• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    স্পেনকে টাইব্রেকারে বিদায় করে কোয়ার্টারে রোমাঞ্চকর রাশিয়া

    স্পেনকে টাইব্রেকারে বিদায় করে কোয়ার্টারে রোমাঞ্চকর রাশিয়া    

    আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা অন্যপাশে ঘুরে আছেন, শূন্যে তাকিয়ে প্রার্থনা যেন ফাঁড়াটা কাটার। সুতোর ওপর ঝুলছে তখন স্পেন, আর ছুটছে রাশিয়া। ইনিয়েস্তার প্রার্থনা খানিকবাদে রূপ নিল সার্জিও রামোসের কান্নায়। আর নায়ক বনে গেলেন রাশিয়ান গোলরক্ষক ইগোর আকিনফেভ, গত আট বছরে যিনি আটকাতে পারেননি কোনও টাইব্রেকার শট! সেই আকিনফেভই টাইব্রেকারে ঠেকিয়ে দিলেন কোকে ও আসপাসের শট, রাশিয়াকে নিয়ে গেলেন কোয়ার্টার ফাইনালে! সোভিয়েত পরবর্তী যুগে রাশিয়ার যা বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য! 

    এর আগে ১২০ মিনিট শুধু হতাশার গল্প- স্পেনেরও, রাশিয়ারও। ১১৩৫টি পাস, ২৫টি চেষ্টা, অন-টার্গেটে ৯টি শট, বল পজেশন ৭৫ শতাংশ। ১২০ মিনিট খেলা, তবুও ম্যাচের স্পেনের একমাত্র গোলটি তাদের দেওয়া নয়, আত্মঘাতী! রাশিয়ার পাস ২৮৬টি, ৬টি চেষ্টা, অন-টার্গেটে শট ১টি, বল পজেশন ২৫ শতাংশ। স্পেনের খেলাই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছে যেন তাদের! 

    এ বিশ্বকাপ আত্মঘাতী গোল বা পেনাল্টিতে এরই মাঝে ছাড়িয়ে গেছে সব রেকর্ড। সেই রেকর্ডটাই আরেকটু সমৃদ্ধ হলো স্পেন-রাশিয়ার ম্যাচে। ১২ মিনিটে ইগনাশেচিভের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গিয়েছিল স্পেন, এ বিশ্বকাপে যা দশম। আসেনসিওর ফ্রি-কিক থেকে আসা বলে ইগনাশেচিভের লক্ষ্য ছিল শুধু রামোসকে ফেলে দেওয়ায়, বল কখন এসে তার পায়ে লেগেছে, তিনি জানেনই না!

    এরপর চলেছে শুধু স্প্যানিশ পাসের প্রদর্শনী! যেন লক্ষ লক্ষ পাস, কয়েকটা শুধু সামনে! রাশিয়াও সময় নিয়েছে, সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছে। ৪০ মিনিটে সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে তারা, জুবার হেড আটকে গেছে লাফিয়ে ওঠা পিকের হাতে, গোল থেকে গজখানেক দূরে ছিলেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। রেফারি পেনাল্টি দিয়েছেন সরাসরি, পিকেও দেখেছেন হলুদ কার্ড। রাশিয়া বিশ্বকাপে এটি ২৬তম পেনাল্টি। ডি গিয়াকে উলটো দিকে লাফাতে বাধ্য করেছেন জুবা, রাশিয়াকে ফিরিয়েছেন সমতায়। 

     

    প্রথমার্ধে যেখান থেকে শুরু করেছিল স্পেন, দ্বিতীয়ার্ধে শুরু করেছে সেখান থেকেই। ৬০ মিনিটের ভেতরই তিনটি পরিবর্তন এনেও সুবিধা করতে পারেনি রাশিয়াও। শেষ ১০ মিনিটেই যা একটু রোমাঞ্চ দেখা গেছে মস্কোয়, ইনিয়েস্তার ভলি আটকে দিয়েছেন আকিনফেভ। ৮৭ মিনিটে রাশিয়া প্রতি-আক্রমণে গিয়েও শেষ পর্যন্ত দেখেনি গোলের মুখ। নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে ড্র থেকেই। 

    অতিরিক্ত সময়ে স্পেন গতি বাড়িয়েছে, আক্রমণের ধারও বেড়েছে তাদের। ৯৯ মিনিটে আসেনসিওর শট গেছে আকিনফেভের হাতে, ১০৯ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে দারুণভাবে এগিয়েছিলেন রদ্রিগো, তবে গোলে শট করার যুতসই অ্যাঙ্গেলটাই পাননি, রাশিয়া বেঁচে গেছে কোনোরকম। ১১৪ মিনিটে অতিরিক্ত সময়ের বড় রোমাঞ্চ, কোকের ফ্রিকিক থেকে পিকেকে ফাউল করা হয়েছে- এমন আবেদন ছিল স্পেনের। তবে ভিএআরে নাকচ হয়েছে সেটা। পরের মিনিটে সুযোগ পেয়েছিল রাশিয়া, তবে ক্রসে হেডটা হয়নি ঠিকঠাক। অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা মিনিটে রদ্রিগোড় বক্সের বাইরে থেকে করা শট সরাসরিই গেছে গোলরক্ষকের হাতে। 

    ৯৬ মিনিটে হয়েছে একটা ইতিহাস, কুজিয়ায়েভের জায়গায় চতুর্থ রাশিয়ান বদলি হিসেবে নেমেছেন এরোখিন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে চতুর্থ বদলি এই প্রথম, নতুন নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত সময়ে গেলে অতিরিক্ত একটি বদলি পাবে দল।

    তবে সে ইতিহাস মিলিয়ে গেছে রাশিয়ান রোমাঞ্চে। একটু কান পাতুন, মস্কোর উল্লাসটা কানে আসতে পারে আপনার। হয়তো এখনও থামেনি সেটা। আর তাতে মিশে আছে অবশ্য সার্জিও রামোসদের কান্না। নিঃশব্দই বটে! 

     

    স্পেন: ডি গিয়া, পিকে, রামোস, জর্দি আলবা, নাচো, কোকে, বুস্কেটস, ডেভিড সিলভা, আসেন্সিও, ইসকো, ডিয়েগো কস্তা

    রাশিয়া: আকিনফেভ, ফার্নান্দেজ, কুতেপভ, ইগনাশেভিচ, কুদ্রিয়াসভ, কুজায়েভ, জবনিন, গলোভিন, জিরকভ, সামেদভ, জুইবা