হেরেও যখন জিতে গেল জাপান
নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষের দিকে। জাপান পিছিয়ে ১-০ গোলে। গোল করার জন্য এর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করেছে মরিয়া হয়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন থেমে গেল সবকিছু। জাপান নিজেদের অর্ধে বল নিয়ে প্রায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল, পোল্যান্ডও বল নেওয়ার চেষ্টা করল না। রেফারির শেষ বাঁশির পরও উৎকন্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে জাপান, কিছু একটা শোনার অপেক্ষায়। শেষ পর্যন্ত সেই খবরটা এলো, জাপানের খেলোয়াড়দের মুখে আনন্দের চেয়ে স্বস্তিটাই বেশি। পোল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরেও চলে গেল বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। বিশ্বাস করুন, আর নাই করুন, সেটা কম হলুদ কার্ড দেখার জন্য। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম ফেয়ার প্লের জন্য নকআউট পর্বে চলে গেল কোনো দল। কলম্বিয়ার সঙ্গে সেনেগাল নয়, নকআউটে গেছে জাপানই।
পোল্যান্ডের জন্য এই ম্যাচ থেকে পাওয়ার কিছু ছিল না। আগের দুই ম্যাচ হেরেই তাদের বিশ্বকাপ শেষ। জাপানের সামনে সমীকরণটা ছিল সহজ, এক পয়েন্ট পেলেই হবে। শুরু থেকেই জাপান খেলছিল দাপটের সঙ্গে, পোল্যান্ড ছিল্ল কোণঠাসা। কিন্তু খেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গোলের পরিষ্কার সুযোগ পেল পোল্যান্ড। ৩৪ মিনিটে আরেকটু হলে গোল পেয়েই গিয়েছিল পোল্যান্ড। পোল্যান্ডের বেরেজিনস্কির হেডটা লাইন অতিক্রম করার ঠিক মুখে ঠেকিয়ে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে তা ঠেকিয়ে দিয়েছেন জাপানের গোলরক্ষক কাওয়াশিমা। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেভই ছিল তা, শেষ পর্যন্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা প্রমাণ হয়েছে ম্যাচ শেষে। ৩৬ মিনিটে তাকাশি উসামার শট পোল্যান্ডের একজনের গায়ে দিকবদল করে গোল হতে পারত, কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেটা গিয়ে পড়ে পোলিশ গোলরক্ষক ফাবিয়ান্সকির হাতে।
তবে সেট পিসে পোল্যান্ড বার বার হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। ৫৯ মিনিটে সেই সেট পিসেই হলো সর্বনাশ। রাফাল কুরজাওয়ার ফ্রিকিকটা বক্সে ভেতর খুঁজে নিল সাউদাম্পটন ডিফেন্ডার ইয়ান বেদরেনেককে। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা বেদরেনেক ভলিতে গোল করে আনন্দে ভাসিয়েছেন পোলিশদের। বিশ্বকাপে পোল্যান্ড নিজেদের ১৮টি গোলের ১০টিই পেয়েছে সেট পিস।
জাপান কে তখন চোখ রাঙাচ্ছে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার হুমকি। কলম্বিয়া-সেনেগালের অন্য ম্যাচটা তখনো গোলশূন্য। ওই অবস্থায় সেনেগালের সঙ্গে চলে যাচ্ছে কলম্বিয়াই, কপাল পুড়ত জাপানের। গোল ব্যবধানে বাদ পড়ে যেত জাপান। অবশ্য এরপর তেঁড়েফুড়ে আক্রমণ করতে থাকে, তবে গোল করার খুব পরিষ্কার সুযোগ পায়নি।
ওদিকে ৭৪ মিনিটে কলম্বিয়াকে এগিয়ে দিয়েছেন ইয়েরি মিনা। সমীকরণটা হঠাৎ করেই বদলে গেল, জাপান-সেনেগালের পয়েন্ট ৪, গোল ব্যবধানসহ সবকিছুই সমান। হলুদ কার্ডের হিসেবে এগিয়ে জাপান, তারা খেয়েছে দুইটি কম। তবে এসব হিসেব নিকেশও শেষ হয়ে যেতে পারত। ৭৪ মিনিটে আরেকটি গোল হজমই করে ফেলেছিল জাপান, একটুর জন্য বেঁচে যায় তারা। পেতে পেতেও গোল পাননি রবার্ট লেভানডফস্কি, ডান দিক ভেসে আসা ক্রসটা রাখতে পারেননি পোস্টে। সেই গোলটা হলেই জাপানের সবকিছু ওলটপালট হয়ে যেত।
শেষ পর্যন্ত জাপান আর গোল পায়নি, শেষ দিকে এসে আর চেষ্টাই করেনি। হেরেও অবশ্য মাঠ ছেড়েছে স্বস্তি নিয়ে, কিন্তু মাথা উঁচু করে ছাড়তে পেরেছে কি?