মৌসুমের প্রথম শিরোপার লড়াই
আগামীকাল, ২রা আগস্ট বাংলাদেশ সময় রাত ৮.০০ টায় ইংলিশ ফুটবল মৌসুমের প্রথম ম্যাচ কমিউনিটি শিল্ডে মুখোমুখি হবে লন্ডনের দুই ক্লাব। লিগ জয়ী চেলসি এবং এফএ কাপ জয়ী আর্সেনাল দুই দলই চেষ্টা করবে লিগ মৌসুম শুরু হবার আগেই আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে নিতে।
আর্সেনাল প্রাক মৌসুম প্রস্ততি ম্যাচের সবগুলোতেই জিতেছে। ঘরে তুলেছে প্রিমিয়ার লিগ এশিয়া ট্রফি আর এমিরেটস কাপ। দলটির প্রায় সব খেলোয়াড়ই ফিট রয়েছেন এবং ভাল ফর্মেই আছেন। চেলসি ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নস কাপে প্রথম ম্যাচেই নিউ ইয়র্ক রেড বুলসের কাছে ৪-২ ব্যবধানে হারলেও পরের দুইম্যাচে পিএসজি এবং বার্সেলোনাকে টাইব্রেকারে হারিয়েছে। তবে প্রাক মৌসুমের ম্যাচগুলোতে চেলসির রক্ষণভাগের পারফরম্যান্স খুব একটা ভাল ছিল না।
দুই দলেরই গ্রীষ্মকালীন দলবদল মোটামুটি নীরব এখন পর্যন্ত। আর্সেনালের একমাত্র অন্তর্ভুক্তি গোলকিপার পিটার চেক, চেলসি কিংবদন্তি। ১০.৯ মিলিয়ন পাউন্ডে এমিরেটসে যোগ দিয়েছেন।
বেশকিছু প্লেয়ারকে ছেড়ে দিয়েছে আর্সেনাল। ফরাসি মিডফিল্ডার আবু দিয়াবি, জার্মান তারকা লুকাস পোডলস্কি দল ছেড়ে গেছেন। ধারে ওয়েস্টহ্যামে যোগ দিয়েছেন কার্ল জেনকিনসন, আয়াক্সে ইয়াইয়া সানোগো, গোলকিপার শেজনি গিয়েছেন এএস রোমায়।
চেলসির বড় অন্তর্ভুক্তিগুলো মূলত 'রিপ্লেসমেন্ট'। চেক-এর বদলে এসেছেন স্টোক সিটির গোলকিপার আসমির বেগোভিচ, দ্রগবার বদলে লোনে আনা হয়েছে ফ্যালকাওকে।
পরিসংখ্যান:
* আর্সেনাল ২০ বারের অংশগ্রহণে ১৩ বার (১ বার যৌথভাবে) শিল্ড জিতে নিয়ে অবস্থান করছে সবচেয়ে বেশি শিল্ড জেতার তালিকায় ৩ নম্বরে।
* চেলসি ১০ বার অংশগ্রহণ করে জিতেছে ৪ বার। সবচেয়ে বেশি শিল্ড জেতার তালিকায় আছে ৬ নম্বরে।
* গত ১৫ বছরে মেজর প্রতিযোগিতার ফাইনালে মাত্র দুবার লন্ডনের এই দুদল মুখোমুখি হয়েছে। ২০০২ এফএ কাপ ফাইনালে আর্সেনাল ২-০ ব্যবধানে জেতে। ২০০৭ লিগ কাপ ফাইনালে চেলসি ২-১ ব্যবধানে জেতে।
* দুদল একবারই মুখোমুখি হয়েছে কমিনিউটি শিল্ডে। ২০০৫ সালের সেই ম্যাচে ২-১ গোলে জেতে চেলসি। কমিনিউটি শিল্ড ম্যাচে আর্সেনালের শেষ পরাজয় সেটা।
* দুদল প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ১৮৬ বার। ৭১ জয় আর্সেনালের, ৫৯ জয় চেলসির। বাকি ৫৬ ম্যাচ অমীমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়েছে।
* সাম্প্রতিক রেকর্ড গানার্সদের পক্ষে কথা বলছে না, সর্বশেষ ৮ দেখায় চেলসির বিপক্ষে জিততে পারেনি আর্সেনাল যার ৩টি ড্র এবং বাকি ৫টি হার।
অন্দরমহলের খবর:
গত মৌসুমের শেষ দিকে আঘাত পাওয়া ড্যানি ওয়েলব্যাক এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। এছাড়া কোপা আমেরিকায় খেলা অ্যালেক্সি সানচেজ আর গোলকিপার দিয়েগো অসপিনা ছুটি শেষে ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন। তারা এ ম্যাচে খেলবেন না।
চেলসির তেমন ইনজুরিজনিত সমস্যা নেই। গ্যারি কাহিল ও দিয়েগো কস্তা হালকা চোট পেলেও এখন পুরোপুরি ফিট।
কৌশল যা হতে পারে:
চেলসি তাদের গত মৌসুমের ৪-২-৩-১ ফর্মেশন অব্যাহত রাখবে। থিবো কোঁর্তোয়ার সামনে ইভানোভিচ, টেরি, ক্যাহিল এবং আযপিলিকুয়েতা সম্বলিত রক্ষণভাগকে ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের অন্যতম সেরা বলে পরীক্ষিত।
রক্ষণাত্নক মিডফিল্ডার মাতিচ গত মৌসুমে চেলসির সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফর্মার, মধ্যভাগে শারীরিক উপস্থিতিকে দারুণভাবে ব্যবহার করেন। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে থাকবেন সেস্ক ফ্যাব্রিগাস। গত মৌসুমে লিগে সর্বোচ্চ ১৮ অ্যাসিস্ট তার। ব্রাজিলিয়ান রাইট উইঙ্গার উইলিয়ানকে অত্যন্ত পরিশ্রমী রোল পালন করতে হয় সাধারনত, আক্রমণ আর রক্ষণে ওঠা-নামা করে দলকে সহায়তা করেন। আর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে দেখা যেতে পারে আরেক ব্রাজিলিয়ান অস্কারকে।
