বোলিংয়ের দারুণ শুরুটা ব্যাটিংয়ে হারিয়ে গেল বাংলাদেশের
কিংস্টন টেস্ট
দ্বিতীয় দিনশেষে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৩৫৪ অল-আউট (ব্র্যাথওয়েট ১১০, হেটমায়ার ৮৬, মিরাজ ৫/৯৩, আবু জায়েদ ৩/৩৮) ও ২য় ইনিংস ১৯/১*
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১৪৯ অল-আউট (তামিম ৪৭, সাকিব ৩২, হোল্ডার ৫/৪৪)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ উইকেট নিয়ে ২২৪ রানে এগিয়ে
দারুণ আর্ম বলে চিরায়ত সাকিব, চূড়ান্ত ফর্মে থাকা ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট নাগালই পেলেন না, ভাঙলো শুধু তার স্টাম্প। বোলিং করতে এসে প্রথম বলেই সাফল্য সাকিবের, দিনের শেষ ওভারটা উইকেট-মেডেন বাংলাদেশের। দিনের প্রথম সেশনে ৫৯ রানে আগের দিনের বাকি থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয় উইকেট নিয়ে শুরুটাও দুর্দান্ত ছিল, তবুও বাংলাদেশ হাসতে পারছে না, ব্যাটিং ব্যর্থতা যে অদ্ভুত এক ছায়াসঙ্গী হয়ে পিছুই ছাড়ছে না! প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রানে অল-আউট হয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ উইন্ডিজদের কাছে চলে গেছে, সাকিবের এমন একটা উইকেট মেডেনও তাই স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না দ্বিতীয় দিনশেষে।
বারকয়েক সুযোগ পেয়েও ফিফটি করা হয়নি তামিমের। ২০, ৭৯, ১১৭ রানে জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ আরেকবার প্রমাণ করেছে, একটা উইকেট ডেকে আনে আরেকটাকে। প্রথমে গ্যাব্রিয়েলের এলবিডব্লিউর ফাঁদে লিটন, এক বল পরে শরীর থেকে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ মুমিনুলের।
সাকিব শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক, তামিমের সঙ্গে জুটিতে দুজন মিলে মেরেছেন নয়টি চার। তবে খুব রক্ষণাত্মক হননি তবুও হোল্ডার, লাইন-লেংথ ধরে রাখতে পেরেছেন দারুণভাবেই। যখনই মনে হচ্ছিল, সাকিব দারুণভাবে সেট, ভেতরের দিকে ঢোকা সিম ডেলিভারিতে ইনসাইড-এজের পর বোল্ড সাকিব। এক বল পর মাহমুদউল্লাহ সামনে-পেছনে খেলার দ্বিধায় ভুগে আটকে ছিলেন একটা জায়গায়, হোল্ডারের ডেলিভারি তাকে পেয়ে গেছে একদম নিরস্ত্র অবস্থায়।
কিমো পলের পেসে বোল্ড তামিম। পরের বলেই এলবিডব্লিউ নুরুল, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় লাইনও ছেড়ে এসেছিলেন, নাগাল পাননি বলের। এই ব্যাটিং দুর্দশার দিনে রিভিউ ব্যবহারে চরম অনীহা দেখিয়েছেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা, লিটন ও নুরুল- দুজনই রিভিউ নিলে বেঁচে যেতে পারতেন।
মুশফিকের ধৈর্য্য ভেঙেছে হোল্ডারের লাফিয়ে ওঠা বলে, কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েছেন। ‘জোড়া জোড়া’র নিয়ম মেনে পরের বলেই বোল্ড হয়েছিলেন তাইজুল, বেঁচে গেছেন নো-বল হওয়ায়। অবশ্য শেষে গিয়ে ওই হোল্ডারের বলেই বোল্ড হয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্দশার মতো এই নো-বলও পিছু ছাড়ছে না ওয়েস্ট ইন্ডিজের, এ নিয়ে ৩৭ ইনিংসে ২১২টি নো বল করলেন তারা।
আবু জায়েদকেও বোল্ড করে ইনিংসে পাঁচ পূর্ণ করেছেন হোল্ডার, ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো। ২০৫ রানের ট্রেইলে ছিল বাংলাদেশ, তবে কিংস্টনের গরমে বোলারদের আবার খাটাতে চাননি হোল্ডার, ফলো-অনটাও তাই করাননি বাংলাদেশকে।
অথচ শুরুর সেশনটা থেকে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা অনুপ্রেরণা নিলে এমন কিছুই হতো না। সেই সেশনটা সিরিজে বাংলাদেশের সেরা এখন পর্যন্ত।
শুরু থেকেই গুড লেংথে হিট করে যাচ্ছিলেন আবু জায়েদ। ‘সেট-আপ’ করেই আউট করেছেন হেটমায়ারকে, সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরেই থামতে হয়েছে তাকে। করিডোরে থাকা বলের বাউন্স ও লেট-সুইংয়ে ধোঁকা খেয়েছেন হেটমায়ার, আউটসাইড-এজে পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। রসটন চেজ ভেতরের দিকে ঢোকা বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি। তাইজুলের ফ্লাইট লোভ দেখিয়েছিল ডওরিচকে, ফ্লিকের চেষ্টায় লিডিং-এজে শর্ট এক্সট্রা কাভারে মিরাজের দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ বনেছেন।
মিরাজকে ফরোয়ার্ড-ডিফেন্সে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাড কিমো পল, রিভিউও নিয়েছিলেন, তবে তার গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল বল। সেই রিভিউটাই বাঁচতে দেয়নি মিগুয়েল কামিন্সকে। পরের বলেই মিরাজ প্লাম্ব করেছেন মিগুয়েল কামিন্সকে, অন্তত প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল তেমনই। আম্পায়ার এস রভিও দ্বিধা করেননি আউট দিতে, তবে হক-আই দেখিয়ে, বলটা মিস করে যেত স্টাম্প। এ উইকেট দিয়েই পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয়েছে মিরাজের, দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনেও। বিদেশের মাটিতে শেষ পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন এক স্পিনারই, তাইজুল, শেষ ক্যারিবীয় সফরে সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে।
একপ্রান্তে জ্যাসন হোল্ডার ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক, তার ২ টি করে চার ও ছয়ে ৪২ বলে ৩৩ রানের ইনিংস টেনেছে উইন্ডিজকে। শেষটা করেছেন আবু জায়েদই, তার অফস্টাম্পের একটু বাইরের বলে পা নড়িয়েই ব্যাট চালিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।
তবে ব্যাটিংয়েই আসলে ভেস্তে গেছে সব। মিলিয়ে গেছে আবু জায়েদের দুর্দান্ত শুরু, সাকিবের দারুণ শেষ।