রোচের পাঁচের 'প্যাঁচে' পড়ে ঘুরপাক খেল বাংলাদেশ
প্রথম টেস্ট, প্রথম দিনশেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৪৩ অল-আউট (লিটন ২৫, রোচ ৫/৮, কামিন্স ৩/১১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ২০১/২ (ব্র্যাথওয়েট ৮৮*, স্মিথ ৫৮, মাহমুদউল্লাহ ১/৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫৮ রানে এগিয়ে
এমন দিনে নুরুল হাসানের ওই অভিনয়টাই সবচেয়ে উপযুক্ত। ক্যাচটা হয়নি জানেন, তবুও গ্লাভস থেকে বল ওপরে ছুঁড়ে উদযাপন করছিলেন বাংলাদেশ উইকেটকিপার। নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ড ৪৩ রানে অল-আউট হয়ে, নিজে একটা সহজ ক্যাচ মিস করে, সব মিলিয়ে ৬৯ ওভার বোলিং করে প্রতিপক্ষের ২টির বেশি উইকেট নিতে না পারলে নুরুলদের আর কিইবা করার থাকে!
পাঁচ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে বেশ চমকে গেছে বাংলাদেশ। নর্থ সাউন্ডের উইকেটের ঘাস দেখে, কেমার রোচের বোলিংয়ের পর মিগুয়েল কামিন্সের বলে, এরপর ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, ডেভন স্মিথ, কাইরন পাওয়েলের ব্যাটিংয়ে- বাংলাদেশের জন্য যেন চমকের পসরা বসেছিল এদিন।
শুরুটা করেছিলেন কেমার রোচ। ইনিংসের বয়স ১০ ওভারও হয়নি, ক্যারিবীয় পেসারের তখনোই হয়ে গেছে ৫ উইকেট! তামিম, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ- বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভকে একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন রোচ। লিটন দাসের ২৫ সর্বোচ্চ স্কোর, তার ৫৩ বলের ট্যালিটা সবচেয়ে বেশি, একমাত্র দুই অঙ্ক ছোঁয়া ব্যাটসম্যানও তিনিই। ৪৩ রানেই শেষ বাংলাদেশ। টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন জ্যাসন হোল্ডার, তবে এতোটা আশা করেছিলেন নাকি? হয়তো হোল্ডারও চমকে গেছেন কিছুটা। এর আগে ২০০৭ সালে ৬২ রানে অল-আউট হওয়াটাই সর্বনিম্ন স্কোর ছিল বাংলাদেশের।
ওয়াইড অব দ্য ক্রিজ থেকে বোলিং করে যাওয়া রোচের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে পা না নড়িয়ে খোঁচা মেরে শুরুটা করেছিলেন তামিম। এরপর অতি-আত্মবিশ্বাসী ড্রাইভ কাল হয়েছে মুমিনুলের, মুশফিক ধাতস্থ হওয়ার আগেই এলবিডব্লিউ, জোরের ওপর খেলতে গিয়ে সাকিবের পরিণতি মুমিনুলের মতোই, মাহমুদউল্লাহ কিছু বুঝে না উঠতেই এজড। মাহমুদউল্লাহর উইকেট দিয়ে হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন রোচ। দ্বিতীয় উইকেট উদযাপনের সময় থেকেই খোঁড়াচ্ছিলেন, ৫-১-৮-৫ এমন বোলিং ফিগার নিয়ে উঠে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবে তার আগেই ১৯৯৯ সালের পর হয়ে গেছেন ১০ ওভারের ভেতর ৫ উইকেট নেওয়া তৃতীয় বোলার।
রোচ বেরিয়ে যাওয়ার পর দৃশ্যপটে হাজির মিগুয়েল কামিন্স। বেশ একটা উইকেটখরা যাচ্ছিল এই পেসারের, প্রতি-আক্রমণ ধরনের কিছু একটা করতে গিয়ে উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে সেই খরা কাটিয়েছেন লিটন দাস। একই অবস্থা নুরুলের, ফ্লিক করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন স্লিপে, একই জায়গায় আউট হয়েছেন মেহেদিও।
সর্বনিম্ন রানের বিশ্বরেকর্ডটা ততক্ষণে আড়াল হয়েছে, তবে মেহেদির পর কামরুল হোল্ডারের শর্ট বল সামলাতে না পেরে আউট হওয়ার সময় সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডে বাংলাদেশ ছিল পাঁচে। সেখান থেকে যে পাঁচধাপ এগুলো (অথবা পেছালো) বাংলাদেশ, তাতে রুবেল হোসেন ও আবু জায়েদকে কৃতিত্ব দিতেই হবে!
