কার হাতে গোল্ডেন বল?
গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে হ্যারি কেইন বেশ খানিকটা এগিয়েই আছেন এখন। কিন্তু বিশ্বকাপের গোল্ডেন বলটা এবার কে পাবেন? কোয়ার্টার ফাইনাল শেষেও কাউকে খুব বেশি এগিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই। বেলজিয়ামের এডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুইন, ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ, ফ্রান্সের আঁতোইন গ্রিজমান, কিলিয়ান এমবাপ্পে, ইংল্যান্ডের কেইনকে আপাতত এগিয়ে রাখতে হচ্ছে।
গোল্ডেন বল নির্বাচনের ধরনটাই এমন, পরিসংখ্যান দিয়ে সেটা আগে থেকে অনুমান করার উপায় নেই। ফিফার টেকনিক্যাল কমিটি একটা শর্টলিস্ট করে দেয়, টুর্নামেন্ট কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের ভোটেই সেখান থেকে নির্বাচিত হয় সেরা খেলোয়াড়। সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায় ফাইনালের আগেই। তার মানে চ্যাম্পিয়ন ছাড়া অন্য কোনো দল থেকে গোল্ডেন বল কেউ পেতেই পারেন। সেটাই অবশ্য হয়ে গেছে অলিখিত রীতি, গত পাঁচ বিশ্বকাপে যারা সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন তারা কেউই জেতেননি বিশ্বকাপ। এক অর্থে এটা সান্ত্বনা পুরস্কারই।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে রোনালদো, ২০০২ তে অলিভার কান, ২০০৬ বিশ্বকাপে জিনেদিন জিদান, ২০১০ এ ডিয়েগো ফোরলান বা সর্বশেষ লিওনেল মেসি-শিরোপা জেতেননি কেউই। এর মধ্যে ফোরলানের উরুগুয়ে ফাইনালেই উঠতে পারেনি। তার মানে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও কেউ পুরস্কারটা পেতেই পারেন।
তা এবার দৌড়ে আসলে কে আছেন? সেটা হয়তো ঠিক হয়ে যেতে পারে ফ্রান্স-বেলজিয়ামের পরের ম্যাচেই। বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মের সব আশা এবার যাঁদের ওপর, সেই হ্যাজার্ড বা ডি ব্রুইন পেয়েও যেতে পারেন। হ্যাজার্ড টুর্নামেন্টের শুরুটাই করেছিলেন দারুণ, প্রথম তিন ম্যাচে দুইটি গোল করেছেন, দুইটি করিয়েছেন। গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচে খেলেননি, জাপানের সঙ্গে ওই স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচেই ফিরেছেন স্বরূপে। ব্রাজিলের সঙ্গে ম্যাচে গোল বা অ্যাসিস্ট না পেলেও খেলেছেন দারুণ। রক্ষণে যেমন সাহায্য করেছেন, তেমনি বলও নিজের কাছছাড়া করেননি। ১০টির বেশি ড্রিবল করেছেন, ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর এক ম্যাচে যা সবচেয়ে বেশি। সেমিতে আরেকটি ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্স হলে সোনার বল যেতেই পারে তাঁর হাতে।
কেভিন ডি ব্রুইন অবশ্য শুরু থেকে অতটা সপ্রতিভ ছিলেন না। তবে নিজেকে চেনাতে শুরু করেছেন জাপানের সঙ্গে এসে। শেষ মুহূর্তে তাঁর পা থেকে দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণের, যেটি থেকে গোল করেছেন শাদলি। তবে একটু নিচে খেলছিলেন বলে আক্রমণে কোনো অতৃপ্তি থেকেও যদি থাকে, সেটা ভুলেছেন ব্রাজিলের সঙ্গে। ফলস নাইনে খেলে দুর্দান্ত একটা গোল করেছেন, সুযোগও সৃষ্টি করেছেন তিনটি।
রোমেলু লুকাকুর দাবিটাও ফেলে দেওয়া যায় না। চার গোল করেছিলেন গ্রুপ পর্বেই, কিন্ত নকআউটে আর গোল পাননি। সেটা না পেলেও নিজেকে চিনিয়েছেন নতুন করে। জাপানের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের ডামিটা অ্যাসিস্টের চেয়ে কম কিছু নয়, আর ব্রাজিলের সঙ্গে ডান প্রান্তে খেলেছেন দুর্দান্ত। ডি ব্রুইনের গোলটা তাঁর একটা অসাধারণ মুভ থেকেই এসেছে।
ফ্রান্সের কাউকে এগিয়ে রাখতে হলে সেটা গ্রিজমানই। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়েছিলেন, তবে নিজেকে চেনাতে শুরু করেছেন নকআউট পর্বে। আর্জেন্টিনার সঙ্গে গোল করেছেন, করিয়েছেন। উরুগুয়ের সঙ্গে ম্যাচেও তাই। আছেন তরুণ কিলিয়ান এমবাপ্পে। আর্জেন্টিনাকে বলতে গেলে একাই শেষ করে দিয়েছেন, সেমিতে অমন কিছু করলে তাঁর হাতেও উঠে যেতে পারে।
এনগোলো কান্তের খেলা অবশ্য গোল বা অ্যাসিস্ট দিয়ে মাপা যাবে না। বা কোনো পরিসংখ্যান দিয়েও নয়। তবে ফ্রান্সের আক্রমণ-রক্ষণের সেতু হয়ে কাজ করেছেন অনেকটা বাতাসের মতো। যার উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না, আবার যাকে ছাড়া চলেও না। পল পগবাও প্রতি ম্যাচেই দারুণ উন্নতি করেছেন, তবে বলের লড়াইয়ে পিছিয়েই থাকবেন হয়তো।
আরেক জনের নামটা সবার আগের দিকেই আসবে। ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনালে ওঠার অন্যতম নায়ক লুকা মদ্রিচ অনেক দিন ধরেই নিজের সময়ের সেরা মিডফিল্ডারদের একজন। তবে এবারের বিশ্বকাপে জাতীয় দলের হয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। তিনটি ম্যাচসেরার পুরস্কার করেছেন, দুইটি গোল করেছেন ও একটি করিয়েছেন। তবে খেলা না থাকলে ঠিক বোঝানো যাবে না, এই ক্রোয়েশিয়া কতটা মদ্রিচময়।
ইংল্যান্ডের কেইনকেও ফেলে দেওয়ার উপায় নেই। গোল্ডেন বুট পেলেই যে বল পাবেন না, এমনও নয়। এর আগে গারিঞ্চা, কেম্পেস, রসি, শিলাচিরা দুইটি পুরস্কারই একসঙ্গে জিতেছেন, সেমিতে অমন কিছু করলে কেইনও তা পেয়ে যেতে পারেন।
কে জানে, হয়তো এঁদের বাইরেও পেয়ে যেতে পারেন কেউ। শেষ পর্যন্ত কে জিতবেন, তা জানা যাবে ফাইনালের আগেই।