আক্রমণভাগের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকবেন গত মৌসুমে ২০ গোল করা কস্তা। লেফট উইঙ্গার এডেন হ্যাজার্ড অসাধারন ড্রিবলার এবং গত মৌসুমে ফুটবল বোদ্ধাদের মতে ইপিএল-র সেরা ফুটবলার। বদলি হিসেবে দেখা যেতে পারে রামিরেস, ফ্যালকাও বা রেমিকে।
চেলসির মূল কৌশল হল ফ্যাব্রেগাস নির্ভর। তিনি যদি কিছুটা আক্রমণাত্মক ভূমিকায় থাকেন, তখন চেলসির খেলাটাও ওরকম হয়। আর চেলসি রক্ষণাত্মক খেললে মাতিচ বাড়তি সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে খেলবেন।
গত মৌসুমের শেষভাগে আর্সেনাল ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে খেলে দারুণ সাফল্য পেয়েছে। এই ম্যাচে একই ফর্মেশন দেখা যাবে প্রায় নিশ্চিত।
প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে পুরোনো দলের বিপক্ষেই আর্সেনালের হয়ে অভিষেক হতে যাচ্ছে পিটার চেকের। তার সামনে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে কসিয়েনলি এবং পার মার্টেসেকার এর রসায়ন চমৎকার। গত দুই মৌসুমের সবচেয়ে ভাল সেন্ট্রাল ডিফেন্স জুটিগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাদের সাথে রাইটব্যাক পজিশনে বেলেরিন এবং ম্যাথিউ ডেবুশির মধ্যে এপ্রিলে সর্বশেষ দেখায় এডেন হ্যাজার্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা বেলেরিনকেই দেখা যাবার সম্ভাবনা বেশি। লেফটব্যাকে গত মৌসুমে দুর্দান্ত খেলা মনরেয়াল নামবেন প্রায় নিশ্চিত। সবার নজরে থাকবে, চেকের বল ডিস্ট্রিবিউশন। আর্সেনালের খেলার ধরণে গোলকিপারের সাথে ডিফেন্ডারদের পাসিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর এখানে মাত্রই দলে আসা চেক কেমন করেন তাই দেখার বিষয়।
রক্ষণভাগের সামনে ঢাল হয়ে থাকা ফ্রান্সিস কোকুলানের উপস্থিতি এখন দলের জন্য অপরিহার্য। তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং 'ইন্টারসেপশন' দক্ষতার উপর দলের সার্বিক পারফরম্যান্স অনেকাংশে নির্ভর করবে। মধ্যভাগে গত লিগ মৌসুমে ৭ গোল এবং ১১ অ্যাসিস্ট করা সান্তি কাযোরলাকে প্লে-মেকার রোলে আর ওয়েলশ 'উইজার্ড' অ্যারন রামজেকে মধ্যভাগের ডানদিকে দেখা যেতে পারে। লেফট উইংয়ে সানচেজ এর অনুপস্থিতিতে অক্সলেড চেম্বারলিনকে দেখার সম্ভাবনাই বেশি। দলের নাম্বার টেন রোলে থাকবেন মেসুত ওযিল, আর্সেনালের সৃষ্টিশীল ফুটবলের কেন্দ্রবিন্দু।
আক্রমানভাগে প্রধান স্ট্রাইকার ভূমিকায় গত মৌসুমে ১৯ গোল করা অলিভিয়ের জিরু থাকতে পারেন। তবে থিও ওয়ালকটের চেলসির সাথে একাধিকবার পারফর্ম করার ভালো রেকর্ড আর শেষ ৭ পেশাদার ম্যাচে প্রথম একাদশে থেকে ৭ গোল আর্সেনকে ভাবনার অবকাশ দিবে। ওয়ালকটকে উইঙ্গার হিসেবে ব্যাবহার করলে দুইজনকেই দেখা যেতে পারে। তখন চেম্বারলিনকে বেঞ্চে বসতে হতে পারে। জ্যাক উইলশেয়ারকে প্রথম একাদশে দেখার সম্ভাবনা কম, তবে বদলি হিসেবে দেখা যেতে পারে।
কমিনিউটি শিল্ডের খেরোখাতা:
* এবারের ম্যাচটি ৯৩ তম শিল্ড ম্যাচ। প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে।
* কমিনিউটি শিল্ড ম্যাচের টিকেট এবং অন্যান্য জায়গা থেকে প্রাপ্ত অর্থ এফএ কাপে খেলা ১২৪ দলের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া হয়।
* প্রতি মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগ এবং এফএ কাপের চ্যাম্পিয়ন দুই দল অংশ নেয়। দুই প্রতিযোগিতার বিজয়ী দল একই হলে, লিগের ২য় স্থান অধিকার করা দল সুযোগ পায় খেলার।
* সবচেয়ে বেশিবার কমিনিউটি শিল্ড জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড – ২০ বার।
* কমিনিউটি শিল্ড জেতা দলের পরের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জেতার হার শতকরা ৫০%।
* কমিনিউটি শিল্ড হারা দলের চেয়ে জেতা দল পরের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ভাল অবস্থানে শেষ করার হার শতকরা ৭০%।
* গত ১৫ বছরে কমিনিউটি শিল্ড জেতা দলগুলো মাত্র ৫ বার পরের মৌসুমে লিগ জিতেছে।