নেইমারে সওয়ার হয়ে শেষ আটে ব্রাজিল
নেইমার হয়ত এর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে শিরোনাম হয়েছেন মাটিতে গড়াগড়ির জন্যই, তাতে অনেকদিক দিয়েই ঢাকা পড়ে গেছে তার ঝলক। মেক্সিকোর বিপক্ষে শেষ ষোলর ম্যাচেও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। কিন্তু তার আগে প্রতিপক্ষকে ছিটকে দিয়েছেন ম্যাচ থেকে। এই ম্যাচের পর সবকিছুই ঢাকা পড়ে যাওয়ার কথা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসিরা পারেননি, পেরেছেন নেইমার। এক গোল করেছেন, আরেকটি করিয়েছেন, ব্রাজিল নেইমারের কাঁধে ভর দিয়েই মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে উঠে গেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।
সামারায় আক্রমণাত্মক শুরুটা করেছিল মেক্সিকো। একেবারে শুরুর মিনিট থেকেই চড়াও হয়েছিল ব্রাজিলের রক্ষণের ওপর। ২ মিনিটেই গুয়ার্দাদোর ক্রস সেভ করতে হয়েছিল অ্যালিসন বেকারকে। ব্রাজিল গোলরক্ষক অবশ্য পুরোপুরি বিপদ মুক্ত করতে পারেননি। হার্ভি লোজানো বল পেয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু শেষের কাজটা করতে পারেননি তিনি। মাঝমাঠে থেকে দেওয়া লং বলে তিন ফরোয়ার্ডই ছিল মেক্সিকোর লক্ষ্য। অবশ্য বেশিরভাগ সুযোগ এসেছিল বাঁ প্রান্ত দিয়ে। প্রথম ২৫ মিনিটে কার্লোস ভেলা দুইবার ভালো ক্রস করেছিলেন, দুইবারই হেক্টর হেরেরা বল পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রাজিলের দুই সেন্টারব্যাকের দুর্গ ভেঙে আর শটই করতে পারেননি। ডান প্রান্ত দিয়ে লোজানোও একটা ক্রস করেছিলেন ১৫ মিনিটে, সেবার লক্ষ্য ছিল হাভিয়ের হার্নান্দেজ। কিন্তু ক্রসটা জায়গামতো পাননি মেক্সিকো স্ট্রাইকার।
এরপরই ম্যাচে ফেরে ব্রাজিল। সেলেসাওদের আসলে ম্যাচে ফেরান নেইমারই। ৬ মিনিটে একবার ডিবক্সের বাইরে থেকে শট করে গিলের্মো ওচোয়ার পরীক্ষা নিয়েছিলেন। সহজ শটও হাত ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল ওচোয়ার। কিন্তু ২৫ মিনিটে ওচোয়াও ফিরলেন পুরনো রূপে। আলভারেজ, আয়ালা, মার্কেজ মিলে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন নেইমারকে। সবাইকে ফাঁকি দিয়েই ডিবক্সের ভেতর ঢুকে যান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। শটটাও করেছিলেন ভালো, কিন্তু ওচোয়ার বাঁ হাতে আটকে যায় নেইমারের গোলমুখী শট।
৩১ মিনিটে আবারও ঢুকে পড়েছিলেন নেইমার, সেবার অবশ্য এডসন আলভারেজ সময়মতো ট্যাকেল করে মেক্সিকোর বিপদ হতে দেননি। এর দুই মিনিট পর আবারও ওচোয়ায় পার পায় মেক্সিকো। সে দফায় গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে বঞ্চিত করেন ওচোয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের খেলায় ছন্দটা ফেরে আরও ভালোভাবে। মেক্সিকোকে ৪৮ মিনিটেই বিপদের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন