যে ম্যাচে কেউই জিততে চাইবে না?
বড় দল, ছোট দলের তকমাটা জাদুঘরে পাঠিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। প্রতিটি ম্যাচ শেষ পর্যন্ত শিহরণ জাগাচ্ছে, বিশ্বকাপ জেতা দলগুলোকেও জিততে বেগ পেতে হচ্ছে। আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি তো বাদই পড়ে গেছে। আর্জেন্টিনাও শেষ মুহুর্তের নাটকে টিকে আছে এখনও। ব্রাজিল শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়েছে ভালোমতোই। প্রায় সবগুলো গ্রুপেরই হিসাব নিকাশ উলটে গেছে। কিন্তু একটা গ্রুপ থেকে গেছে এসবকিছুর বাইরে। গ্রুপ 'জি' এর ফলগুলো হয়েছে অনুমিতই।
ইংল্যান্ড-বেলিজিয়ামের ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব। বিশ্বকাপের আগে এই ম্যাচটাকে মনে করা হচ্ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলেছে দুই দল। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর রানার আপ কে হবে সেটাই নির্ধারণ হওয়া বাকি এখন। বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোর মতো একই ধারায় না চললেও সেগুলোর প্রভাব ঠিকই পড়ছে গ্রুপ 'জি' এর ওপর।
বিশ্বকাপে জয়ের ধারা বজায় রাখতে চাইবে যে কোনো দল, গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াটাই থাকে মুখ্য বিষয়। তাতে সুবিধাও হয় খানিকটা। গ্রুপ সি আর ডি এর কথাই ধরা যাক। ক্রোয়েশিয়া গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এখন তাদের প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক। আর শেষ ষোলতেই মুখোমুখি হয়ে যেতে হচ্ছে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সকে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শুরুতেই বড় দলগুলোকে এড়ানোর একটা প্রবণতা কাজ করে প্রায় সব দলের মধ্যেই।
এখানেই ইংল্যান্ড-বেলজিয়াম ম্যাচটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। গ্রুপ জি এর সঙ্গে শেষ ষোলতে খেলা পড়বে গ্রুপ এইচ এর। ওই গ্রুপে অনুমিত ফল হলে কলম্বিয়ারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা, আর রানার আপ হিসাবে জাপান ফেভারিট। সেই হিসাবে ইংল্যান্ড-বেলজিয়াম ম্যাচের জয়ী দলের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা পড়বে কলম্বিয়ার সঙ্গে। শেষ ষোলতে এই ম্যাচে জয়ী দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে ব্রাজিল আর মেক্সিকো ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে। অর্থাৎ কাগজ কলমের হিসাবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলে আপনার প্রতিপক্ষ প্রথমে কলম্বিয়া, এরপর ব্রাজিল। আর হেরে যাওয়া দলের প্রতিপক্ষ জাপান। শক্তিমত্তার দিক দিয়ে কলম্বিয়ার চেয়ে বেশ পিছিয়ে এশিয়ার দেশটি। শেষ ষোল পার হতে তো আপনি জাপানকেই চাইবেন!
হিসাব-নিকাশ অবশ্য এখানেই শেষ নয়, গ্রুপ জি থেকে রানার আপ হয়ে উঠলে কোয়ার্টার ফাইনালেও তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষই পড়ার কথা। সেক্ষেত্রে ম্যাচ পড়বে সুইডেন আর সুইজারল্যান্ড ম্যাচে জয়ী দলের বিপক্ষে। ইংল্যান্ড বা বেলজিয়ামের দুই দলেরই চেনা প্রতিপক্ষ, ইউরোপেরই দল। তাদের হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠতে খুব বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা নয় তাদের।
অর্থাৎ রানার আপ হয়ে এই গ্রুপ থেকে উঠলে সেমিফাইনাল পর্যন্ত রাস্তাটা পরিষ্কার দেখতে পাওয়ার কথা ইংল্যান্ড বা বেলিজিয়ামের। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটতে পারে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেই। গ্রুপ জি এ এখনও শীর্ষেই আছে ইংল্যান্ড। দুই থাকা বেলজিয়ামের সঙ্গে তাদের গোল পার্থক্য, প্রতিপক্ষকে দেওয়া গোলের সংখ্যা সব সমান। শুধু মাত্র বেলজিয়ামের চেয়ে একটি হলুদ কার্ড কম দেখায় ফেয়ার প্লে নিয়মে বেলজিয়ামকে টপকে ওপরে আছে ইংল্যান্ড।
থ্রি লায়নদের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বেলজিয়াম গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া বলছেন, "এই ম্যাচটা সম্মানের জন্য হলেও জিততে চান তিনি। জিতেই ইংল্যান্ড ফিরতে চান।" কোর্তোয়া খেলেন ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে। ইংল্যান্ডের দলে আছে তার ক্লাব সতীর্থরাও। বেলজিয়ামের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই খেলেন প্রিমিয়ার লিগে। ম্যাচটা তাই এক অর্থে সম্মানের লড়াইও। আর বিশ্বকাপের মতো আসরে জয়ের ধারায় ছেদ আনতে চাইবেন কেন কোনো কোচ? সেই অর্থে দুই দলেরই জয়ের জন্যই খেলার কথা। আবার গ্রুপের শেষ ম্যাচ হওয়ায়, দুই দলেই প্রায় অবধারিতভাবে কিছু পরিবর্তন আসবে। ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। একই সুরে কথা বলেছেন বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্টিনেজও। কিন্তু দুই কোচের কণ্ঠেই ছিল ম্যাচ জয়ের প্রত্যয়। হারার জন্য হয়ত কেউই খেলবেন না। সেটা পেশাদারিত্বের মধ্যে পড়ে না। আর বিশ্বকাপের মতো আসরে তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি হেরেও যান, খুব বেশি আফসোস কি থাকবে? নাকি মনে মনে খুশিই হবেন সাউথগেট বা মার্টিনেজ?