হেরেও যেখানে জিতে গেছে জাপান
শেষ বাঁশি বেজেছে অনেক আগেই। রস্তোভ অ্যারেনা তখন অনেকটাই ফাঁকা। মাঠের বাইরে চলছে বেলজিয়াম সমর্থকদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস। স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীরাও ধীরে ধীরে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিস্তব্ধ সেই স্টেডিয়ামে তখনও অবশ্য দেখা যাচ্ছিল ম্যাচ দেখতে আসা কিছু জাপানিজ সমর্থককে। বেলজিয়ামের অবিশ্বাস্য ফিরে আসার রাতে জাপানের হার দেখার পরেও ‘ভদ্রতা’ ও স্টেডিয়ামের প্রতি ‘দায়িত্বটা’ ভুলতে পারেনি জাপানিজ সমর্থকরা। রাশিয়াকে বিদায় বলার আগে কালও গ্যালারি পরিষ্কার করেছেন তারা, রেখে গেছেন অনন্য এক দৃষ্টান্ত।
এক হাত দিয়ে চোখ মুছছেন, আরেক হাত দিয়ে হাজারো দর্শকের ফেলে যাওয়া পানির বোতল, বিয়ারের ক্যান, বেঁচে যাওয়া খাবার পলিথিনে তুলছেন। ময়লা একত্র করে আরেকজনের হাতে তুলে দেওয়ার সময়ও একে অন্যকে সান্ত্বনা দিয়েছেন জাপানিজরা। জাপান-বেলজিয়ামের ম্যাচের যে অবস্থা ছিল, এক পর্যায়ে হয়ত কোয়ার্টারে যাওয়ার স্বপ্নই দেখেছিলেন এই ভক্তরা। হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে দলের খেলা দেখতে এসে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। তবে শেষ মুহূর্তের গোলে ম্যাচ হারার শোককে একপাশে সরিয়ে রেখে জাপানিজরা হাত লাগিয়েছেন মাঠ পরিষ্কার করার কাজেই।
মাঠ পরিষ্কার করার রেকর্ড অবশ্য আগেও আছে জাপানিজদের। এই বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্বে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর স্টেডিয়ামের ময়লা আবর্জনা নিজ হাতেই পরিষ্কার করেছিলেন জাপান সমর্থকের একটি দল। সেই ঘটনায় প্রশংসার বন্যা বয়ে গিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু সেদিনের চেয়ে কালকের পরিস্থিতি ছিল একটু ভিন্ন। ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পড়েও ৯৪ মিনিটে গোল খেয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে জাপানের। দলের এমন হারে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বহু সমর্থক। তারাই আবার চোখের পানি মুছে পরিষ্কার করেছেন গ্যালারির ময়লা।
শুধু জাপান সমর্থকরা নয়, পরিষ্কার পরিচ্ছনতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জাপানিজ ফুটবলাররাও। ফিফার ভেন্যু বিষয়ক সমন্বয়ক প্রিসিলা জ্যানসেনস তার টুইটে জানিয়েছেন, ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরে হারাগুচি-হোন্ডারা নিজ হাতেই পরিষ্কার করেছেন সবকিছু। বেঞ্চ, ড্রেসিংরুমে নিজেদের বসা ও জিনিস রাখার জায়গা, ময়লার ছাপ নেই কোথাও! সবকিছু গুছিয়ে স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় জাপানিজ ফুটবলাররা ড্রেসিংরুমে রেখে গেছেন ছোট্ট একটি চিরকুট। সেখানে রাশিয়ান ভাষায় লেখা, ‘ধন্যবাদ’।
একটু জন্য গড়া হয়নি রেকর্ড, কোয়ার্টারের স্বপ্নটা অধরাই রয়ে গেছে জাপানিজদের। ম্যাচ হারলেও জাপানের সমর্থক ও ফুটবলাররা কিন্তু বাড়ি ফিরছেন হৃদয় জিতেই।