ফিলিপ কৌতিনহো। ৩ মিনিট পর মেক্সিকোকে ব্রাজিল দেখিয়েছে কেন তারা শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার। ডিবক্সের বাইরে নেইমারের পায়ে বল, দুই তিনজন ডিফেন্ডারকে লোভ দেখিয়েও শট করলেন না, দিলেন ব্যাকহিল। সেটা খুঁজে পেল উইলিয়ানকে। উইলিয়ান গতি আর কৌশল দিয়ে ছিটকে ফেললেন সালসিদোকে। এরপর করলেন ক্রস, সেটা নাগাল পেলেন না ওচোয়া, তার পেছনে থাকা হেসুসও পা বাড়িয়ে পারলেন না। যিনি পেলেন তার নামটাই লেখা ছিল বলে। নেইমার ডান পা বাড়িয়ে ফাঁকা জালে ঢুকিয়ে দিলেন বল। ব্রাজিল ভাসল আনন্দে। ওই গোলে ব্রাজিল হয়ে গেল বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি গোল করা দেশ।
প্রথম গোলের পর উইলিয়ানই আরও অনুপ্রেরণা জোগালেন ব্রাজিলের আক্রমণে। তার গতির সঙ্গে মেক্সিকোর রক্ষণ তখন হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু ওচোয়াকে তবুও হারানো গেল না। প্রথমে শট করলেন পাউলিনহো, সেটা ঠেকালেন ওচোয়া। পরেরবার উইলিয়ান ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে গেলেন ডিবক্সে। এরপর করলেন বুলেট গতির এক শট, ওচোয়া হয়ে গেলেন আরও দুর্দান্ত। দারুণ এক সেভ করে দলের সম্ভবনা বাঁচিয়ে রাখলেন তিনি। কিন্তু দলের আক্রমণভাগের ব্যর্থতায় দিনশেষে হতাশই হলেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে বলার মতো একটা সুযোগই তৈরি করতে পেরেছিল মেক্সিকো। ভেলার নেওয়া ডিবক্সের বাইরের শট সহজেই ঠেকিয়ে দিয়েছেন অ্যালিসন। দস সান্তোস, রাউল হিমেনেজদের নামিয়েও কাজ হয়নি মেক্সিকোর। ডিবক্সের বাইরে থেকে মেক্সিকোর এলোমেলো শট একেবারেই ভীতি ছড়ায়নি সিলভা, মিরান্ডার রক্ষণে। ওই দুইজন তো ছিলেনই, ফ্যাগনার আর লুইজও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ব্রাজিলের শক্তিটা দেখিয়ে দিয়েছেন আরেকবার। রক্ষণ থেকে আক্রমণ- সবমিলিয়ে দুর্দান্ত।
তবে স্বস্তিতে থাকতে ব্রাজিলের দরকার ছিল আরেকটা গোল। ৮৮ মিনিটে সেটাও পেয়ে যায় সেলেসাওরা। নেইমারই বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন ডিবক্সের ভেতর, সেই বাঁ দিক দিয়েই। এরপর বদলি রবার্তো ফিরমিনোর জন্য বলটা বাড়ালেন, তিনিও ফাঁকা জালের সামনে ভুল করলেন না।
ওচোয়ার তাই আরেকবার অতিমানব হয়ে উঠেও লাভ হলো না। মেক্সিকো টানা ৭ বারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিল। আর ব্রাজিলের বিপক্ষে কখনই বিশ্বকাপে গোল করতে না পারার রেকর্ডটাও সঙ্গী হলো আরেকবার।
একাদশ
ব্রাজিল
অ্যালিসন, ফ্যাগনার, থিয়াগো সিলভা, ফিলিপে লুইস, ফিলিপ কৌতিনহো, পাউলিনহো, উইলিয়ান, গ্যাব্রিয়েল হেসুস, নেইমার
মেক্সিকো
গিলের্মো ওচোয়া, আলভারেজ, আয়ালা, সালসেদো, গ্যালার্দো, রাফায়েল মার্কেজ, হেক্টর হেররা, কার্লোস ভেলা, গুয়ার্দাদো, লোজানো , হাভিয়ের হার্নান্দেজ