• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    মৃত পরিবারের স্মৃতি নিয়েই বিশ্বকাপে

    মৃত পরিবারের স্মৃতি নিয়েই বিশ্বকাপে    

     

    মেক্সিকো-জার্মানি ম্যাচে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়াম হাজারো দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ। প্রায় সবার গলাতেই ঝোলানো বিশ্বকাপের ফ্যান আইডি কার্ড। সবার মাঝে ব্যতিক্রম শুধু একজন, মেক্সিকান জার্সি গায়ে খেলা দেখতে আসা এক মাঝবয়সী লোকের গলায় ৪টি আইডি কার্ড! আরও অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, ভদ্রলোক কিছুক্ষণ পরপরই আইডি কার্ডের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছছেন। কিন্তু তার গলায় ৪টি কার্ড কেনও, কেনই বা সেই কার্ডের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছেন? মেক্সিকোর গিলবার্তো মার্টিনেজের এই কান্না তার মৃত পরিবারের জন্য, যাদের নিয়েই বিশ্বকাপে গ্যালারি মাতানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন।

     

     

    স্বপ্ন, বিশ্বকাপ মাঠে বসে দেখার স্বপ্ন। বহু বছরের লালিত এই স্বপ্নকে এবার বাস্তবে রূপ দেবেন বলেই মনস্থির করেছিলেন মেক্সিকান আইনজীবি মার্টিনেজ। স্ত্রী ভেরোনিকা, ৮ বছরের ছেলে ডিয়েগো ও ৫ বছরের মেয়ে মিয়া, সবাইকে নিয়েই রাশিয়া যাওয়ার সব পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছেন। বিমানের টিকেট, ম্যাচের টিকেট, ফ্যান আইডি সংগ্রহ, হোটেল বুকিং; বাদ ছিল না কিছুই। অপেক্ষা ছিল ১২ জুনের, মেক্সিকো থেকে মার্টিনেজদের রাশিয়া যাওয়ার বিমান ছাড়ত সেদিনই।

     

    কিন্তু সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেলো এপ্রিলের ২৮ তারিখে। মিয়ামিতে ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ভেরোনিকাদের গাড়িকে ধাক্কা মারে আরেকটি গাড়ি, ওইখানেই মারা যান ভেরোনিকা ও তার দুই সন্তান। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে তখন পাগলপ্রায় মার্টিনেজ। এদিকে ঘনিয়ে আসছে বিশ্বকাপের সময়, যাদের নিয়ে যাওয়ার কথা তারাই তো নেই! কী হবে আর বিশ্বকাপে যেয়ে?

     

     

    কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর কিছুদিন আগে মনে হলো, তার পরিবারকে তো বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলন। তারা না থাকুক, তাদের স্মৃতি নিয়েই নাহয় বিশ্বকাপ দেখবেন মার্টিনেজ। একাই চলে গেলেন রাশিয়া, পরিবারের সবার আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে মেক্সিকোকে সমর্থনও জানালেন প্রাণ ভরে, রাতভর জার্মানির বিপক্ষে জয়ের উদযাপনে অংশও নিয়েছেন অন্যদের সাথে। আশেপাশের সবাই অল্প সময়ের মাঝেই জেনে গেলো মার্টিনেজের পরিবারের করুণ কাহিনী।

    সেই কাহিনী গ্যালারির গন্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে মেক্সিকো ডাগআউটেও। গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া জার্মানির বিপক্ষে জয়ের পর এক ক্ষুদেবার্তায় মার্টিনেজকে জানিয়েছেন, ওই জয়টা ছিল শুধু তার পরিবারের জন্যই! এর চেয়ে বেশি কী বা চাইতে পারেন মার্টিনেজ।

    ছেলে ডিয়েগো ছিল নেইমারের পাড় ভক্ত। তার জোরাজুরিতেই কোস্টারিকা-ব্রাজিল ম্যাচের টিকেট কেটেছিলেন মার্টিনেজ। ছেলে চাইত, নেইমারের গোল টিভিতে তো অনেক দেখা হয়েছে, এবার সামনাসামনিই দেখবে। ওই ম্যাচে যতবার নেইমারের পায়ে বল গেছে, ততবারই হয়ত আইডি কার্ডে ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে চোখ ভিজে এসেছে। আহারে ছেলেটার কত শখই না ছিল নেইমারের খেলা দেখবে!

    শেষ মুহূর্তে গোল করে আবেগে কেঁদে দিয়েছিলেন নেইমার। নেইমার হয়ত জানেন না, তার সাথে কেঁদেছেন মার্টিনেজেও। নেইমার ও বাবার কান্না দেখে কি স্বর্গে বসে খেলা দেখা ডিয়েগোরও কান্না আসছিল?