অ্যান্টিগায় বিপর্যয়, জ্যামাইকায় কী?
কবে, কখন
স্যাবাইনা পার্ক, কিংস্টন, জ্যামাইকা
১২-১৬ জুলাই, ২০১৮
বাংলাদেশ সময় ২১০০
বিপর্যয়। বিভীষিকা। যে নামেই ডাকুন না কেন, তা একচোট দেখে ফেলেছে বাংলাদেশ। অ্যান্টিগা টেস্টের সেই স্মৃতি ভুলে জ্যামাইকায় নতুন করে নামতে হবে তাদের- বাকি সব চ্যালেঞ্জের সঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে এটাও।
পাঁচ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমেই ৪৩ রানে অল-আউট প্রথম ইনিংসে, দ্বিতীয় ইনিংসও ছিল তেমন তিমিরেই। এর ওপর আছে নির্বিষ বোলিং, এলোমেলো পেসাররা। নতুন কোচ স্টিভ রোডসেরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, দ্বিতীয় টেস্টের আগে ঠিক কোনদিকে ফোকাস করবেন।
প্রথম ইনিংসে একপ্রান্ত ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন লিটন দাস, তবে যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটাই মিলিয়ে দিয়েছে সব। সে তুলনায় মনে রাখার মতো ইনিংস খেলেছিলেন আরেক উইকেটকিপার নুরুল হাসানই। তার ওয়ানডে স্টাইলে করা ফিফটিটাই অ্যান্টিগার অনেক অপ্রাপ্তির ভীড়ে ছোট একটা টিকমার্ক।
বিরুদ্ধ কন্ডিশনে শেষদিকে এসে নিজেকে মেলে ধরার আভাস দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান, তবে ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। বাকিদের কাছ থেকেও সহায়তা পাননি সেভাবে। জ্যামাইকা টেস্টে যদি অ্যান্টিগার বিভীষিকা ভুলতে চায় বাংলাদেশ, সেই সহায়তা খুব করেই প্রয়োজন সাকিবদের।
বাংলাদেশের সহায়তা প্রয়োজন দলের ব্যাটিং ইউনিটের কাছ থেকেও। তামিম ইকবাল প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে চার হাজার রান পূর্ণ করেছেন, তবে সেটা উদযাপনের সুযোগ পেলেন কই! উলটো যোগ দিলেন ব্যর্থতার শোভাযাত্রায়।
সে শোভাযাত্রাটা পুরো ভিন্নরুপে হাজির ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে। কেমার রোচের স্বপ্নালু স্পেলে শুরু, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলে শেষ। মাঝে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের সেঞ্চুরি। যা একটু ছন্দপতন, তা ওই রোচকে এ টেস্টে না পাওয়াটাই। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যে চোট নিয়ে ফিল্ডিংয়েই নামতে পারেননি এই পেসার, সেটাই তাকে বাধ্য করেছে ‘বিশ্রাম’ নিতে। তার জায়গায় দলে ফিরেছেন আলজেরি জোসেফ।
রোচ ছাড়াও যে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেটা গ্যাব্রিয়েল দ্বিতীয় ইনিংসেই প্রমাণ করেছেন। ব্রাজিল-বেলজিয়ামের ম্যাচের কারণে আগে-ভাগে হয়ে শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস, এমন কথাও বেশ প্রচলিত ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই ফুটবল বিশ্বকাপও শেষ হয়ে যাওয়ার কথা এই টেস্টের সময়ই। তবে তার আগের পূর্বশর্ত হচ্ছে অ্যান্টিগার সেই বিপর্যয়ের পুনর্মঞ্চায়ন করা চলবে না বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের শেষ পর্যন্ত টানতে অন্তত চতুর্থ দিন পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে খেলা।
তার আগে ভুলতে হবে সেই বিভীষিকা। চ্যালেঞ্জটা নিতে পারবে বাংলাদেশ?
রঙ্গমঞ্চ
স্যাবাইনা পার্কে “আরেকটু বেশি ধারাবাহিক বাউন্স ও পেস” আশা করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অ্যান্টিগার মতো এখানেও ঘাস দেখেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার, তবে এই পিচটা আরেকটু পোক্ত হবে বলেই ধারণা তার। কিংস্টনে প্রথম দিন রোদ থাকলেও দ্বিতীয় দিন থেকে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এমনই। হতে পারে বৃষ্টিও।
যাঁদের ওপর চোখ
তামিম ইকবাল
দলের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক তিনি, ওপেনার বলে শুরুটাও নির্ভর করছে তার ওপর। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যাটিং ধস আটকানোর মতো কিছু করতে পারেননি তিনি। পেস-বাউন্সের সঙ্গে গ্যাব্রিয়েলদের সৃষ্টি করা ‘অ্যাঙ্গেল’-এর চ্যালেঞ্জগুলো তামিম দ্বিতীয় টেস্টে সামলাতে পারবেন? বাংলাদেশের অনেককিছু নির্ভর করছে এর ওপরও।
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট
তামিমের পুরো উল্টো চিত্র তার ব্যাটে। এমন উইকেটে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়, সেটাই দেখিয়েছেন উদাহরণ হিসেবে। সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশাটাও বেড়েছে তাকে নিয়ে আরেকটু। সেই প্রত্যাশার ভারটা দ্বিতীয় টেস্টেও বয়ে নিবেন ব্র্যাথওয়েট?
সম্ভাব্য একাদশ
চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন শফিউল ইসলাম, পেসারদের কম্বিনেশন তাই চাইলেও বদলাতে পারবে না বাংলাদেশ। উলটো একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলানো হতে পারে আট নম্বরে, সেক্ষেত্রে জায়গা করে দিতে হতে পারে একজন বোলারকেও।
বাংলাদেশ- তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন, মেহেদি হাসান, রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ চৌধুরি
রোচের জায়গায় দলে এসেছেন জোসেফ, তিন পেসার নিয়েই নামতে চাইলে তাই ৭ম টেস্টটা খেলে ফেলতে পারেন তিনি। কিমো পউলের চেয়ে নামার সম্ভাবনা বেশি তারই। সঙ্গে অপেক্ষা বাড়তে পারে শিমরন হেটমায়েরেরও। ডেভন স্মিথও ফিফটি পেয়েছেন গত টেস্টে, ব্যাটিং কম্বিনেশন তাই না ভাঙানোর সম্ভাবনাই বেশি উইন্ডিজদের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, ডেভন স্মিথ, কাইরন পাওয়েল, শাই হোপ, রসটন চেজ, শেন ডওরিচ, জ্যাসন হোল্ডার, দেবেন্দ্র বিশু, আলজেরি জোসেফ, মিগুয়েল কামিন্স, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল
সংখ্যার খেলা
- স্যাবাইনা পার্কে ৫০ টি টেস্টের মাঝে ড্র হয়েছে ৩৬ টি
- এ ম্যাচ দিয়েই সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা বাংলাদেশী হয়ে যাচ্ছেন মুশফিকুর রহিম (৬২)
- এই ভেন্যুতে একটি টেস্টই খেলেছে বাংলাদেশ, ২০০৪ সালে সেটিতে তারা হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানেই