নাটকের পর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেন
কালিনিনগ্রাদে রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তে গোল বাতিল, স্পেনের হতাশা। সারানস্ক অ্যারিনায় তখন গ্রুপের অন্য ম্যাচে রেফারি মাঠের বাইরে দেখছেন সম্ভাব্য পেনাল্টি, পরে ইরানের পক্ষেই দিলেন পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। আর অ্যাসিসট্যান্ট রেফারির সিদ্ধান্তে অফসাইডে বাতিল হওয়া গোলের সিদ্ধান্তও ততোক্ষণে বদলে গেল কালিনিনগ্রাদে। একদিকে পর্তুগাল গোল হজম করল, আরেকদিকে ইয়াগো আসপাসের গোলে সমতায় ফিরল স্পেন। নাটকের চূড়ান্ত রুপটা দেখল গ্রুপ বি এর দুই ম্যাচ। মরক্কোর সঙ্গে দুইবার পিছিয়ে পড়েও ২-২ গোলে ড্র করার পর স্পেন হয়ে গেল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। পর্তুগালের চেয়ে বেশি গোল করায় শীর্ষস্থানে ২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা।
স্পেনের বিপক্ষে মরক্কো লড়ে গেছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। ১৪ মিনিটে স্পেনকে চমকে এগিয়েও গিয়েছিল তারা। সেটা অবশ্য স্পেনের একটা ভুল থেকেই। মাঝমাঠে সার্জিও রামোস আর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ভুল বোঝাবুঝি থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন খালিদ বৌতালিব। ডেভিড ডি গিয়ার সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে ভুল করেননি, অবশ্য ডি গিয়ার আফসোস থাকবে এই ম্যাচেও। বিশ্বকাপে তার দিকে আসা চারটি শটের একটিও ঠেকানো হয়নি তার। এই বৌতালিব অবশ্য আরেকটু আগেই দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারতেন স্পেনের। জেরার্ড পিকে দুই পায়ে ট্যাকেল করে বল দখল করতে গিয়েছিলেন তার কাছ থেকে, অন্য কোনোদিন হলে হয়ত রেফারির লাল কার্ডই দেখতে হত পিকেকে।
পিছিয়ে পড়ার পর স্পেন গোল শোধ করতে সময় নেয়নি। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার বাড়ানো পাস ডিবক্সের ভেতর খুঁজে পায় ইস্কোকে। নিখুঁত ফিনিশে গোল করে স্পেনকে ৭ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার। স্পেনের হয়ে শেষ ১৫ ম্যাচে এই নিয়ে ১০ গোল করলেন ইস্কো।
এরপর বল পজেশনে এগিয়ে থেকেও অবশ্য খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি স্পেন। প্রথমার্ধে আরও একবার গোলের সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন বৌতালিবই। এবার একটু কোণাকুণি দিক থেকে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন স্পেন ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে। ডি গিয়া সে দফায় গোলবঞ্চিত করেছেন তাকে। আরও একটা দিক দিয়ে অবশ্য মরক্কো এগিয়ে ছিল স্পেনের চেয়ে, প্রথমার্ধেই ৪ বার রেফারির হলুদ কার্ড দেখেছে তারা। এই মরক্কো মনে করিয়ে দিয়েছে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের কথা। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর প্রথমার্ধে সবচেয়ে বেশি হলুদ কার্ড দেখার রেকর্ড ছিল ওই ম্যাচে (৫)। আজ আরেকটু হলেই নিজেদের রেকর্ডটা আরও একবার ছুঁয়ে ফেলত তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিটেও বেশি ভয়ঙ্কর মনে হলো মরক্কোকেই। প্রথমে আমরাবাতের বুলেট শট বারপোস্ট কাঁপিয়ে ফেরত আসল। পরের বার হাকিম জিয়াখের মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বলটা হেড করলেও এগিয়ে যেতে পারত মরক্কো। কিন্তু বৌসাফা বলের নাগাল পাওয়ার আগেই লাফিয়ে এসে পেছন থেকে বল পাঞ্চ করেছেন ডি গিয়া। এরপর অবশ্য ম্যাচে ফিরতে থাকে স্পেন, বল পজেশন বজায় রাখার সুফল থেকে অবশ্য নয়, বরং সেট পিস থেকেই দারুণ দুটো সুযোগ পেয়েছিল তারা। কর্নার থেকে জেরার্ড পিকের হেড অল্পের জন্য মিস করেছে গোলের নিশানা। এরপর ডানদিক থেকে আসা ক্রসে ইস্কোর হেড গোলের দিকেই যাচ্ছিল, শেষ মুহুর্তে সেকেন্ড পোস্টে লাফিয়ে উঠে বলের নিশানা বদলে দেন সায়িস।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের রঙটা আসলে বদলে দেন বদলি স্ট্রাইকার ইয়োসেফ এন নেসায়রি। বৌতালিবের জায়গায় নেমে, তার কাজটাই এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে গোল করে মরক্কোকে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে দেন তিনি। ৮১ মিনিটের ওই গোলে বড় একটা অঘটনের স্বপ্নই দেখছিল হার্ভি রেনার্ডের দল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা কর্নার থেকেই কপাল পুড়েছে তাদের। সেখানেও আরেক বদলি। ইয়াগো আসপাস আর মার্কো আসেনসিও মাঠে নেমেছিলেন ৭৪ মিনিটে। শর্ট কর্নার থেকে বল পেয়েছিলেন দানি কারভাহাল। তার ক্রস থেকেই দেখার মতো এক ব্যাক ফ্লিকে ৯১ মিনিটে গোল করে লা ফুরিয়া রোহাদের রক্ষা করেন আসপাস। প্রথমে অফসাইড সিদ্ধান্তে গোল বাতিল হলেও, পরে উঠে গেছে নিষেধাজ্ঞা। আসপাসের বাঁ হাতটাই কেবল বাইরে ছিল।
শেষ মুহুর্তের নাটকে ওই গোলেই হার এড়িয়ে গ্রুপের শীর্ষেও উঠে গেছে স্পেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক রাশিয়া।
একাদশ
স্পেন
ডি গিয়া, রামোস, পিকে, কারভাহাল, আলবা, বুস্কেটস, ইনিয়েস্তা, থিয়াগো, সিলভা, ইস্কো, কস্তা
মরক্কো
কাজাউই, হাকিমি, দা কস্তা, সাইস, দিরার, জিয়াখ, আল আহমাদি, বেলহান্দা, বউসাফা, আম্রাবাত, বৌতাব