• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    মস্কোতে ব্রাজিলের দিন

    মস্কোতে ব্রাজিলের দিন    

    প্রথম ম্যাচে হতাশা, পরের ম্যাচে সেই হতাশা কাটিয়ে ওঠা শেষের ফেরায়। এরপর শেষ ম্যাচে দেখা মিললো ব্রাজিলের দুর্দান্ত ফুটবলের। সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠল ব্রাজিল। হেক্সা জয়ের মিশনে দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলের খেলা মেক্সিকোর সঙ্গে।

    দিনের শুরুতে জার্মানির হারের পর খানিকটা শঙ্কা ভর করেছিল। বিশ্বকাপ যে গতিতে এগুচ্ছিল তাতে যে কোনো কিছুই তো সম্ভব। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হার এড়ালেই হতো ব্রাজিলের। ব্রাজিলের খেলায় অবশ্য অনুমিতভাবেই ওই সমীকরণের ছাপ থাকল না। শুরু থেকেই স্পার্টাকে আক্রমণাত্মক ব্রাজিল। কিন্তু ১০ মিনিটে অবশ্য শঙ্কার মেঘ ভর করেছিল ব্রাজিল দলে। ১০ মিনিটে পিঠের ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন মার্সেলো। তার জায়গায় নেমেছিলেন ফিলিপে লুইস। ব্রাজিল দলের শক্তিটাও পরীক্ষা হয়ে গেছে এই ম্যাচে।

    দ্বিতীয় গোলের পর ব্রাজিলের উল্লাস/এএফপি

    এর আগে তিতে নামিয়েছিলেন অপরিবর্তিত একাদশটাই। নেইমারকেও দিয়েছিলেন স্বাধীনতা। সেটা কাজে লাগিয়েই ২৫ মিনিটে নেইমার ঢুকে পড়লেন ডিবক্সের ভেতর। কিন্তু গোলরক্ষক স্টইকোভিচকে কোণাকুণি শটে হারাতে পারেননি। মিনিট চারেক পর গ্যাব্রিয়েল হেসুসও প্রায় একইরকম জায়গায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু কম্পোজারের অভাবে শটই নিতে পারেননি। প্রথমার্ধে সার্বিয়া বেশিরভাগ সময়ই নিজেদের অর্ধে থেকে প্রতি আক্রমণে ওঠার চেষ্টায় ছিল। ব্রাজিলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নিচ্ছিল সার্বিয়ার রক্ষণও। কিন্তু সেই স্বস্তিটা বেশিক্ষণ টেকেনি সার্বিয়ার।

    ৩৬ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে দারুণ একটা বল বাড়ালেন ফিলিপ কৌতিনহো। সার্বিয়ার দুইজন ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেলেন পাউলিনহো। সেই বলেই পায়ের টোকায় গোলে পরিণত করেন তিনি। বার্সেলোনার দুই সতীর্থের বোঝাপড়ায় ব্রাজিল এগিয়ে গেল শুরুতেই।

    প্রথমার্ধ শেষের আগেই নেইমার ব্যবধান বাড়াতে পারতেন, কিন্তু তার নেওয়া বাঁকানো শট চলে যায় সার্বিয়ার গোলরক্ষককে কোনোরকম বিপদে না ফেলেই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকটাতেও অবশ্য খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হয়নি তাকে। ব্রাজিলের আক্রমণ সার্বিয়ার রক্ষণ থেকেই ফেরত আসছিল ঠিকঠাকভাবে। ৫৭ মিনিটে অবশ্য আরও একবার নেইমারকে গোলবঞ্চিত করে দলকে অনুপ্রেরণাই যুগিয়েছিলেন গোলরক্ষক স্টইকোভিচ। সেটাই ক্ষণিকের জন্য ম্যাচে ফিরিয়েছিল সার্বিয়াকে। ম্যাচের ঘন্টা খানেক পার হওয়ার পর চাপেই পড়ে গিয়েছিল ব্রাজিল। ৬১ মিনিটে রুকাভিনার ক্রস প্রথমে ক্লিয়ার করেছিলেন গোলরক্ষক অ্যালিসন, কিন্তু সেই বল গিয়েছিল সোজা মিট্রোভিচের কাছে। সার্বিয়ার স্ট্রাইকার হেডও করেছিলেন, কিন্তু সিলভার গায়ে লেগে সেটা আর গোলে পরিণত হয়নি। এরপর মিট্রোভিচকে উদ্দেশ্য করে আরও কয়েকবার ডান দিক থেকেই ক্রস করেছিলেন রুকাভিনা। কিন্তু সার্বিয়াকে ম্যাচে ফেরাতে পারেননি মিট্রোভিচ।

    ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলটা তখন দরকারই হয়ে পড়েছিল। ধারার বিপরীতে হলেও সময়মত গোলটা করে সার্বিয়াকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন সিলভাই। ৬৮ মিনিটে নেইমারের নেওয়া কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করেছিলেন সিলভা। রক্ষণে গুরুত্বপুর্ণ একটা ব্লকের পর সিলভার ওই গোলে স্বস্তি ফেরে সেলেসাওদের। আর সার্বিয়ার প্রতিরোধও ভাঙে তাতে।

    জয়ের ব্যবধানটা আরও বাড়তেই পারত ব্রাজিলের। দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ব্রাজিল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেছে খেলা। ফিলিপে লুইস সুযোগ পেয়েই গোলটা প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন ৭০ মিনিটে। সেটার উৎসও ছিল কর্নার। ডিবক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট স্টইকোভিচ ঠেকিয়েছেন কোনোমতে। শেষদিকে নেইমারও বেশকিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, না হলে গোলটা আজও পেয়ে যেতে পারতেন তিনি।

    সেটা নিয়ে অবশ্য খুব বেশি হতাশ হওয়ার কথা নয় ব্রাজিলিয়ানদের। দলের খেলা ভালোকিছুর সম্ভাবনাই দেখাচ্ছে তাদের।  আর দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষই অপেক্ষা করছে ব্রাজিলিয়ানদের জন্য। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে এমন একটা দিনই তো চেয়েছিল ব্রাজিল।                                                
    ব্রাজিল একাদশ
    অ্যালিসন, সিলভা, মিরান্ডা, মার্সেলো, ফ্যাগনার, কাসেমিরো, কৌতিনহো, পাউলিনহো, উইলিয়ান, হেসুস, নেইমার

    সার্বিয়া একাদশ
    স্টোইকোভিচ, রুকাভিনা, কোলারভ, ভেলকাভিচ, মিলিঙ্কোভিচ, টাডিচ, কস্টিচ,  মিলিঙ্কোভিচ সাভিচ, এলজায়িক, মাটিচ, মিট্রোভিচ