উরুগুইয়ান কান্নায় ফরাসী 'সেমিফাইনাল' উৎসব
হোসে মারিয়া হিমেনেজ কাঁদছেন, ফ্রিকিকে তাদের তৈরি দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে। নব্বই মিনিটের তখনও দুই মিনিট বাকি, বিশ্বকাপে টিকে থাকতে উরুগুয়েকে তখনও শোধ করতে হবে দুই গোল। মিরাকল প্রয়োজন, যেটা প্রতিদিন আসে না। গ্যালারিতে “শেষ মুহুর্তেও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাওয়ার” নীতিতে বিশ্বাসী উরুগুইয়ান সমর্থকরা তখনও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু ততক্ষণে যেন সব শেষ হয়ে গেছে মাঠের উরুগুয়ের! গ্যালারিতে তাদের উৎসাহ তাই চাপা পড়ে যাচ্ছে ফরাসী উৎসবে। উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারিয়ে ২০০৬ সালের পর আবার সেমিফাইনালে ফ্রান্স।
ফ্রান্সের দুই গোলের দ্বিতীয়টি এসেছে উরুগুইয়ান গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরার চরম এক ভুলের ওপর ভর করে। যে গোলের পর আঁতোয়া গ্রিযমান উদযাপনও করলেন না। এমন গোলে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন? বন্ধুর দলের বিপক্ষে এমন গোলের পর উদযাপনে সাঁয় দেয়নি মন? নাকি স্রেফ অভিজ্ঞ এক ফুটবলারের এমন পরিণতির বিপরীতে উল্লাস করতে বাধা দিয়েছিল তার ফুটবল-সত্ত্বা? নাকি নিজেকে ‘আধা-উরুগুইয়ান’ পরিচয় দেওয়া গ্রিযমান উদযাপনের কথা ভাবতেও পারেননি ওই সময়ে? এসব প্রশ্নের জবাব শুধু গ্রিযমানই দিতে পারবেন। আর মুসলেরার ওই ‘বিভৎস’ ভুলের পেছনের কারণটাও শুধু ব্যাখ্যা করতে পারবেন তিনি নিজেই। তিনটি বিশ্বকাপ, উরুগুয়ের হয়ে ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার গোলরক্ষকের ভুলের ওপরই আদতে গড়া হয়ে গেছে উরুগুয়ের বিশ্বকাপ সমাধি।
সেই ভুলের আগেই উরুগুয়ে সমতায় এসেই গিয়েছিল প্রায়। সেটা হতে দেয়নি এই বিশ্বকাপেরই অন্যতম সেরা এক সেভ। উরুগুয়ের ডানদিক থেকে নেওয়া ফ্রি-কিক এসে পড়েছিল কাসেরেসের কাছে। হেডটা নিচে নামাতে পারলেন, তবে ভেদ করতে পারলেন না হুগো লরিসের হাতজোড়া। তার গ্লাভসে লেগে ফিরতি বলটা এসে পড়েছিল গডিনের কাছে, তবে ভড়কে গিয়েই কিনা, গডিন সেটা মেরেছেন ওপর দিয়ে। প্রথমার্ধের শেষদিকেই সব রোমাঞ্চ গিয়ে ভর করেছিল প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে।
এর আগে প্রায় একইভাবেই ফ্রান্সকে ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছিলেন রাফায়েল ভারান। উরুগুয়ের মতো ওই কাছাকাছি জায়গা থেকেই ফ্রিকিক নিয়েছিলেন গ্রিযমান, রাফায়েল ভারানের হেড সুযোগই দেয়নি তখন মুসলেরাকে। অবশ্য এর আগেই এগিয়ে যেতে পারতো ফ্রান্স, তাদের স্বর্ণ-বালক কিলিয়ান এমবাপ্পে মিস করেছিলেন দারুন একটা সুযোগ। অলিভিয়ার জিরুর হেড গিয়েছিল এমবাপ্পের কাছে, তার মার্কিংয়েও তখন ছিলেন না কেউ। আশেপাশে বিস্তর জায়গা, চাইলেই এমবাপ্পে বলটা নিচে নামিয়ে ভলি করতে পারতেন। হেড করতে গেলেন, যেটা গেল বাইরে দিয়েই।
গ্রিযমান ম্যাচে যতোটা ‘কুল’ ছিলেন, ততোটাই যেন অস্থির ছিলেন এমবাপ্পে। ফাউলের শিকার হওয়ার ভনিতা করে হলুদ কার্ডও দেখেছেন পরে, রদ্রিগেজের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কাইও হয়েছিল তার। এরপর তাতে অংশ নিয়েছেন পগবারাও। রেফারি দেখিয়েছেন দুইটি হলুদ ।
সেটা বাদ দিলে উরুগুয়ে চেষ্টা করে গেছে অনেক। এডিনসন কাভানিকে ছাড়াই নামতে হয়েছিল উরুগুয়েকে, প্রতিটি আক্রমণেই যেন তার অভাবটা বোধ করেছে উরুগুয়ে। বক্সের দুই প্রান্ত পর্যন্ত যাওয়ার পর খেই হারিয়েছে তারা, রক্ষণ ভেদ করা পাসগুলোও খুঁজে পায়নি গোল বানাতে পারেন এমন কাউকে। এমনকি বক্সের ভেতর একটা বলেও পা লাগাতে পারেননি সুয়ারেজ। সুয়ারেজ বা কাভানির যে কোনও একজন না খেললে ৪টি বিশ্বকাপের একটিও জেতেনি উরুগুয়ে। ৫ম ম্যাচটা কাভানি বেঞ্চে বসেই দেখলেন।
সেই কাভানি ম্যাচশেষে ব্যস্ত হয়ে পড়োলেন সুয়ারেজদের সান্ত্বনা দিতে। উরুগুয়ের এখন সবচেয়ে বেশি বোধহয় সেই সান্ত্বনাটাই প্রয়োজন। চাইলে গ্রিযমানও এগিয়ে আসতে পারেন। ফ্রান্সকে সেমিফাইনালে এগিয়ে নিয়েছেন গ্রিযমান, উরুগুয়ের জন্যও নাহয় তিনি আসলেন!
ফ্রান্স একাদশ
লরিস, পাভার্দ, ভারান, উমতিতি, হার্নান্দেজ, কান্তে, তোলিসো, পগবা, গ্রিযমান, জিরু, এমবাপ্পে
উরুগুয়ে একাদশ
মুসলেরা, ক্যাসারেস, গডিন, হিমেনেজ, লাক্সাত, নান্দেজ, তোরেয়েরা, ভেসিনো, বেন্টাকুর, স্টুয়ানি, সুয়ারেজ