৩ গোলে হেরেও পরের রাউন্ডে সুইডেনের সঙ্গী মেক্সিকো
গ্যালারি ভর্তি দর্শক তখন রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষায়। ফোনে স্কোর জানতে ব্যস্ত প্রায় সবাই-ই। ম্যাচ হারার মিনিট দশেক পেরিয়ে গেলেও মাঠ ছাড়েননি মেক্সিকোর কেউ। এমন সময়ই কাজান থেকে খবর আসল জার্মানির বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় গোলের। থাকল আর কোনো সংশয়ের অবকাশ। উদযাপনে মেতে উঠলেন এতক্ষণ চরম উৎকণ্ঠায় ভোগা মেক্সিকানরা। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন চিচারিতোর মত অভিজ্ঞ ফুটবলাররাও। জার্মানির বিপক্ষে অন্তিম মুহূর্তে গোলে হেরে গ্রুপ ‘এফ’ জমিয়ে তুলেছিল সুইডেন। শেষ ম্যাচের আগেও পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ ছিল ৪ দলেরই। তবে ইয়েকাতেরিনবুর্গে আজ নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে খুব সম্ভবত সেরা ম্যাচটাই খেলল সুইডেন। মেক্সিকোকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলতে চলে গেল সুইডিশরা। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে বিস্ময়করভাবে জার্মানি ২-০ গোলে হেরে যাওয়ায় ঠিকই পরের রাউন্ডে গিয়েছে মেক্সিকো। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ‘এফ’ গ্রুপের রানার্স-আপ হিসেবে শেষ ষোলর টিকেট পেল হুয়ান কার্লোস অসোরিওর দল।
ইয়েকাতেরিনবুর্গে ম্যাচের শুরুতেই অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডের নিজেদের করে দেয় মেক্সিকো। ম্যাচের মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই সুইডিশ স্ট্রাইকার ওলা টইভোনেনকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ডিফেন্ডার হেসুস গায়ার্দো। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা দ্রুততম হলুদ কার্ডের রেকর্ড। এর মিনিটখানেক পরই কর্ণার থেকে দারুণ এক সুযোগ পায় সুইডিশরা। ২ মিনিটে এমিল ফর্সবার্গের কর্ণারে হেড করে পাস বাড়ান অধিনায়ক আন্দ্রেয়াস গ্র্যাঙ্কভিস্ট। তার পাস থেকে স্ট্রাইকার মার্কাস বার্গের বাইসাইকেল শট চলে যায় মেক্সিকো গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। ৫ মিনিটে বল নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ডিবক্সের বাইরে বল ধরায় সুইডেনকে ফ্রিকিক উপহার দেন মেক্সিকো গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া। তবে ফ্রিকিক থেকে ফর্সবার্গের আগুনে শট ফিরিয়ে ঠিকই দলকে সমতায় রেখেছেন তিনি। প্রথমার্ধে বল দখল, আক্রমণ- সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল সুইডেন। কিন্তু ১৭ মিনিটে প্রথমার্ধে গোল করার সবচেয়ে ভাল সুযোগটি পেয়েছিল প্রতি আক্রমণে খেলা মেক্সিকোই। গ্র্যাঙ্কভিস্টের ভুলে বল পেয়ে যান চিচারিতো হার্নান্দেজ। ডানপ্রান্তে পাস বাড়ান কার্লোস ভেলাকে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার। ফুলব্যাক মিকেল লুস্টিগকে কাটিয়ে ভেলার বাঁকানো শট চলে যায় সুইডিশ গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে।
তবে ভাগ্যের বিচারে মুদ্রার উলটো পিঠটাও দেখতে হয়েছে সুইডেনকে। ২৮ মিনিটে ডিবক্সে ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল হাতে লাগে চিচারিতোর। প্রথমে পেনাল্টি না দিলেও সুইডিশ ফুটবলার এবং কোচ ইয়ান অ্যান্ডারসনের জোর দাবিতে ‘ভিএআর’-এর শরণাপন্ন হন রেফারি। কিন্তু এরপরও পেনাল্টির বাঁশি দেননি তিনি। ভাগ্যের সাথে ওচোয়াও যেন হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্যই। ৩১ মিনিটে লুস্টিগের ক্রসে ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’ রেঞ্জ থেকে বার্গের হেড অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন মেক্সিকোর গোলরক্ষক। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সুইডিশদের প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় ওচোয়াকে। ৫০ মিনিটে ক্লাসেনের ক্রস থেকে বার্গের হেডে লুডভিগ অগাস্টিনসনের দুর্দান্ত ভলিতে লিড নেয় সুইডেন। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের জন্য খুব সম্ভবত এর চেয়ে বড় মঞ্চ বেছে নিতে পারতেন না সুইডেনের লেফটব্যাক।
গোলশোধে মরিয়া মেক্সিকোর বিপক্ষে এরপর প্রতি আক্রমণেই খেলতে থাকে সুইডেন। সেই প্রতি আক্রমণেই ব্যবধান দ্বিগুণের সুযোগ পেয়ে যায় সুইডেন। ৬০ মিনিটে বার্গকে ডিবক্সে ফেলে দেন মেক্সিকো ডিফেন্ডার হেক্টর মরেনো। এবার আর ভিডিও রেফারির সাহায্য লাগেনি, ফাউলের পরপরই পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে ওচোয়াকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি গ্র্যাঙ্কভিস্ট। ২০০২ বিশ্বকাপে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার এবং বর্তমান কোচ ফার্নান্দো হিয়েরোর পর প্রথম ডিফেন্ডার হিসেবে একই বিশ্বকাপে পেনাল্টি থেকে দু’বার গোল করলেন সুইডিশ অধিনায়ক। এই গোলের পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি সুইডেনকে। ৭৪ মিনিটে ডিফেন্ডার আলভারেজের আত্মঘাতী গোলে নিশ্চিত হয় সুইডেনের জয়। এবারের বিশ্বকাপে ৭ম আত্মঘাতী গোল ছিল আলভারেজেরটি, যা কোনো এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ আত্মঘাতী গোলের রেকর্ড। জার্মানির বিপক্ষে অন্তিম মুহূর্তে হারের শোকটা কিছুটা হলেও লাঘব হল সুইডিশদের।