লাঞ্চের আগেই শেষ বাংলাদেশের ব্যাটিং, বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতি সম্মান জানিয়েই কিনা সেই ইনিংস টিকলো ১০১ মিনিট, ১১২ বল। এরপর যা হয়, ভোজবাজির মতো যেন বদলে গেল উইকেট। ঘাস মরে গেল বোধহয়, ময়েশ্চার শুকিয়ে এলো, বাউন্স হাওয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু ব্যাটিং-ই করতে লাগলো।
আদতে এত কিছু হয়নি। রুবেল হোসেন, সাকিব আল হাসান বেশ আঁটসাঁট বোলিং করেছেন। তবে সেই যে উইকেটের ‘তূণ’, সেটাই ছিল না তাদের কাছে। সাকিব টার্ন খুঁজে পাননি, স্কিডও করেনি তার বল। রুবেল ধারাবাহিক থেকে গেছেন, তবে উইকেট নেওয়ার মতো কিছু পয়দা করতে পারেননি।
চার বছর পর ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি পেরিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন বছর পর টেস্টে ফেরার চতুর্থ টেস্টের মাথায় দ্বিতীয় ফিফটি পেয়েছেন ডেভন স্মিথ, ৭ম সেঞ্চুরি থেকে ১২ রান দূরে দাঁড়িয়ে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। অবশ্য স্মিথ বা ব্র্যাথওয়েট- দুইজনই পেয়েছেন সুযোগ।
৩৪ রানের মাথায় স্মিথের সহজ ক্যাচ ছেড়েছিলেন নুরুল, কামরুল ইসলামের বলে। আর শেষে এসে ৮০ রানের মাথায় ব্র্যাথওয়েটকে বন্দি করতে পারেননি মিড-অফে দাঁড়ানো মুশফিক, বোলার এবার সাকিব। এতো কিছুর ভিড়ে যা একটু উল্লাসের সুযোগ, তা এনে দিয়েছেন অভিষিক্ত আবু জায়েদ ও মাহমুদউল্লাহ। অনেক চেষ্টার পর স্মিথ খোঁচা মেরেছেন জায়েদের অফস্টাম্পের বাইরের বলে, নুরুল অবশ্য এবার ভুল করেননি। আর ভুল শুধরিয়ে পাওয়েলের ক্যাচটা দারুণভাবে নিয়েছেন লিটন, শেষদিকে আসা মাহমুদউল্লাহর বোলিংয়ে।
মাহমুদউল্লাহর ড্রিফটে লিটনও ধোঁকা খেয়েছিলেন, নিজের বামে সরে গিয়েও শেষ মুহুর্তে ডানে ঝাঁপিয়ে নিয়েছেন ফিফটি থেকে দুই রান দূরে থাকা পাওয়েলের অসাধারণ ক্যাচ।
তবে বাংলাদেশ অবশ্য চাইলেই ৪৩ রানের ভুলটা সহসাই শুধরে নিতে পারছে না, মুছে ফেলা তো সম্ভবই নয় রেকর্ড বই থেকে। আপাতত তাই নুরুলের ওই উদযাপনের অভিনয়টাই সম্বল। অন্তত অ্যান্টিগার প্রথম দিনে।