অবিশ্বাস্য বেলজিয়ামে 'নীল' জাপান
৫২ মিনিটে যখন তাকাশি ইনুই গোল করলেন, তখন বিস্ময় এবং অনিশ্চয়তায় ঠাসা এক বিশ্বকাপে আরও এক অধ্যায়ের দুয়ারে জাপান। ২-০ গোলে এগিয়ে এশিয়ার দলটি, প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিন্তু নাটকের বাকি ছিল তখনও। ইয়ান ভার্টনহেন এবং মারুয়ান ফেলাইনির গোলে সমতায় ফিরল বেলজিয়াম। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে বদলি খেলোয়াড় কেইসুকে হোন্ডা ‘নাকেল বল’ ফ্রিকিক দুর্দান্তভাবে সেভ করে দলকে সমতায় রাখলেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া। রেফারির ‘এক্সট্রা টাইম’-এর বাঁশি বাজানো তখন সময়ের ব্যাপার। জাপানের কর্ণার নিয়ন্ত্রণে এনেই ডি ব্রুইনকে পাস বাড়ালেন কর্তোয়া। প্রতি আক্রমণে তখন দুর্দান্ত গতির বেলজিয়ামের সামনে অসহায় হয়ে পড়ল জাপান। ডি ব্রুইন এগুলেন, ডান প্রান্তে পাস বাড়ালেন থমাস মুনিয়েরকে। ডানপায়ের ক্রসে লুকাকুকে পাস বাড়ালেন তিনি।
ডিফেন্ডারের চাপে থাকা লুকাকু বল ছেড়ে দিলেন পেছনে থেকে দৌড়ে আসা নাসের চাদলির জন্য। ডিবক্সে ঢুকেই বাঁ-পায়ের আলতো টোকায় বল জালে পাঠালেন বেলজিয়াম। আরও এক দুর্দান্ত ফিরে আসার গল্প দেখল রাশিয়া বিশ্বকাপ। রুস্তভ-ন-দন্যুতে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ৩-২ গোলের জয়ে শেষ আটে চলে গেল বেলজিয়াম। শুক্রবার ব্রাজিলের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে রবার্তো মার্টিনেজের দল। ১৯৭০ সালে জার্মানির পর এবারই প্রথম বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও জয় নিয়েই ফিরল কোনো দল।
বিশ্বকাপের অন্যতম এই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের প্রথমার্ধ দেখে বোঝার কোনো জো-ই ছিল না, ঠিক কী অপেক্ষা করছে দ্বিতীয়ার্ধে। ম্যাড়ম্যাড়ে এক প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লিডটা নিয়েছিল জাপানই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ভার্টনগেনেরই ভুলে গোল করেছিলেন গেঙ্কি হারাগুচি। কাগাওয়ার থ্রু পাস থেকে বেলজিয়ান ডিফেন্ডারের ভুলে বল পেয়ে যান হারাগুচি। ডানপায়ের জোরাল শটে জাপানকে লিড এনে দেন তিনি। মিনিটখানেক পরই এডেন হ্যাজার্ডের শট বারে প্রতিহত হওয়ার পরপরই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইনুই। ২-০ গোলে পিছিয়ে দল, সময় বাকি মাত্র ৩৮ মিনিট। এমন সময় মুনিয়েরের ক্রসে গোলের মাত্র গজ ছয়েক দূর থেকেও যখন লুকাকু বাইরে হেড করলেন, তখন সবাই আবারও এক বিস্ময়ের অপেক্ষায়।
কিন্তু এই বিশ্বকাপ যেন শেষ হইয়াও হইল না শেষেরই গল্প। । এরপরের গল্পটা কেবলই বেলজিয়ামের ফিরে আসার দুর্দান্ত এক গল্প। শুরুটা করেন সেই ভার্টনগেনই। ৬৯ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত এক হেডে ব্যবধান কমান তিনি। গোলের পর তার উদযাপনের সময় বেলজিয়ান সমর্থকদেরও উদ্বুদ্ধ করে যান ভার্টনগেন। বেলজিয়ান সমর্থকেরাও থেমে থাকেননি। ভার্টনগেনের গোলে জোর গর্জন ফিরে আসে রস্তভ-ন-দন্যুতে উপস্থিত বেলজিয়ান সমর্থকদের মাঝে। দলও ফেরে স্বরূপে। বিশ্বাসে মেলায় বস্তু। কথাটা আবারও সত্য প্রমাণ করল বেলজিয়াম। ৭৪ মিনিটে হ্যাজার্ডের ক্রসে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান মারুয়ান ফেলাইনি। তিনি নামার পর থেকেই বেলজিয়ামের খেলায় এক নতুন আগ্রাসন, সেই হারানো প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল। তার গোলেই শেষ আটের নিভুনিভু প্রদীপটা জ্বলে উঠে পুরনো শিখায়।
তবে জাপানও কম যায় না। দুই গোল খেলেও রক্ষণে ছাড় দেননি লুকাকুদের। দুর্দান্ত কয়েকটি ব্লকে দলকে সমতায় রেখেছিলেন তারাই। ডিফেন্ডারদের সাথে নিজের কাজটা করে গেছেন গোলরক্ষক কাওয়াশিমা। ম্যাচের মাত্র মিনিট পাঁচেক আগে, চাদলির হেড দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি। ফিরতি বলে গোলের মাত্র গজ ছয়েক দূর থেকে লুকাকুর ফিরতি হেড যখন জালে জড়ানোর অপেক্ষায়, তখন আবারও শরীর হাওয়ায় ভাসিয়ে সেভ করেন কাওয়াশিমা। তবে প্রতি আক্রমণে খেলা জাপানের বিপক্ষে কাওয়াশিমার মতই এক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কর্তোয়া। একেবারে ৯০ মিনিটে নাগাটোমোর শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি। আর দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে প্রায় ৪০ গজ থেকে সেভ করেছেন হোন্ডার দারুণ ফ্রিকিক। প্রতি আক্রমণের গোলে ডি ব্রুইন, চাদলিদের কথা মনে রাখলেও কর্তোয়ার কারণেই সুযোগটি পেয়েছিল বেলজিয়াম।
একাদশ:
বেলজিয়াম (৩-৪-১-২): কর্তোয়া; কম্পানি, অল্ডারওয়েরেল্ড, ভার্মাইলেন; মুনিয়ের, ডি ব্রুইন, উইটসেল, কারাস্কো; হ্যাজার্ড; লুকাকু, মার্টেনস
জাপান (৪-২-৩-১): কাওয়াশিমা; শোজি, নাগাটোমো, সাকাই, ইয়োশিদা; শিবাসাকি, হারাগুচি; হাসিবি, কাগাওয়া, ইনুই; ওসাকো