পর্তুগালকে বিদায় করে দিলেন কাভানি
পায়ে বরফের পট্টি বেঁধে বসে আছেন বেঞ্চে। চাতক পাখির মত রেফারির শেষ বাঁশির অপেক্ষা করছেন এডিনসন কাভানি। কে বলবে, ইনজুরির কারণে উঠে যাওয়ার আগে পর্তুগালের বিশ্বকাপ স্বপ্নটা ধূলিস্যাৎ করেছেন তিনিই! কাভানির অপেক্ষা শেষ হল রেফারির বাঁশিতে। আবেগটা আর ধরে রাখতে পারলেন না ‘এল ম্যাটাডর।’ ডাগআউটে এক সতীর্থকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলেন কাভানি। যে কান্না হতাশার নয়। এই মাঠেই স্পেনের বিপক্ষে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকে স্পেনের সাথে ড্র করেছিল পর্তুগাল। কিন্তু আজ রাতে যেন আর কোনো রূপকথা নেই! কাভানির জোড়া গোলে সোচিতে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটে চলে গেল উরুগুয়ে। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে কখনও গোল না পাওয়ার রেকর্ডটা আর ভাঙ্গা হল না রোনালদোর।
জোড়া গোলের পর কাভানিকে কাঁধে নিয়ে মাঠ ছাড়তে সাহায্য করেছিলেন রোনালদো। তার আগেই পর্তুগালকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছিলেন আসলে কাভানিই।
সোচির ফিশত স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধের শুরু থেকেই পর্তুগালকে চেপে ধরেছিল উরুগুয়ে। মাঝমাঠে নান্দেজ-তোরেইরাদের প্রেসিংয়ের সাথে পেরে উঠেননি কারভালহো-সিলভারা। ‘ফ্রন্টফুট’-এ ম্যাচ শুরু করা উরুগুয়ে লিডটাও নিয়ে নেয় ম্যাচে তাদের প্রথম আক্রমণেই। ৭ মিনিটে তোরেইরার পাসে ডানপ্রান্তে বল পান কাভানি। বল নিয়ন্ত্রণে এনেই বাঁ-প্রান্তে থাকা সুয়ারেজকে লম্বা পাস বাড়ান ‘এল ম্যাটাডোর।’ বুক দিয়ে নামিয়েই কিছুটা ভেতরে ঢুকে ক্রস করেন সুয়ারেজ। মার্কার রাফায়েল গুরেরোকে ফাঁকি দিয়ে ‘ফার পোস্ট’-এ জোরাল হেডে রুই প্যাট্রিসিওকে পরাস্ত করেন কাভানি। জাতীয় দলে করা কাভানির ৪৪ গোলের ১২টিই এসেছে সুয়ারেজের অ্যাসিস্ট থেকে।
গোলের পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে উরুগুয়ে। সুয়ারেজ-কাভানির দারুণ বোঝাপড়া ঠেকাতে বেশ বেগই পেতে হচ্ছিল পর্তুগিজ রক্ষণভাগকে। মাঠের অন্যপ্রান্তে গোডিন-হিমেনেজের জমাট রক্ষণের সামনেও অসহায়ই মনে হয়েছে রোনালদো-গুইদেসদের। পর্তুগিজদের দমিয়ে রেখে ২২ মিনিটে আরেকটু হলেই লিডটা দ্বিগুণ করত উরুগুয়ে। তবে ডিবক্সের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে সুয়ারেজের ফ্রিকিক দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন প্যাট্রিসিও। সুয়ারেজ-কাভানির জ্বলে উঠার দিনে কিছুটা নিষ্প্রভই ছিলেন রোনালদো। প্রথমার্ধে শটই নিতে পেরেছেন মাত্র দু’বার, কিন্তু কোনোবারই মুসলেরাকে তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। প্রথমার্ধে উরুগুয়ের ডিবক্সে একটি টাচও নিতে পারেননি তিনি।
প্রথমার্ধে একেবারেই গড়পড়তা এক পারফরম্যান্সের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই স্বরূপে ফিরতে থাকে পর্তুগাল। মাঝমাঠে বল দখলের লড়াইটা নিজেদের করে নেন কারভালহোরা, ডিবক্সেও গোডিন-হিমেনেজদের চাপে ফেলতে থাকেন রোনালদো-গুইদেসরা। ফলাফলটাও আসে হাতেনাতে। ৫৫ মিনিটে কর্ণার থেকে বাঁ-প্রান্তে বল পান রাফায়েল গুরেরো। তার ক্রস থেকে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান পেপে। ২০১৮-তে এবারই প্রথম কোনো ম্যাচে গোল হজম করল উরুগুয়ে।
দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন তিনিই। তবে ৬২ মিনিটে সেই পেপের ভুলেই আবারও লিড নেয় উরুগুয়ে। ক্লিয়ার করতে গিয়ে হেড করে বল পেছনে পাঠান পেপে। বল নিয়ন্ত্রণে এনেই কাভানিকে পাস বাড়ান রড্রিগো বেন্টাঙ্কুর। তার পাস থেকে চোখ ধাঁধানো এক বাঁকানো শটে ম্যাচে নিজের এবং উরুগুয়ের দ্বিতীয় গোল করেন কাভানি। আরও একবার সেই কাভানির গোলেই কপাল পোড়ে পর্তুগালের।
আবারও সমতায় ফেরার আশায় আগের ম্যাচের নায়ক রিকার্ডো কারেসমাকেও নামিয়ে দেন সান্তোস। গুইদেসের বদলে নামেন আন্দ্রে সিলভাও। ৭০ মিনিটে মুসলেরার হাত ফসকে বল পড়ে গেলেও গোলে শট নিতে পারেননি বের্নার্দো সিলভা। শেষদিকে কর্নারে প্যাট্রিসিওকেও এগিয়ে এনেছিলেন সান্তোস। কিন্তু দ্বিতীয়বার আর সমতায় ফেরা হয়নি তাদের। ২০১০-এর মত আবারও শেষ ষোল থেকেই বিদায় নিল পর্তুগিজরা। হয়ত নিজের শেষ বিশ্বকাপ থেকেও খালি হাতেই ফিরলেন রোনালদো।
আর ইউরোপের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল উরুগুয়ে। ১৯৩০ সালের আজকের দিনেই প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল তারা। ৮৮ বছর পর সেইদিনটাও উরুগুয়ের হয়ে থাকল স্মরণীয়।
একাদশ:
পর্তুগাল (৪-৪-২): রুই প্যাট্রিসিও; পেরেইরা, পেপে, ফন্টে, গুরেরো; কারভালহো, আদ্রিয়ান সিলভা, বের্নার্দো সিলভা, মারিও; গুইদেস, রোনালদো
উরুগুয়ে (৪-৪-২): মুসলেরা; কাসেরেস, গোডিন, হিমেনেজ, লাক্সাত; তোরেইরা, ভেচিনো, নান্দেজ, বেন্টাঙ্কুর; সুয়ারেজ, কাভানি