেষ ষোলতে গেলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা।
অথচ ড্রয়ের বদলে জয়টাই বেশ হেসে-খেলেই পেতে পারত পর্তুগাল। রিকার্দো কারেসমার গোলে লিড নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের ৫২ মিনিটে পেনাল্টি পেল পর্তুগাল। কিন্তু চাপে ভেঙ্গে পড়লেন এ বছর একটিও পেনাল্টি মিস না করা রোনালদো। 'সিআর৭'-এর শট রুখে দিলেন ইরান গোলরক্ষক আলিরেজা বিরানভান্ড। তবে কঠিন এক ম্যাচের আভাসটা পাওয়া যাচ্ছিল শুরু থেকেই।
প্রথমার্ধে ইরানের জমাট রক্ষণভাগ ভেদ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল পর্তুগালকে। রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথমবার মূল একাদশে জায়গা পেয়েও নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি আন্দ্রে সিলভা। নিষ্প্রভ ছিলেন রোনালদোও। তবে ইরানের রক্ষণের ভুলে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন হোয়াও মারিও। ইরান গোলরক্ষক এবং ডিফেন্ডারের ভুল বুঝাবুঝিতে বল পান মারিও। ডিবক্সের একেবারে সামনে থেকে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও বল বাইরে মারেন তিনি। প্রথমার্ধে আরও কয়েকবার দুই উইং থেকে ভেসে আসা ক্রস তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হয়েছেন বিরানভান্ড। তবে ডিফেন্ডারদের দক্ষতায় ভুলের মাশুল গুণতে হয়নি তাকে। রক্ষণ দিয়ে পর্তুগিজদের আটকে দিলেও আক্রমণে পেপেদের তেমন বিপাকে ফেলতে পারেননি ইরানিরা। প্রথমার্ধে ইরানের জাহানবখসের ফ্রি কিক থেকে এজাতোলাহীর গোলমুখে হেডই ছিল একমাত্র উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
কার্লোস কুইরোজ যখন দ্বিতীয়ার্ধের ছক কষতে ব্যস্ত, তখন চিত্রনাট্যে পরিবর্তন। নায়ক আবির্ভূত হলেন; তবে পুরনো নয়, নতুন। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার ক্রস করে রোনালদো, সিলভাদের বল যোগানের ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। এবার গোল করার দায়িত্বটা নিজ কাঁধেই তুলে নিলেন কারেসমা। ডানপ্রান্তে সেড্রিকের সাথে ওয়ান-টু করে ডিবক্সে বাইরে থেকে 'আউটসাইড অফ দা বুট'-এ মারলেন নিজের বিখ্যাত 'ট্রিভেলা' শট, যা দিয়ে ক্যারিয়ারজুড়ে পরাস্ত করেছেন অসংখ্য গোলরক্ষককে। বিরানভান্ডও ঢুকে গেলেন সেই লিস্টে। কারেসমার 'ট্রিভেলা' জড়াল জালে, পর্তুগাল নিল স্বস্তির নি:শ্বাস। গোলের পর কারেসমাকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে রোনালদোর উদযাপনই জানান দিচ্ছিল, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলতে যেতে গোলটির অবদান ঠিক কতটুকু।
তবে গোল হজম করেও ভেঙ্গে পড়েনি ইরান। সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে গেছে শেষ পর্যন্ত। দ্বিতীয়ার্ধেও অবশ্য প্রথমার্ধের মত গোলের সুযোগ তৈরিতে সফল হয়নি কুইরোজের দল। পর্তুগালের হয়ে মাঝমাঠে উইলিয়াম কারভালহো এবং রক্ষণে পেপে ছিলেন দুর্ভেদ্য দেয়াল। অসংখ্যবার আজমুন-জাহানবখসদের ফিরিয়েছেন খালি হাতে। ইরান গোলের সুযোগ তৈরিতে ব্যর্থ হলেও পর্তুগালের দুশ্চিন্তা ছিল অন্য জায়গায়। ৮০ মিনিটে ডিফেন্ডার পৌরালিগাঞ্জিকে ফাউল করেন রোনালদো। ইরানের ফুটবলারদের জোর দাবিতে ভিডিও সহকারি রেফারির শরণাপন্ন হন মূল রেফারি। তবে লাল কার্ড নয়, হলুদ কার্ড দেখলেন রোনালদো। শেষ ষোলতে খেলার সুযোগটাও টিকে থাকল তার। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের নাটক শেষে ড্র নিয়েই ফিরল পর্তুগাল। স্পেনের সমান ৫ পয়েন্ট হলেও গোল বেশি করায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হল 'লা রোহা'রা। শেষ ১৬-তে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ সুয়ারেজ-কাভানির উরুগুয়ে। আর স্পেন খেলবে স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে।
একাদশ:
পর্তুগাল (৪-৪-২): প্যাট্রিসিও; সেড্রিক, পেপে, ফন্ট, গুরেরো; উইলিয়াম, আদ্রিয়েন, মারিও, কারেসমা; আন্দ্রে সিলভা, রোনালদো
ইরান (৪-২-৩-১): বিরানভান্ড; রেজাই, হোসেইনি, পৌরালিগাঞ্জি, হাজিশাফি; ইব্রাহিমী, এজাতোলাহী; জাহানবখস, আমিরি, তারিমি; আজমুন