• রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
  • " />

     

    ডিফেন্ডাররাই যখন ত্রাতা ফ্রান্সের

    ডিফেন্ডাররাই যখন ত্রাতা ফ্রান্সের    

    ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম তিন ডিফেন্ডার একই বিশ্বকাপে গোল করলেন ফ্রান্সের জন্য। যেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স, সেবারও গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছিলেন ডিফেন্ডাররা। রাশিয়ায় ফ্রান্স উঠে গেছে ফাইনালে, সেমিফাইনালে এক ডিফেন্ডারের গোলেই। ১৯৯৮ ফিরে আসবে আবার? 


    ব্লাঁর স্বর্ণ-গোল

    গ্রুপপর্বে নয় গোল করা ফ্রান্সের দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে। লাল কার্ডের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ছিলেন না জিনেদিন জিদান। প্রথমার্ধ গোলশূন্য, দ্বিতীয়ার্ধও তাই। এরপর অতিরিক্ত সময়। তখন গোল্ডেন গোলের নিয়ম, অতিরিক্ত সময়ে যে দল আগে গোল করবে, জিতবে তারাই। ফ্রান্সকে আটকে রেখেছিলেন প্যারাগুয়ের গোলরক্ষক হোসে লুই চিলাভার্ট, টাইব্রেকারেও চিলাভার্টই ছিল প্যারাগুয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি, আর ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় হুমকি। ফ্রান্স সেটা চাইছিল না, চাইছিল বরং একটা গোল। সেই গোল্ডেন গোলটা এলো ম্যাচের ১১৩ মিনিটে। ডেভিড ত্রেজেগের হেডটা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে পেয়ে গেলেন লরাঁ ব্লাঁ, ডানপায়ে করলেন দুর্দান্ত ফিনিশ। ব্লাঁ, জার্সি নাম্বার ৫, পজিশনে সেন্টার ব্যাক। ৯৭ ম্যাচে ১৭ টি গোল আছে তার, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটা বোধহয় করেছিলেন সেদিনই। সেই গোল্ডেন গোল! 

    জিরো থেকে হিরো 

    আপনার দায়িত্ব রক্ষণে, আপনার দায়িত্ব টুর্নামেন্টের ‘হটকেক’ ডেভর সুকারকে ধরে রাখা। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সেই সুকারকে ভুলে একদম ফাঁকা একটা জায়গায় গিয়ে আপনি দাঁড়িয়ে থাকতে চাইবেন একজন ডিফেন্ডার হয়ে? লিলিয়ান থুরামও চাননি। তবে সুকারকে একা রেখে অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ রাইটব্যাক। ফল- গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর ৪৬ মিনিটেই ক্রোয়েশিয়ার এগিয়ে যাওয়া। সবাই শুধু থুরামকেই দেখছিলেন, আর চোখে পড়ছিল তার এই মস্ত ভুলটা। মিনিটখানেক পরও সবাই থুরামের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন, এবার দেখছিলেন তার উদযাপন! আগের মিনিটের ভুলটা শুধু শোধরালেন না থুরাম, করে ফেললেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম গোলটাই! মঞ্চটাও বেছে নিলেন কেমন- একেবারে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল! ২৪ মিনিট পর থুরাম ঢুকে গেলেন ইতিহাসেই। ডানদিকে বক্সের বাইরে পেয়েছিলেন বল, বাঁ-পায়ে ডানদিকের বটম কর্নার ভেদ করলেন রকেট-শটে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গোল থুরামের, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে দ্বিতীয় গোল থুরামের। সেই দুই গোলের আগে-পরে ফ্রান্সের হয়ে আর গোল করেননি তাদের হয়ে রেকর্ডসংখ্যক ম্যাচ খেলা থুরাম। যে দুইটি করেছেন, সেই দুইটিই তো যথেষ্টর চেয়েও বেশি কিছু তাকে মনে রাখার জন্য! 

    পাভার্দের পায়ে গোলের স্বাদ 
     
    গ্রিযমানের পেনাল্টি বিস্মৃত, আনহেল ডি মারিয়ার স্বপ্নের গোলটাও ভুলিয়ে ম্যাচে মারকাদোর গোলে এগিয়ে গেছে আর্জেন্টিনা। শেষ ১৬-র লড়াইয়ে তখন ব্যাকফুটে ফ্রান্সই। ত্রাতা হয়ে এলেন বেঞ্জামিন পাভার্দ। বাঁদিক থেকে যাওয়া ক্রসটা কাউকে খুঁজে না পেয়ে গিয়ে ঠেকল ফ্রান্স রাইট-ব্যাকের কাছেই। ডান পায়ের বুটের বাইরের দিক দিয়ে মারলেন গোল বরাবর, চেয়ে চেয়ে দেখলেন সবাই! আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম গোলটা আর কোন মুহুর্তেই বা চাইতে পারতেন পাভার্দ! ফ্রান্স সমতায় এলো, এরপর তো এমবাপ্পের জোড়া গোলে বিদায়ই করে দিল ২০১৪ বিশ্বকাপের রানার্স-আপদের। 

     

     

    ভারানে ভর ফ্রান্সের 

     

     

    এক, দুই, তিন। তিনজন উরুগুইয়ান ডিফেন্ডার যেন টেরই পেলেন না, রাফায়েল ভারান পেছন থেকে ছুটে এসেছেন কখন। নিজেও ডিফেন্ডার বলেই কিনা একেবারে ফাঁকি দিলেন তিনজনকে! আঁতোয়া গ্রিযমানের ফ্রি-কিকটা মাপাই ছিল, সেই মাপটা সবচেয়ে ঠিকঠাক বুঝলেন ভারান। কোয়ার্টার ফাইনালে এডিনসন কাভানিকে ছাড়াই নামতে হয়েছিল উরুগুয়েকে, তবুও ব্রেকথ্রুটা পাচ্ছিল না ফ্রান্স। শুধু গোল কেন, ওই ৪০ মিনিটের আগে তো অন-টার্গেটে একটাও শট ছিল না তাদের! ভারান প্রথম শট করলেন, প্রথম গোলও করলেন তিনিই! উরুগুয়ের গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরার ভুলে এরপর আরেকটা গোল পেলেন গ্রিযমান, তবে ম্যাচের গতিপথ তো ঠিক করে দিয়েছিল ভারানের ওই গোলই। সঙ্গে ফ্রান্স খুঁজে পেয়েছিল সেমিফাইনালের পথটাও।  

    উমতিতির গোল-কীর্তি 

    আরেকটা সেমিফাইনাল। আরেকটা টুর্নামেন্ট-সেরা দল প্রতিপক্ষ। ত্রাতা আরেকজন ডিফেন্ডার। ১৯৯৮ এর স্ট্যাডে ফেলিক্স-বোলার্ট যেন ফ্রান্সের জন্য ফিরে এলো সেন্ট পিটার্সবার্গে। ফ্রান্স-বেলজিয়াম, দুইদল আর ফাইনালের মাঝে পার্থক্য হয়ে দাঁড়ালেন তো আক্ষরিক অর্থেই স্যামুয়েল উমতিতি। থুরামের মতো অবশ্য এটি প্রথম গোল নয় তার, তৃতীয়। তবে ফরাসী ইতিহাসে ঢুকে গেলেন তাতেই। আর ঢুকে গেল তার সেই হেডটা!