• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    'ফ্রম রাশিয়া উইথ গ্লাভ'

    'ফ্রম রাশিয়া উইথ গ্লাভ'    

    গোলরক্ষকদের কাজ একটা সময় ছিল অনেকটা পত্রিকার সহ সম্পাদকের মতো। যতক্ষণ ঠিকঠাক কাজ করছেন কেউ খেয়াল করবে না, কিন্তু একটু ভুল করেই সর্বনাশ। আধুনিক যুগে অবশ্য গোলরক্ষকেরাও কৃতিত্ব পাচ্ছেন, তবে এবারের বিশ্বকাপে যেন মঞ্চটা তাদের জন্যই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেমিফাইনালের আগে চার গোলরক্ষক এবার এমন কিছু করেছেন, আড়ালে থেকেও তারা এবার পাদপ্রদীপে।

    মজার ব্যাপার, এর মধ্যে যে দুজনের ওপর আলো বেশি থাকার কথা ছিল, তাদের চেয়ে বাকি দুজনকে নিয়েই যেন বেশি মাতামাতি। উগো লরিস ও থিবো কোর্তোয়া অনেকদিন ধরেই ইংলিশ লিগে নির্ভরতার নাম, বড় মঞ্চেও প্রমাণ করেছেন নিজেদের। তবে জর্ডান পিকফোর্ড আর ড্যানিয়েল সুবাসিচই যেন বেশি সুবাস ছড়াচ্ছেন। টাইব্রেকারে যখন এই দুজন নায়ক, তাদের নিয়ে আলোড়নটাও বেশি তো হবেই।

    অথচ পিকফোর্ড এই বিশ্বকাপে নাও থাকতে পারতেন। ইংল্যান্ড যখন এই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলা শুরু করেছিল, পিকফোর্ডের জাতীয় দলে তখন অভিষেকই হয়নি। নিজেকে চেনাতে শুরু করেছেন গত মৌসুম থেকে, সেবার সান্ডারল্যান্ড থেকে নাম লিখিয়েছিলেন এভারটনে। আধুনিক গোলরক্ষকদের তুলনায় তাঁকে একটু খাটোই বলতে হবে, ৬ ফুট ১ ইঞ্চি আজকাল গোলরক্ষকদের জন্য একটু কমই। কিন্তু উচ্চতার সামান্য ঘাটতি পুষিয়ে দিচ্ছেন অদম্য মনোবল আর দুর্দান্ত রিফ্লেক্স দিয়ে। এই বিশ্বকাপেও যে প্রথম একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটা বোধ হয় কয়েক মাস আগেও ভাবেননি। কিন্তু সেই পিকফোর্ডই ইংল্যান্ডের নায়ক।

    ইংলিশ গোলরক্ষকদের বিশ্বকাপে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলাটা নতুন কিছু নয়।  ২০০২ সালে ডেভিড সিম্যানের সেই ভুল থেকে শুরু, এরপর কারও বিশ্বকাপ ভালো যায়নি। রবার্ট গ্রিন তো ২০১০ সালে একটা স্কুলবালকের মতো ভুলই করেছিলেন। কিন্তু পিকফোর্ড ভুল করা দূরে থাক, জন্ম দিয়েছেন ইতিহাসের। দ্বিতীয় রাউন্ডে কলম্বিয়ার সঙ্গে টাইব্রেকারে জিতিয়েছেন, বিশ্বকাপে এই প্রথম কোনো পেনাল্টি শুটআউটে জিতেছে ইংল্যান্ড। সুইডেনের সঙ্গে অন্তত তিনবার নিশ্চিত গোল থেকে বাঁচিয়েছেন দলকে।

    ক্রোয়েশিয়ার বলেই হয়তো সুবাসিচকে নিয়ে মাতামতি একটু কম। নইলে যা করেছেন, সেটা বিশ্বকাপেই আগে করতে পারেনি কেউ। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্কের সঙ্গে ম্যাচটা টাইব্রেকারে গেল, দুর্দান্ত স্মাইকেলকে আড়াল করে দিলেন সুবাসিচ। সেই ম্যাচেই তিনটি পেনাল্টি ঠেকিয়েছেন, বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে যা সবচেয়ে বেশি। তবে রাশিয়ার সঙ্গে পরের ম্যাচে যা করলেন, সেটা পরিসংখ্যানে লেখা না থাকলেও ফুটবল পুরাণে লেখা হয়ে গেছে।

     

     

    ম্যাচের শেষের দিকে হঠাৎ চোট পেলেন হ্যামস্ট্রিংয়ে, ক্রোয়েশিয়ার তখন বদলি করার উপায় নেই। ওই অবস্থাতেই খেললেন, একটা সেভও করলেন। অতিরিক্ত সময়েও মাঠ ছাড়লেন না, একটা গোল খেলেও সেটিতে তাঁর কিছু করার ছিল না। খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। সুবাসিচ চোট পেয়েছেন, রাশিয়া নিজের মাঠে নিশ্চয় হারবে না! কিন্তু সুবাসিচ এবারও ঠেকালেন একটি পেনাল্টি, অন্যদিকে সতীর্থেরা গোল করায় আর বেশি কিছু করতে হয়নি। ১৯৯০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার গয়কোচিয়ার সেই অতিমানবীয় পারফরম্যান্সকেই যেন মনে করিয়ে দিলেন।  

    কোর্তোয়াকে অবশ্য বেলজিয়ামের হয়ে পেনাল্টি ঠেকাতে হয়নি। গ্রুপ পর্বে তেমন কিছু করতে হয়নি, দ্বিতীয় রাউন্ডেও জাপানের সঙ্গে ম্যাচে দুই গোল হজম করেছিলেন। তবে সেরাটা রেখে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের জন্য। চীনের প্রাচীর হয়ে দুর্দান্ত কিছু সেভ করেছেন, শেষ সময়ে নেইমারের শটে তাঁর ওই সেভ সম্ভবত টুর্নামেন্টের সেরাগুলোর একটি। কে জানে, সেমিফাইনালেই হয়তো টাইব্রেকার পরীক্ষা দিতে হবে।

    সেই পরীক্ষা দিতে হয়নি লরিসকে। বাকিদের মতো এমন অতিমানবীয় কিছুও করতে হয়নি। তবে উরুগুয়ের সঙ্গে ম্যাচেই যে দুর্দান্ত সেভটি করেছেন, সেটাই জানান দিচ্ছে তাঁর ওপর অনায়াসে ভরসা করতে পারে ফ্রান্স। সেটা অবশ্য করেছেও, টটেনহাম গোলরক্ষকের হাতেই দেশম তুলে দিয়েছেন অধিনায়কের বাহুবন্ধনী। এই ফ্রান্স দলে পেছন থেকে নেতার কাজটা তো লরিসই করে যাচ্ছেন।

    সেটা করার ক্ষমতা আছে অন্য তিন জনেরই। কে জানে, সেমিতে এঁরা হয়তো সবাই নিজেদের আবার চেনাবেন!